জঙ্গি মদতেই শান্তিতে নির্বাচন, দাবি মুফতির

শ্রীনগরের মসনদে তাঁর ফিরে আসাকে সম্মান করতে ভূস্বর্গে হাজির হল দিল্লি দরবার। আর শপথগ্রহণের পরেই রাজ্যে শান্তিপূর্ণ ভোটের কৃতিত্ব জঙ্গি, পাকিস্তান, বিচ্ছিন্নতাবাদীদের দিলেন মুফতি মহম্মদ সঈদ। বাজেট অধিবেশনের সময়ে মুফতির এই মন্তব্যে ঘরোয়া রাজনীতিতে নরেন্দ্র মোদী সরকার অস্বস্তিতে পড়তে পারে বলে মনেকরা হচ্ছে। বিজেপি ও পিডিপি-র জোট যে ‘উত্তর ও দক্ষিণ মেরুর’ মিলন তা দিল্লিতে নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে বৈঠকের পরেই জানিয়েছিলেন সঈদ।

Advertisement

সাবির ইবন ইউসুফ

শ্রীনগর শেষ আপডেট: ০২ মার্চ ২০১৫ ০৩:১৪
Share:

শ্রীনগরে শপথের পরে নয়া মুখ্যমন্ত্রী মুফতি মহম্মদ সঈদ ও নরেন্দ্র মোদী।

শ্রীনগরের মসনদে তাঁর ফিরে আসাকে সম্মান করতে ভূস্বর্গে হাজির হল দিল্লি দরবার। আর শপথগ্রহণের পরেই রাজ্যে শান্তিপূর্ণ ভোটের কৃতিত্ব জঙ্গি, পাকিস্তান, বিচ্ছিন্নতাবাদীদের দিলেন মুফতি মহম্মদ সঈদ। বাজেট অধিবেশনের সময়ে মুফতির এই মন্তব্যে ঘরোয়া রাজনীতিতে নরেন্দ্র মোদী সরকার অস্বস্তিতে পড়তে পারে বলে মনেকরা হচ্ছে।

Advertisement

বিজেপি ও পিডিপি-র জোট যে ‘উত্তর ও দক্ষিণ মেরুর’ মিলন তা দিল্লিতে নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে বৈঠকের পরেই জানিয়েছিলেন সঈদ। আজ শ্রীনগরে মুফতি মন্ত্রিসভার শপথে হাজির ছিলেন খোদ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ। ছিলেন বিজেপির বর্ষীয়ান নেতা লালকৃষ্ণ আডবাণী ও মুরলীমনোহর জোশীও। জম্মু বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনারেল জোরাবর সিংহ প্রেক্ষাগৃহে শপথ নেওয়ার পরে মোদীকে আলিঙ্গনও করেন মুফতি।

ঠিক তার পরেই সাংবাদিক বৈঠক করেন জম্মু-কাশ্মীরের নয়া মুখ্যমন্ত্রী। সেখানে তাঁর সঙ্গে উপ-মুখ্যমন্ত্রী ও বিজেপি নেতা নির্মল সিংহও হাজির ছিলেন। সেখানেই মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “সীমান্তের ওপারের মানুষও ভোটের উপযুক্ত পরিবেশ তৈরিতে সাহায্য করেছেন। তাদের হাতেও গোলমাল পাকানোর মতো লোক রয়েছে। তারা গোলমাল পাকালে শান্তিতে ভোট হতো না।” নাম না করলেও সঈদযে পাকিস্তানি মদতপুষ্ট জঙ্গি ও হুরিয়তের মতো বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠনগুলির কথা বলেছেন তা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই।

Advertisement

প্রত্যাশিত ভাবেই এর পরে বিরোধীদের তোপের মুখে পড়ে পিডিপি-বিজেপি জোট। বিরোধী ন্যাশনাল কনফারেন্স দলের নেতা ওমর আবদুল্লা টুইটারে তির্যক ভাষায় বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী এই মাত্র বললেন জঙ্গি, পাকিস্তান, হুরিয়ত কাশ্মীরে শান্তিপূর্ণ ভোট করেছে। মুফতি সাহেবকে ধন্যবাদ। কিন্তু নির্বাচন কমিশনের কর্মী ও নিরাপত্তাবাহিনীর জওয়ানরা কী করছিলেন তা বিজেপি দয়া করে বলবে কি?” তোপ দেগেছে কংগ্রেসও। রাজ্যসভার বিরোধী দলনেতা গুলাম নবি আজাদের কথায়, “ভোটের আগে জম্মু-কাশ্মীরে প্রায় ৮ জন গ্রামপ্রধানকে খুন করেছিল জঙ্গিরা। উরিতে সেনা শিবিরে হামলা হয়েছিল। পাকিস্তান ও জঙ্গিরা ভোট প্রক্রিয়া বানচাল করতে প্রাণপণ চেষ্টা করেছে।” তাঁর দাবি, বিজেপিকে মুফতির মন্তব্যের ব্যাখ্য দিতে হবে। জম্মু-কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী জঙ্গি দমনে নিযুক্ত সংযুক্ত কম্যান্ডের চেয়ারম্যানও বটে। তাঁর এই মন্তব্যে নিরাপত্তাবাহিনীর মনোবল একেবারে ভেঙে যেতেপারে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেছে কিছু শিবির।


সাংবাদিক বৈঠকে জম্মু ও কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী মুফতি মহম্মদ সঈদ এবং উপমুখ্যমন্ত্রী নির্মল সিংহ। রবিবার।

বেশ কিছুটা সময় নিয়ে সতর্ক ভাবে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে বিজেপি। নীতি মেনে দলের তরফে বলা হয়েছে, সংবিধান যাঁরা মেনে চলেন তাঁদের জন্যই কাশ্মীরে ভোট শান্তিপূর্ণ হয়েছে। নির্বাচন কমিশন ও নিরাপত্তাবাহিনীর কর্মীরাও সে জন্য নিজেদের উজাড় করে দিয়েছেন। কিন্তু মোদী সরকারের শীর্ষ সূত্রে খবর, মুফতির মন্তব্যে খুব একটা বিস্মিত নয় কেন্দ্র। কারণ, বিজেপির সঙ্গে জোট করা নিয়ে কাশ্মীর উপত্যকায় চাপে রয়েছেন মুফতি। সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদ ও সামরিক বাহিনী বিশেষ ক্ষমতা আইন নিয়ে তিনি কতটা জমি ছেড়েছেন তা নিয়ে চুলচেরা হিসেব করবেন বিরোধী ও বিচ্ছিন্নতাবাদীরা। আজ এই দু’টি বিষয়ের গুরুত্বই কিছুটা লঘু করে দিয়েছেন মুফতি।

মোদী সরকারের কর্তাদের ব্যাখ্যা, বিচ্ছিন্নতাবাদী-সহ কাশ্মীরের একটি অংশকে খুশি করতে বাধ্য মুফতি। তাই তিনি যে এই ধরনের কিছু মন্তব্য করবেন তা আঁচ করাই গিয়েছিল। তবে মুখ্যমন্ত্রী হয়তো কিছুটা বাড়াবাড়ি করে ফেলেছেন।

আজ বিজেপির মিত্র হিসেবে মন্ত্রিসভায় যোগ দিয়েছেন প্রাক্তন বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতা সাজ্জাদ গনি লোন। কেন্দ্রীয় কর্তাদের মতে, লোনের সঙ্গে বিজেপির মৈত্রীই প্রমাণ করে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সঙ্গে যোগ বজায় রাখতে রাজি দিল্লি। তাঁরা চাইলে বিচ্ছিন্নতাবাদের পথ ছেড়ে মূলস্রোতেও আসতে পারেন। সাজ্জাদ মন্ত্রিসভায় আসার ঘটনা কাশ্মীরে শান্তি আনতে সাহায্য করবে বলে মন্তব্য করেছেন মুফতিও। সাজ্জাদকে মন্ত্রী করে মুফতি দিল্লিকেই খুশি রেখেছেন বলে দাবি কেন্দ্রীয় কর্তাদের।

দিল্লির এক কর্তার কথায়, “যা দেখা-শোনা যায়, সেটা আদৌ সত্য নয়। এটাই কাশ্মীরের সব চেয়ে বড় সত্য।”

(সহ প্রতিবেদন: অগ্নি রায়)
ছবি: পিটিআই

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন