বসুন্ধরা-সুষমা ইস্তফা দেবেন না, সেই ইঙ্গিত স্পষ্ট করে দিয়ে এ বার ললিত মোদীর বিরুদ্ধে আঁটঘাট বেঁধে মাঠে নামল নরেন্দ্র মোদী সরকার। সোমবার এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট ললিত মোদীকে সমন পাঠিয়েছে। পাঁচ বছর আগে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট এন শ্রীনিবাসন ললিতের বিরুদ্ধে ৪৭০ কোটি টাকার আর্থিক নয়ছয়ের মামলা করেছিলেন। সেই মামলাতেই ললিত মোদীকে ১৫ দিনের মধ্যে ইডি-র সামনে হাজির হয়ে তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
ইউপিএ-সরকারের আমলেও ইডি-র তরফে ললিত মোদীকে বারবার ভারতে ডেকে পাঠানো হয়েছিল। আগের সরকার যা পারেনি, নরেন্দ্র মোদী সরকার এ বার সেটাই করে দেখাতে চাইছে বলে মনে করছে রাজনৈতিক শিবির। সেই কারণেই এ বার আঁটঘাট বেঁধে ইডি মাঠে নেমেছে। সমন পাঠানোর আগে ললিত মোদীর বিরুদ্ধে বেআইনি আর্থিক লেনদেনের অভিযোগের তদন্তে সিঙ্গাপুর, মরিশাস এবং ব্রিটেনের সাহায্য চেয়েছিল ইডি। ললিত মোদী ও তার সংস্থার সঙ্গে বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থার আর্থিক লেনদেনের বিষয়ে তথ্য চাওয়া হয়। এর পর শ্রীনির বক্তব্যও নথিবদ্ধ করা হয়। শ্রীনি জানান, আইপিএল-এর প্রধান থাকাকালীন জালিয়াতি করে ৪৭০ কোটি টাকা নিজের পকেটে পুরেছেন ললিত।
এর আগে বিদেশি মুদ্রা আইন (ফেমা) লঙ্ঘনের অভিযোগের ১৫টি মামলায় ললিতকে সমন পাঠিয়েছিল ইডি। ইডি-র চিঠির জবাব দিলেও কোনও বারই ভারতে এসে তদন্তকারীদের মুখোমুখি হননি ললিত। ইডি সূত্রের বক্তব্য, ফেমা-য় ললিতের বিরুদ্ধে যে সব অভিযোগ রয়েছে, সেগুলিতে অপরাধী সাব্যস্ত হলেও ললিত জরিমানা দিয়েই ছাড়া পেয়ে যাবেন। তাঁর জেল হবে না। কারণ সেগুলি ফৌজদারি অপরাধ নয়। তাই ওই আইনে কাউকে বিদেশ থেকে ফেরত আনা বা প্রত্যর্পণও মুশকিল। কিন্তু, আর্থিক নয়ছয় আইন (পিএমএলএ)-এ ললিতের বিরুদ্ধে অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র, বিশ্বাসভঙ্গ, জালিয়াতি ও প্রতারণার অভিযোগ আনা হয়েছে। এই আইনে মোদীকে দেশে নিয়ে এসে বা বিদেশে গিয়ে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য ব্রিটেন বা অন্য দেশগুলির উপর কূটনৈতিক চাপ তৈরি করা যেতে পারে। সেই কারণেই পাঁচ বছর আগে চেন্নাইতে শ্রীনির দায়ের করা এই অভিযোগ নিয়ে এ বার ইডি এগোতে চাইছে।
বসুন্ধরা রাজের পুত্র দুষ্মন্ত সিংহের সঙ্গে ললিতের আর্থিক লেনদেন নিয়ে অভিযোগ ওঠায় তাঁকে ব্যবসায়িক লেনদেন বলে আখ্যা দিয়েছিলেন অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি। ওই মন্তব্য নিয়ে প্রশ্ন ওঠে, যেখানে অর্থ মন্ত্রকের অধীন ইডি তদন্ত করছে, সেখানে জেটলি কী ভাবে এই মন্তব্য করছেন। জেটলি পরে সাফাই দেন, ইডি-র তদন্ত নিজের পথেই এগোচ্ছে। তা যে সত্যিই এগোচ্ছে, এ দিন ইডি-র পদক্ষেপ তারই প্রমাণ বলে অর্থ মন্ত্রক সূত্রের খবর।
ওয়াকিবহাল মহল অবশ্য মনে করছে, এ সব করেও ব্রিটেন থেকে ললিত মোদীকে ফিরিয়ে আনা সহজ হবে না। কারণ ব্রিটিশ রাজনীতিবিদদের মধ্যেও ললিতের যথেষ্ট প্রভাব রয়েছে। ব্রিটিশ প্রশাসনও ললিতের কিছু আর্থিক লেনদেনের তদন্ত করছে। নয়াদিল্লির তরফে বেশি চাপ এলে ললিত ব্রিটিশ সরকারের কাছে রাজনৈতিক আশ্রয় চাইতে পারেন।