সিদ্ধান্ত নেবে মন্ত্রিসভা

দ্বিগুণ হচ্ছে সাংসদদের বেতন

শুধু নরেন্দ্র মোদীর মন্ত্রিসভার অনুমোদনের অপেক্ষা। তা মিললেই সাংসদদের বেতন দ্বিগুণ হতে চলেছে। মাস গেলে এখন সাংসদরা ৫০ হাজার টাকা বেতন পান। বিজেপি নেতা যোগী আদিত্যনাথের নেতৃত্বাধীন সংসদীয় কমিটি সুপারিশ করেছিল, তা বাড়িয়ে ১ লক্ষ টাকা করা হোক।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৯ জুলাই ২০১৬ ০৪:০৯
Share:

শুধু নরেন্দ্র মোদীর মন্ত্রিসভার অনুমোদনের অপেক্ষা। তা মিললেই সাংসদদের বেতন দ্বিগুণ হতে চলেছে।

Advertisement

মাস গেলে এখন সাংসদরা ৫০ হাজার টাকা বেতন পান। বিজেপি নেতা যোগী আদিত্যনাথের নেতৃত্বাধীন সংসদীয় কমিটি সুপারিশ করেছিল, তা বাড়িয়ে ১ লক্ষ টাকা করা হোক। ৫০ হাজার টাকা বেতনের সঙ্গে অফিস চালানোর খরচ, নির্বাচনী কেন্দ্রে কাজ করার ভাতা বাবদ আরও ৯০ হাজার টাকা পান সাংসদরা। যার উপর কোনও আয়কর দিতে হয় না। তা-ও বাড়িয়ে ১ লক্ষ ৮০ হাজার টাকা করার সুপারিশ করেছিল আদিত্যনাথ কমিটি। যার অর্থ, সাংসদদের মাসিক আয় ১ লক্ষ ৪০ হাজার টাকা থেকে ২ লক্ষ ৮০ হাজার টাকায় পৌঁছবে।

সাংসদদের বেতন শেষ বেড়েছিল ছয় বছর আগে। সাংসদদের যুক্তি, তার পর থেকে মূল্যবৃদ্ধির হার বেড়েছে। আমজনতা বা সরকারি কর্মচারীদের মতো সাংসদদেরও মূল্যবৃদ্ধির বোঝা বইতে হয়। আজ রাজ্যসভায় কংগ্রেসের নেতা গুলাম নবি আজাদও সেই যুক্তি দিয়ে বলেছেন, ‘‘মূল্যবৃদ্ধি তো সবাইকেই ধাক্কা দেয়। সাংসদরাও ব্যতিক্রম নন।’’

Advertisement

আদিত্যনাথ কমিটির সুপারিশ জমা পড়েছে গত বছরের শেষে। কিন্তু মোদী সরকার এত দিন এ নিয়ে চুপচাপই ছিল। কারণ সাংসদরাই কেন নিজেদের বেতন ঠিক করবেন, তা নিয়ে সমালোচনার ঝড় ওঠে। কিন্তু সপ্তম বেতন কমিশনের সুপারিশ কার্যকর করার পরে সরকারি আমলাদের বেতন যথেষ্ট পরিমাণে বৃদ্ধি হওয়ায় সাংসদদের বেতনবৃদ্ধিও জরুরি হয়ে পড়েছে বলে মোদী সরকারের মত। কারণ এখন কেন্দ্রের সচিবদের বেতন পৌঁছেছে ২ লক্ষ ২৫ হাজার টাকায়। ক্যাবিনেট সচিবের বেতন ২ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা। যা সাংসদদের বেতনের থেকে বেশি। এখন তাই সংসদীয় কমিটির সুপারিশ নিয়ে মন্ত্রিসভায় আলোচনার জন্য নোট তৈরির
প্রস্তুতি চলছে।

বিজেপির জগদম্বিকা পালের যুক্তি, সরকারি অফিসারদের বেতন যখন বেড়েছে, সাংসদদেরও বেতন বাড়া উচিত। এক কদম এগিয়ে সমাজবাদী পার্টির নেতা নরেশ অগ্রবাল যুক্তি দিয়েছেন, এ নিয়ে লজ্জা পাওয়ার কিছু নেই, সাংসদরা আরও বেশি বেতন পাওয়ারই যোগ্য। তাঁদের নিজেদের বাসভবন, নির্বাচনী কেন্দ্র, দিল্লির বাড়ি—সব মিলিয়ে তিনটি সংসার চালাতে হয়। এই বেতনে তা সম্ভব নয়। তেলুগু দেশমের কে আর নায়ডুর দাবি, সাংসদরা ঠিক মতো বেতন পেলে দুর্নীতি কমবে।

সিপিএমের নেতারা মৃদু আপত্তি তুলে যুক্তি দিয়েছেন, সাংসদরা কেন নিজেদের বেতন ঠিক করবেন? কোনও নিরপেক্ষ কমিশন সিদ্ধান্ত নিক। কিন্তু বেতন বাড়লে তাঁরা নেবেন না, এমনও নয়। তৃণমূলেরও এতে আপত্তি নেই। কিন্তু সাংসদ প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায় এই বেতনবৃদ্ধির বিরোধিতা করে দলকে অস্বস্তিতে ফেলেছেন। তাঁর যুক্তি, সাংসদরা যে বেতন পাচ্ছেন, তা যথেষ্ট। অস্বস্তিতে পড়ে তৃণমূলের তরফে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, প্রসূনবাবু যা বলেছেন, তা তাঁর
নিজস্ব মতামত।

প্রশ্ন হল, এ দেশের সাংসদদের বেতন কি অন্যান্য দেশের তুলনায় কম? সংসদীয় মন্ত্রকের দাবি, মাত্র আধ ডজন দেশের সাংসদদের বেতন এ দেশের সাংসদদের থেকে কম। এরা হল তিউনিশিয়া, শ্রীলঙ্কা, নেপাল, হাইতি ও পানামা। কাজেই বেতন বাড়ানো একেবারেই অযৌক্তিক নয়।

সেই যুক্তি দেখিয়ে সংসদীয় কমিটি সুপারিশ করেছে, পেনশনও ২০ হাজার থেকে ৩৫ হাজার টাকা হোক। প্রাক্তন সাংসদদের পেনশন ৭৫ শতাংশ বাড়ানো হোক। বছরে বিনামূল্যে বিমানের টিকিটের সংখ্যা ৩৪ থেকে বাড়িয়ে ৪৮ হোক। এ ছাড়া, আবাসন, গৃহ ঋণ, সরকারি গাড়ির বন্দোবস্ত, সংসদ ভবনেই কেবিন ও কাজের জায়গা, রাস্তার টোল মকুব, নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনতে আলাদা ক্যান্টিনেরও বন্দোবস্ত হোক।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন