শুভেচ্ছা জানিয়েও ঈদ উৎসবে গরহাজির মোদী

অন্য নেতাদের মতো ইফতারের আয়োজন করেননি। আজ দেশবাসীকে ঈদের শুভেচ্ছা জানালেও উৎসবে সামিল না হয়ে নিজের অবস্থানেই অটল রইলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সংখ্যালঘু মন পেতে কংগ্রেসের ধাঁচেই নিয়মিত ইফতারে সামিল হতেন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়ী। কিন্তু দশ বছর বাদে বিজেপি কেন্দ্রে ফের ক্ষমতায় আসার পর মোদী কোনও ইফতার পার্টির আয়োজন করেননি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ৩০ জুলাই ২০১৪ ০২:৪২
Share:

অন্য নেতাদের মতো ইফতারের আয়োজন করেননি। আজ দেশবাসীকে ঈদের শুভেচ্ছা জানালেও উৎসবে সামিল না হয়ে নিজের অবস্থানেই অটল রইলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।

Advertisement

সংখ্যালঘু মন পেতে কংগ্রেসের ধাঁচেই নিয়মিত ইফতারে সামিল হতেন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়ী। কিন্তু দশ বছর বাদে বিজেপি কেন্দ্রে ফের ক্ষমতায় আসার পর মোদী কোনও ইফতার পার্টির আয়োজন করেননি। তাঁর মন বুঝে মন্ত্রিসভার বিজেপি সদস্যরাও সে পথে হাঁটেননি। গুজরাতের নতুন মুখ্যমন্ত্রী আনন্দীবেনও কোনও ইফতারের আয়োজন করেননি। কেন্দ্রে বিজেপির শরিক এলজেপি-র নেতা রামবিলাস পাসোয়ান ইফতারের আয়োজন করলেও দিল্লির বদলে তা হয়েছে পটনায়। বাজপেয়ীর আমল থেকে বিজেপির সংখ্যালঘু নেতা শাহনওয়াজ হোসেন ফি-বছর ইফতার পার্টি দিলেও এ বারে দেননি। তবে নিজের বাসভবনে এ দিন তিনি ঈদ পালন করেছেন। সেখানে অরুণ জেটলি, রাজনাথ সিংহ, বেঙ্কাইয়া নায়ডু, রামবিলাস পাসোয়ানের পাশাপাশি কংগ্রেস নেতা শশী তারুররা থাকলেও ছিলেন না মোদী। দিল্লিতে থাকলেও ওই অনুষ্ঠানে যাননি মোদী-ঘনিষ্ঠ নেতা, বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ-ও।

মোদী অবশ্য আজ সকালে দেশবাসীকে ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। শান্তি, ঐক্য, ভ্রাতৃত্বের বার্তা দিয়েছেন। উপরাষ্ট্রপতি হামিদ আনসারি, সংখ্যালঘু বিষয়ক মন্ত্রী নাজমা হেপতুল্লা ও রাজ্যসভার বিরোধী দলনেতা গুলাম নবি আজাদকে ঈদের শুভেচ্ছাও জানিয়েছেন তিনি। তার পর থেকে দিনভর তিনি নানা সরকারি কাজে ব্যস্ত থেকেছেন। সকালে কৃষি বিজ্ঞানীদের উদ্দেশে বার্তা দিয়েছেন। বিকেলে অরুণ জেটলি, সুষমা স্বরাজদের সঙ্গে সাউথ ব্লকে মার্কিন সেক্রেটারি অব স্টেট জন কেরির ভারত সফর নিয়ে বৈঠক করেছেন।

Advertisement

ঈদের অনুষ্ঠানে মোদীর অনুপস্থিতির কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে মন্ত্রিসভার এক শীর্ষ সদস্য বলেন, “ইফতারের আয়োজন করা কারও সাংবিধানিক বা রাজনৈতিক দায়িত্বের মধ্যে পড়ে না। এটি নিতান্তই ব্যক্তিগত বিষয়। নরেন্দ্র মোদীর মন্ত্র ‘সবকা সাথ, সবকা বিকাশ’। জন কেরিও ভারত সফরে আসার আগে মোদীরই এই মন্ত্রের তারিফ করেছেন।” একই সঙ্গে এই প্রশ্নে কংগ্রেসকে বিঁধে ওই নেতার মন্তব্য, “মোদী ইফতার না দিন, উন্নয়নের মূল স্রোতে সংখ্যালঘুদেরও সমান ভাবে সামিল করাই তাঁর লক্ষ্য।” বিজেপির এই নেতার বক্তব্য, মোদী জমানায় সংখ্যালঘুরাও উন্নয়নের সুফল পেতে শুরু করলে তাঁর বিরুদ্ধে সংখ্যালঘু-বিরোধী মনোভাব তৈরি হওয়া বন্ধ হয়ে যাবে। যদিও কংগ্রেস নেতা শাকিল আহমেদের কথায়, “এর মধ্যে দিয়েই মোদীর মনোভাব বোঝা যায়। রাষ্ট্রপতি যখন ইফতার দিলেন, তখন হঠাৎই প্রধানমন্ত্রী মুম্বই চলে গেলেন। তখনই তাঁর রাজনীতি স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে।”

কংগ্রেস অবশ্য বিষয়টি নিয়ে খুব বেশি সরব হতে পারছে না। কারণ দলের অন্দরেই সংখ্যালঘু নীতি নিয়ে প্রবল টানাপড়েন রয়েছে। প্রবীণ নেতা এ কে অ্যান্টনি অনেক আগেই দলকে জানিয়েছিলেন, কংগ্রেসের ধর্মনিরপেক্ষ নীতি অনেকের কছেই সংখ্যালঘু তোষণ বলে মনে হচ্ছে। তাই মোদী যখন ইফতারের আয়োজন করলেন না, তখন কংগ্রেসের অনেক সংখ্যালঘু নেতাও সনিয়া গাঁধীকে সেই পথে চলতে বলেছিলেন। তাঁদের মত ছিল, ইফতারের আয়োজন না করে মোদী আসলে সঠিক বার্তাই দিতে চেয়েছেন। কিন্তু মোদী যখন রাষ্ট্রপতি ভবনের ইফতারে গেলেন না, তখন কংগ্রেসের কিছু শীর্ষ নেতার পরামর্শে শেষ মুহূর্তে কৌশল বদল করে সনিয়া ইফতারের আয়োজন করেন। তা নিয়ে দলের অন্দরেই অসন্তোষ রয়েছে। কংগ্রেসের অনেকেই মনে করেন, এর ফলে মোদীর ধর্মীয় মেরুকরণের রাজনীতির ফাঁদে ফের পা দিল দল। যদিও মোদী-ঘনিষ্ঠদের বক্তব্য, কংগ্রেস যা-ই বলুক, মোদী তাঁর নিজের অবস্থানেই অনড় থেকেছেন। দীর্ঘমেয়াদে এতে বিজেপিরই লাভ হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন