সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা প্রকল্পগুলোর প্রসারে এ বার রাখি বাঁধতে চলেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। উদ্দেশ্য একাধারে সামাজিক উন্নয়ন ও ভোট-রাজনীতি।
দু’মাস আগে কলকাতায় গিয়ে প্রধানমন্ত্রী তিনটি সামাজিক নিরাপত্তা প্রকল্প ঘোষণা করেছিলেন। অটল পেনশন যোজনা, প্রধানমন্ত্রী সুরক্ষা বিমা যোজনা ও প্রধানমন্ত্রী জীবন জ্যোতি বিমা যোজনা। সংবাদমাধ্যমে ব্যাপক ভাবে প্রচার চালানো হয়েছিল প্রকল্প তিনটির। কিন্তু যতটা সাফল্য প্রত্যাশা করেছিল মোদী সরকার, ততটা সাড়া এখনও মেলেনি।
তাই সমাজের যে স্তরের মানুষের কাছে টেলিভিশন-সংবাদপত্র পৌঁছয় না, প্রচারের লক্ষ্য তারাই। আগামী মাসে ‘রক্ষাবন্ধন’ উৎসবের মোড়কে এ বার তাদেরকেই ওই প্রকল্পে সামিল করতে চাইছেন মোদী। ‘রিটার্ন
গিফ্ট’ হিসেবে ভরতে চান নিজেদের ভোটের ঝুলি।
এই কর্মসূচির ভার মোদী দিয়েছেন কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রী স্মৃতি ইরানির উপর। যার নাম দেওয়া হয়েছে ‘রক্ষাবন্ধন সামাজিক সুরক্ষা যোজনা’। তবে পরিকল্পনা রূপায়ণে স্মৃতির সঙ্গে আরও তিন কেন্দ্রীয় মন্ত্রীকেও রাখা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী দফতরেরই প্রতিমন্ত্রী জিতেন্দ্র সিংহ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রী হর্ষবর্ধন ও সামাজিক ন্যায় মন্ত্রী থাওরচন্দ্র গহলৌত।
বিজেপি সূত্রে আজ বলা হয়, স্মৃতি ইরানিকে দায়িত্ব দেওয়া হলেও সেটি সরকারের মঞ্চ থেকে করা হচ্ছে না। দলের পক্ষ থেকেও মহিলা মোর্চাকে এতে সামিল করা হয়েছে। লক্ষ্য হল, দেশের প্রায় চার হাজার বিধানসভা কেন্দ্রে ১০-১২ হাজার মহিলাকে একত্রিত করে এই প্রকল্পগুলি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল করা। সেখানে আবেদন করা ভাইয়েরা যেন রাখির সময় বোনেদের এই প্রকল্পে সামিল করিয়ে উপহার দেন। রাখি আগামী মাসের ২৯ তারিখে। কিন্তু বিজেপি ১ অগস্ট থেকেই দেশজুড়ে এই কর্মসূচি শুরু করে দিতে চাইছে।
তবে সরকারি এই প্রকল্পগুলি প্রসারের পিছনে বিজেপির অন্য রাজনৈতিক উদ্দেশ্য রয়েছে। সেটি হল দলের সংগঠনকে আরও শক্তিশালী করা। বিশেষ করে ভোটমুখী বিহারে। বিহারের ক্ষেত্রে শুধু এই তিনটি সামাজিক প্রকল্পই নয়। এর সঙ্গে মোদী সরকারের ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’, ‘ডিজিটাল ইন্ডিয়া’, ‘স্কিল ইন্ডিয়া’ ও ‘মুদ্রা ব্যাঙ্ক’-এর মত কর্মসূচিরও প্রসার করা হবে।
নীতীশ কুমার ইতিমধ্যেই নিজেকে ‘বিকাশ পুরুষ’ হিসেবে মেলে ধরতে শুরু করেছেন। বিজেপির লক্ষ্য, নীতীশের সম্পর্কে মানুষের সেই ধারণা বদলে দিতে। যাতে নরেন্দ্র মোদীকেই আসল ‘বিকাশ পুরুষ’ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা যায়। ইতিমধ্যেই উত্তর বিহারের মুজফ্ফরপুর দিয়ে প্রচার শুরু করেছেন মোদী। অগস্টের ৯ তারিখে গয়া, ১৯ তারিখে সহর্ষে ও অগস্টের শেষে ৩০ তারিখ কিংবা ১ সেপ্টেম্বর ভাগলপুরে পরপর তিনটি সভা করবেন মোদী।
মোদীর এই চারটি জনসভা সম্পূর্ণ হওয়ার পরেই নির্বাচন কমিশন বিহার-ভোটের নির্ঘন্ট ঘোষণা করবে বলে অনুমান। ফলে অগস্টের মধ্যে যাতে বিহারে মোদী হাওয়া তুলে দেওয়া যায়, তা নিয়ে সচেষ্ট বিজেপি নেতৃত্ব। বিহারের তৃণমূল স্তরে গিয়ে এই সব কেন্দ্রীয় সরকারি প্রকল্পে সুবিধা দিয়ে বিজেপি বোঝাতে চাইছে, মোদীই একমাত্র উন্নয়নের কান্ডারী।
নীতীশ, লালু, কংগ্রেস একজোট হওয়ার পর বিহারের সংখ্যালঘু ভোটও এখন সেই শিবিরে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। সে ক্ষেত্রে সদ্য প্রয়াত এ পি জে আব্দুল কালাম ভরসা বিজেপির। এক বিজেপি নেতার কথায়, ‘‘কালাম যে এক জন ভাল মুসলমান, তা-ও প্রচার করব আমরা।’’