ভোটের আগে কড়া পাক-নীতি কৌশল প্রধানমন্ত্রীর

ত্রয়োদশ যোজনায় ২০১৭ সালের এপ্রিল মাস প্রচুর যুদ্ধসামগ্রীও কিনেছে ভারত। হাউইৎজার ধরনের হালকা কামান, মাঝারি পাল্লার বিমানধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র এবং আধুনিক হালকা হেলিকপ্টার কেনা হয়েছে অনেক।

Advertisement

জয়ন্ত ঘোষাল

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৯ মার্চ ২০১৮ ০৩:৩৭
Share:

আগামী বছর লোকসভা নির্বাচনের আগে পাকিস্তানের সঙ্গে আর কোনও রকম শান্তি প্রক্রিয়া শুরু না-করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নরেন্দ্র মোদী সরকার। চিনের সঙ্গে সম্পর্ক দ্রুত মেরামত করে নিয়ে পাকিস্তানের সঙ্গে সংঘাতের পথে যাওয়াই ভোটের আগে মোদীর নতুন কৌশল বলে মনে করা হচ্ছে। উদ্দেশ্য অদূর ভবিষ্যতে চিনের সাহায্য নিয়ে পাকিস্তানকে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করা। আবার পাকিস্তান প্রশ্নে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল এবং প্রতিরক্ষামন্ত্রী নির্মলা সীতারামন সেনাপ্রধানদের জানিয়ে দিয়েছেন যে প্রতিরক্ষা প্রস্তুতি এখন চূড়ান্ত পর্যায়ে নিয়ে যেতে হবে।

Advertisement

ত্রয়োদশ যোজনায় ২০১৭ সালের এপ্রিল মাস প্রচুর যুদ্ধসামগ্রীও কিনেছে ভারত। হাউইৎজার ধরনের হালকা কামান, মাঝারি পাল্লার বিমানধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র এবং আধুনিক হালকা হেলিকপ্টার কেনা হয়েছে অনেক। সেনাপ্রধান বিপিন রাওয়ত বলেছেন, ‘‘শুধু জওয়ান নয়, সন্ত্রাসের বলি হচ্ছেন নিরীহ মানুষও। তবে নিয়ন্ত্রণ রেখায় যে কোনও নতুন চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করতে সেনারা প্রস্তুত।’’ ঘটনা হল, মোদী সরকারের আমলে কাশ্মীরে যত সেনা ও নিরীহ মানুষ মারা গিয়েছেন, আগে কখনও এত প্রাণহানি হয়নি। পাকিস্তান প্রশ্নে এক ধাপ এগিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ বলেছেন, ‘‘প্রয়োজনে সীমানা অতিক্রম করেও সন্ত্রাস রুখবে ভারতীয় সেনা।’’ রাজনীতির পরিভাষায় এ’টি দেশের ভিতর আস্তিন গোটানোর বিক্রম হতে পারে, কিন্তু সুরক্ষার পরিভাষায় একে বলা হয় হট পারসুট। অন্য কোনও সার্বভৌম রাষ্ট্রের সীমানায় ঢুকে আক্রমণ করা। কার্গিল যুদ্ধের সময়ে লালকৃষ্ণ আডবাণী ও জর্জ ফার্নান্ডেজ ওই প্রস্তাব দিলেও জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ব্রজেশ মিশ্র ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী যশোবন্ত সিংহ তার বিরোধিতা করেন। ব্রজেশদের ওই আপত্তি মেনে নিয়েছিলেন অটলবিহারী বাজপেয়ী।

আগামী ২৩ মার্চ পাকিস্তান দিবস। তা উদযাপনের জন্য ভারতে নিযুক্ত পাকিস্তানের হাইকমিশনার সোহেল মাহমুদ গত ক’দিন ধরেই ব্যস্ত ছিলেন। অন্যান্য বারের মতোই হুরিয়ত নেতা গিলানি ও অন্য কাশ্মীরি নেতাদের আমন্ত্রণ জানানোর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু মোদী সরকার এ বার গিলানিকে শ্রীনগর থেকে দিল্লিতে আসতে দিতে রাজি নন। ক্ষুব্ধ পাকিস্তান তাই তাদের হাইকমিশনারকে ইসলামাবাদে ডেকে পাঠিয়েছে। যাওয়ার আগে সোহেল বলেন, ‘‘আলোচনা ছাড়া অন্য কোনও পথ থাকতে পারে না। আমরা আলোচনায় রাজি। কিন্তু ভারত সরকার এ ব্যাপারে ইতিবাচক অবস্থান এখনও জানায়নি।’’ পাকিস্তান দূতাবাস সূত্র বলছে— ভারত যে এখন যুদ্ধ পরিস্থিতিকে জিইয়ে রাখতে চাইছে, ইসলামাবাদও সেটা বুঝে গিয়েছে।

Advertisement

আরও পড়ুন: পাকিস্তান-সহ মোদীর সার্বিক বিদেশনীতিতে উদ্বিগ্ন মনমোহন

তবে মোদী সরকারের নীতি নিয়ে কূটনীতিকদের মধ্যে ভিন্নমত রয়েছে। অনেকের পরামর্শ, সন্ত্রাস দমন ও আলোচনা দু’টিই পাশাপাশি চালাতে হবে। সন্ত্রাস বন্ধ হলে আলোচনা শুরুর শর্ত রাখলে হয়তো কোন দিনই পাকিস্তানের সঙ্গে আলোচনায় বসা যাবে না। কারণ সেনা, আইএসআই, জঙ্গি, সরকার— পাকিস্তানে ক্ষমতার কেন্দ্র অনেকগুলি। একটা সময়ে প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ যখন বাজপেয়ীর সঙ্গে শান্তি আলোচনা চালাচ্ছেন, সেনাপ্রধান পারভেজ মুশারফ তখন কার্গিল অভিযানের চক্রান্ত চালাচ্ছিলেন। পাকিস্তান সরকার যখন আলোচনায় এগোয়, সেনাবাহিনী ভেস্তে দেয়। সুতরাং সন্ত্রাস বন্ধ হলে আলোচনা শুরু হবে, এটা ভাবলে আলোচনার সুযোগটাই হাতছাড়া হয়ে যেতে পারে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন