কাল মন্ত্রিসভা সম্প্রসারণ, একাধিক দলিত নেতার মন্ত্রী হওয়ার সম্ভাবনা

সরকারের মাঝ বয়সে এসে উত্তরপ্রদেশের ভোটের আগে মন্ত্রিসভা রদবদল ও সম্প্রসারণের কাজে হাত দিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। আগামিকাল সকাল এগারোটায় রাষ্ট্রপতি ভবনে নতুন মন্ত্রীদের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান হবে। যদিও কাজের নিরিখে বেশ কিছু মন্ত্রকে রদবদলও করতে পারেন তিনি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৪ জুলাই ২০১৬ ২১:৪০
Share:

সরকারের মাঝ বয়সে এসে উত্তরপ্রদেশের ভোটের আগে মন্ত্রিসভা রদবদল ও সম্প্রসারণের কাজে হাত দিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।

Advertisement

আগামিকাল সকাল এগারোটায় রাষ্ট্রপতি ভবনে নতুন মন্ত্রীদের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান হবে। যদিও কাজের নিরিখে বেশ কিছু মন্ত্রকে রদবদলও করতে পারেন তিনি। বিজেপি সূত্রের খবর, উত্তরপ্রদেশের নির্বাচনের কথা মাথায় রেখে এই রদবদলে থাকবে সামাজিক সমীকরণের অঙ্কও। প্রধানমন্ত্রী আজ বলেন, ‘‘বাজেটে ঘোষিত সিদ্ধান্ত রূপায়ণকে অগ্রাধিকার দেওয়ার লক্ষ্যে মন্ত্রিসভার সম্প্রসারণ করা হচ্ছে। সর্বনিম্ন সরকার আর সর্বোচ্চ প্রশাসনের লক্ষ্যে চার দফা এজেন্ডা নিয়ে চলছে সরকার। এক, অফিসের ফাইল আরও দ্রুত নিষ্পত্তি। দুই, ব্যবসা করার পথ আরও সহজ করা। তিন, ক্যাবিনেট নোট তৈরির সময় কমানো। চার, সরকারের কোনও কাজ বাকি না রাখা।’’

প্রধানমন্ত্রীর কথা থেকে স্পষ্ট, মন্ত্রিসভার সম্প্রসারণের পিছনেও পারদর্শিতাকে প্রাধান্য দিচ্ছেন মোদী। অর্থ, স্বরাষ্ট্র, প্রতিরক্ষা ও বিদেশ মন্ত্রকের মতো বিগ-ফোরে হেরফের হচ্ছে না। তবে অর্থমন্ত্রকের ভার সামলিয়ে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রকের অতিরিক্ত ভারও অনেকদিন ধরে সামলাচ্ছিলেন অরুণ জেটলি। সেই ভার লাঘব করতে জেটলিকে তথ্য ও সম্প্রচারের ভার থেকে লাঘব করার জল্পনাও রয়েছে রাজধানীর অলিন্দে। সম্ভাব্য নতুন মন্ত্রীদের মধ্যে যাঁদের নাম উঠে আসছে, সেটি বিশ্লেষণ করলেই দেখা যাবে সম্প্রসারণের পিছনে রাজনৈতিক সমীকরণের অঙ্কও কাজ করছে। উত্তরপ্রদেশের ভোটের আগে আরও বেশি দলিত ও অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণিকে (ওবিসি) সামিল করতে চাইছেন তিনি।

Advertisement

যেমন আপনা দলের নেতা অনুপ্রিয়া পটেল। উত্তরপ্রদেশের ওবিসি কুর্মি নেতা প্রয়াত সোনেলাল পটেলের মেয়ে তিনি। রাজস্থানের পালি আসনের সাংসদ দলিত নেতা পি পি চৌধুরীর নামও সম্ভাব্য তালিকায় রয়েছে। মহারাষ্ট্র থেকে শরিক আরপিআই দলের নেতা রামদাস আটাওয়ালেও মন্ত্রী হচ্ছেন। এই দলিত নেতা নিজেই সে কথা জানিয়েছেন। ভোটমুখী উত্তরাখন্ডের আলমোড়ার সাংসদ অজয় টামটা ও লোকসভায় বিজেপির চিফ হুইপ বিকানেরের সাংসদ অর্জুন মেওঘওয়ালকেও মন্ত্রী করার সম্ভাবনা। উভয়েই দলিত নেতা। উত্তরপ্রদেশের ব্রাহ্মণ মুখ মহেন্দ্র পাণ্ডে কিংবা শিব প্রতাপ শুক্লকেও মন্ত্রী করা হতে পারে। শাহজানপুরের সাংসদ কৃষ্ণ রাজ, আদিবাসী নেতা ফগন সিংহ কুলস্তে, মধ্যপ্রদেশের অনিল দাভে, ভোটমুখী গুজরাত থেকে পারষোত্তম রূপালা, মানসুখভাই মান্ডাভিয়া, দিল্লির বিজয় গোয়েলও আজ মন্ত্রিসভার রদবদলের আগে বিজেপি সভাপতি অমিত শাহের বাড়িতে চা-চক্রে আমন্ত্রণ পান। ক’দিন আগে এই অমিত শাহের সঙ্গেই মন্ত্রিসভা ও সংগঠনের রদবদল নিয়ে পাঁচ ঘন্টার বৈঠক করেন মোদী। কালকের সম্প্রসারণের পর সংগঠনের রদবদলও ঘোষণা করবেন অমিত শাহ।

আরও পড়ুন: আগামিকাল মোদীর মন্ত্রিসভায় রদবদল, নয়া মুখ কারা?

এই সম্প্রসারণে বাংলার ভাগ্যেও আর একটি শিকে ছিড়তে পারে। অরুণ জেটলি বিরোধী শিবিরের নেতা সুষমা স্বরাজ ঘনিষ্ঠ সুরিন্দর সিংহ অহলুওয়ালিয়াও মন্ত্রী হতে পারেন কাল। তাঁরও ডাক পড়েছে আজ। সে ক্ষেত্রে বাবুল সুপ্রিয়র পর বাংলার আর একজন সাংসদও মন্ত্রী হবেন। প্রধানমন্ত্রী সচিবালয় সূত্রের মতে, এইমুহূর্তে মোদী মন্ত্রিসভায় মোট ৬৪ জন মন্ত্রী রয়েছেন। এই সংখ্যাটি আশির কোঠা পেরোনো যায় অনায়াসে। মোদীর পাঁচ বছরের জমানায় এটিই সেই অর্থে শেষ বড় রদবদল। কারণ, সরকার তার অর্ধেক মেয়াদ পূর্ণ করেছে। কেন্দ্রের প্রাক্তন ক্রীড়ামন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়াল অসমের মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর এই রদবদল অনিবার্য হয়ে উঠেছিল। রাওসাহেব দানভে পাটিল ও বিজয় সাম্পলার মতো দুই মন্ত্রীও মহারাষ্ট্র ও পঞ্জাবে দলের সভাপতি হয়েছেন। অসমের প্রতিনিধিত্ব চলে যাওয়ার পর সেই পদে ভাবা হচ্ছে রামেশ্বর তেলি কিংবা রমন ডেকার নাম।

ক’দিন আগে মধ্যপ্রদেশে শিবরাজ সিংহ চৌহান নিজের মন্ত্রিসভার রদবদল করেছেন। তাতে ছুটি দেওয়া হয়েছে ৭৫ বছরের বেশি ব্যক্তিদের। সেই সূত্র এখানে মানলেও সংখ্যালঘু উন্নয়ন মন্ত্রী নাজমা হেফতুল্লা ও ছোট-মাঝারি শিল্পের মন্ত্রী কলরাজ মিশ্রেরও ছুটি হওয়া উচিত। সে ক্ষেত্রে মোখতার আব্বাস নকভির পদোন্নতি হতে পারে। নতুন সংখ্যালঘু মুখ ঢুকতে পারেন এম জে আকবর। পদোন্নতির দৌড়ে এগিয়ে আছেন পীযূষ গয়াল ও ধর্মেন্দ্র প্রধানের মতো মন্ত্রীরাও। অসুস্থতার কারণে বাদ যেতে পারেন জল সম্পদ প্রতিমন্ত্রী শানওয়ার লাল জাট ও বিতর্কিত পঞ্চায়েত রাজ প্রতিমন্ত্রী নিহাল চন্দ্র। গুজরাত থেকে নতুন নাম আসার পর সে রাজ্যের মোহনভাই কুন্ডারিয়া কিংবা হরিভাই চৌধুরীকেও বাদ দেওয়া হতে পারে। এর আগের সম্প্রসারণে শরিক শিবসেনার অনিল দেশাইকে প্রতিমন্ত্রী করতে চেয়েছিলেন মোদী। কিন্তু উদ্ধব ঠাকরে ক্যাবিনেট মন্ত্রীর নীচে মানতে চাননি। আজও তিনি বলেছেন, মন্ত্রিসভা নিয়ে বিজেপির সঙ্গে কথা হয়নি। কারও কাছে তাঁরা হাত পাততে পারবেন না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন