জিএসটি শুরু করেছিলেন তিনিই, এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন মোদী

দেশ জুড়ে অভিন্ন করের ভাবনাটি প্রথম দানা বাঁধে অটলবিহারী বাজপেয়ীর জমানায়, সেই ২০০০ সালে।

Advertisement

প্রেমাংশু চৌধুরী

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৭ অগস্ট ২০১৮ ০৩:৫৫
Share:

নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে অটলবিহারী বাজপেয়ী।—ফাইল চিত্র।

সংসদের সেন্ট্রাল হলে মধ্যরাতে ডঙ্কা বাজিয়ে নরেন্দ্র মোদী জিএসটি চালু করেছিলেন ঠিকই। কিন্তু দেশ জুড়ে অভিন্ন করের ভাবনাটি প্রথম দানা বাঁধে অটলবিহারী বাজপেয়ীর জমানায়, সেই ২০০০ সালে।

Advertisement

মনমোহন-জমানায় বাজপেয়ীর মস্তিষ্কপ্রসূত সেই জিএসটি-রই ঘোর বিরোধিতা করেছিলেন মোদী। প্রধানমন্ত্রীর গদিতে বসে বাজপেয়ীর শুরু করে যাওয়া, মনমোহন সিংহের এগিয়ে নিয়ে যাওয়া সেই আর্থিক সংস্কারের কাজকেই এখন নরেন্দ্র মোদী এগিয়ে নিয়ে যেতে চাইছেন। জিএসটি-র রূপায়ণই হোক বা হিন্দুস্তান ইউনিলিভার, বালকো-র মতো রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার বেসরকারিকরণ। বর্তমানে মোদীর ঘোর সমালোচক অরুণ শৌরিকে দিয়ে যে কাজ শুরু করিয়ে দিয়ে গিয়েছিলেন বাজপেয়ী।

হাসি মুখে কী করে কঠিন আর্থিক সংস্কার করে দেখাতে হয়, সেটা উনি জানতেন। বলছিলেন বণিকসভা ফিকি-র সভাপতি রাশেষ শাহ। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর প্রয়াণের পর স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে রাশেষের মত, ‘‘বিরোধীদের সঙ্গে নিয়ে চলতে জানতেন তিনি। ফলে অনেক কঠিন সংস্কারের কাজও অতি সহজে হয়ে যেত।’’

Advertisement

বস্তুত, বাজপেয়ী জিএসটি-র ক্ষেত্রে সেটাই করে দেখিয়েছিলেন। মতাদর্শগত ভাবে উল্টো মেরুতে থাকা সিপিএমের নেতা, পশ্চিমবঙ্গের তদানীন্তন অর্থমন্ত্রী অসীম দাশগুপ্তকে অভিন্ন কর ব্যবস্থার প্রাথমিক খসড়া তৈরির দায়িত্ব দেওয়া হয়। ২০০৪-এ জিএসটি-র ভাবনা প্রকাশ্যে আনে কেলকর টাস্ক ফোর্স।

শিল্পপতিরা মনে করিয়ে দিচ্ছেন, বাজপেয়ীর আমলেই রিজার্ভ ব্যাঙ্কের সুদের হার সব থেকে কমে এসেছিল। ফলে শিল্পের জন্য পুঁজির খরচ কমে গিয়েছিল। অর্থনীতিবিবদদের যুক্তি, নেহরুর আমলের মতো বাজপেয়ীর জমানাতেই রেল, সড়ক, বিমান যোগাযোগের মতো পরিকাঠামোয় বিপুল বরাদ্দ করা হয়। একেবারে মার্কিন ধাঁচে দিল্লি, মুম্বই, কলকাতা, চেন্নাইকে জুড়ে দিতে সোনালি চতুর্ভুজ এবং দেশের সমস্ত গ্রামকে জুড়ে দিতে প্রধানমন্ত্রী গ্রামীণ সড়ক যোজনার পরিকল্পনাও বাজপেয়ীরই।

মোবাইল-বিপ্লবেরও শুরু বাজপেয়ীর আমলেই। টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী প্রমোদ মহাজনের কল রেট কমিয়ে দেওয়ার ফলেই মোবাইল পরিষেবা সংস্থাগুলির মধ্যে প্রতিযোগিতা শুরু হয়। সেই মোবাইলের হাত ধরে, এখন জনধন-আধার-মোবাইল নম্বর জুড়ে দেওয়ার কাজ করছে মোদী সরকার।

নীতি আয়োগের প্রাক্তন অধ্যক্ষ অরবিন্দ পানাগাড়িয়ার মতে, অর্থমন্ত্রী যশবন্ত সিন্হাকে নিয়ে বাজপেয়ী আর্থিক নীতির ভোল বদলে দিয়েছিলেন। সেই সংস্কারের সুফলেই বাজপেয়ী সরকারের শেষ বছরে ২০০৩-’০৪-এ বৃদ্ধির হার ৮ শতাংশে পৌঁছেছিল। ২০০০-এ লাল কেল্লা থেকেই তিনি দশ বছরের মধ্যে মাথা পিছু আয় দ্বিগুণ করার লক্ষ্য নেন।

শুনলে মোদীর চাষিদের আয় দ্বিগুণ করে দেওয়ার স্বপ্ন মনে পড়তে বাধ্য। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে কাজ করতে গিয়ে বারেবারেই বাজপেয়ীর ছায়ায় এসে দাঁড়াতে হয়েছে মোদীকে। বাজপেয়ী সরকার প্রথম দিল্লিতে অত্যাধুনিক মেট্রো রেলে অর্থ বরাদ্দ করে। দিল্লি মেট্রোর নতুন লাইন উদ্বোধন করতে গিয়ে মোদী তাই মনে করিয়েছেন— বাজপেয়ীই ছিলেন দিল্লি মেট্রোর প্রথম যাত্রী।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন