লোকসভা জয়ের কৃতিত্ব যে একা নরেন্দ্র মোদী বা অমিত শাহের নয় প্রধানমন্ত্রীর দিকে তির ছুঁড়ে পরোক্ষে সে কথা বলেছেন আরএসএস প্রধান মোহন ভাগবত। তার পরে এ বার মোদী-জমানার বিজেপিতে নিজেদের রাশ শক্ত করতে আরও সক্রিয় হচ্ছেন সঙ্ঘ নেতৃত্ব।
লালকেল্লায় মোদীর প্রথম বক্তৃতার এক দিন আগেই দিল্লিতে দলের সব সাংসদকে সঙ্ঘের বাণী মুখস্থ করাতে উদ্যোগী হয়েছেন আরএসএস নেতৃত্ব। বিজেপি সূত্রের মতে, সেই দিন মোদী সরকারের সংসদীয় মন্ত্রী বেঙ্কাইয়া নায়ডুর বাড়িতেই এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। যদিও আনুষ্ঠানিক ভাবে ‘রাখি’ উপলক্ষে সেই আয়োজন। কিন্তু সঙ্ঘের শীর্ষ নেতা ভাইয়াজি জোশী সেই অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকে বিজেপি সাংসদদের বিভিন্ন বিষয়ে ‘পরামর্শ’ দেবেন। বিজেপির এক নেতা বলেন, “রক্ষাবন্ধন উৎসব পালনের রেওয়াজ সঙ্ঘের কাছে নতুন নয়। কিন্তু এ বারে যে ভাবে বিজেপির সব সাংসদকে সামিল করে আরএসএস নেতৃত্ব এই আয়োজন করতে চাইছেন, তা বেনজির।”
সংসদ চলাকালীন প্রতি সপ্তাহে সাংসদদের করণীয় কী, তা নিয়ে পাঠ পড়াচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল ভাগ করে রেস কোর্সে প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনেও সাংসদদের ছোট ছোট গোষ্ঠী করে পৃথক বৈঠক করছেন মোদী। এমনকী সংসদের সেন্ট্রাল হলে দলের নতুন সভাপতি অমিত শাহকেও মোদী নিয়ে এসেছিলেন সাংসদদের পরামর্শ দিতে। দলের সদ্য শেষ হওয়া জাতীয় পরিষদের বৈঠকেও সরকার ও সংগঠনের যৌথ রণকৌশল পেশ করেছেন মোদী-অমিত জুটি। লোকসভায় জয়ের ‘ম্যান অব দ্য ম্যাচের’ শিরোপাও সরাসরি অমিত শাহকে দিয়েছেন মোদী। তার পরেই মোহন ভাগবতের সেই বিস্ফোরক মন্তব্য। যেখানে তিনি বলেন, জয়ের কৃতিত্ব কোনও এক নেতার নয়, দেশের মানুষের। তাঁরা পরিবর্তন চেয়েছেন বলে বিজেপি ক্ষমতায় এসেছে।
বিজেপির এক নেতা বলেন, “প্রথমে মোদীর বক্তব্য খণ্ডন করে জয়ের কৃতিত্ব তাঁর থেকে ছিনিয়ে নেওয়া, এ বারে মোদী-অমিত শাহের গণ্ডিতে আরএসএসের প্রবেশ এ সব ঘটনা থেকে স্পষ্ট, বিজেপির নতুন জমানায় সঙ্ঘ তাঁদের আধিপত্য কায়েম রাখতে উঠে পড়ে লেগেছে।” এর আগে রাম মাধব, শিব প্রকাশের মতো আরএসএস নেতাকে অমিত শাহের নতুন টিমে সামিল করানোর জন্য চাপ দিয়েছে সঙ্ঘ। মোদীর ইচ্ছা অনুযায়ী অমিত শাহকে সভাপতি করার ব্যাপারে আরএসএস সায় দিলেও তাঁর টিমে সঙ্ঘ নিজের দাপট বজায় রাখতে চাইছে। বিজেপি সূত্রের মতে, অমিত শাহের নতুন টিমের রূপরেখা তৈরি। এই সপ্তাহেই সেটি প্রকাশ করা হবে। সংসদীয় বোর্ড থেকে দলের প্রবীণ নেতাদের বাদ দেওয়ার একটি ভাবনাও রয়েছে। এই নিয়ে বিতর্ক এড়াতে একটি পরামর্শদাতা কমিটি তৈরি করে সেখানে তাঁদের ঠাঁই দেওয়ার প্রস্তাব নিয়ে দলে আলোচনা হয়েছে। কিন্তু সঙ্ঘ-ঘনিষ্ঠ নেতারা যাতে সরকার ও সংগঠনের সমন্বয়ের কাজে গুরুত্বপূর্ণ পদ পান, তা সুনিশ্চিত করেছে আরএসএস।
নরেন্দ্র মোদীও সঙ্ঘের সঙ্গে সংঘাতের রাস্তায় হাঁটতে চাইছে না। গত লোকসভা নির্বাচনে আরএসএসও সর্বশক্তি দিয়ে মোদীকে প্রধানমন্ত্রী করার জন্য তৎপর হয়েছিল। অতীতে কে সুদর্শন সরসঙ্ঘচালক থাকাকালীন অটলবিহারী বাজপেয়ী সরকারের সঙ্গে তাঁর বিবাদ সুবিদিত ছিল। স্বদেশি জাগরণ মঞ্চও বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করেছিল। এ বারেও মোদী সরকারের আর্থিক নীতি নিয়ে সঙ্ঘ আপত্তি তুলতে শুরু করেছে। এ সব কথা মাথায় রেখেই মোদী ও অমিত শাহ এখন সঙ্ঘের সঙ্গে সখ্য বজায় রেখে চলতে চাইছেন। সে কারণেই মোহন ভাগবত, ভাইয়াজি জোশীদের বাসভবনে নৈশভোজে আমন্ত্রণ করেছেন মোদী। অমিত শাহ ও সরকারের অন্য মন্ত্রীদেরও পরামর্শ দিয়েছেন, সঙ্ঘের বক্তব্যকে সমান ভাবে গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করতে।