২০২৫ সাল বলিউডের জন্য একটি দুর্দান্ত বছর। এ বছরে মুক্তি পেয়েছে ‘ছাবা’, ‘সাইয়ারা’, ‘ধুরন্ধর’-এর মতো দুর্দান্ত সফল কিছু ছবি। পর্দা ছাড়াও তারকাদের জীবনে অনেক কিছু ঘটেছে। কেউ বিয়ের পিঁড়িতে বসেছেন, তো কেউ আবার মা-বাবা হওয়ার সুখ ভোগ করেছেন।
আলোর পাশাপাশি আঁধারও আছে। বলিপাড়ার বেশ কিছু জনপ্রিয় ব্যক্তিত্ব প্রয়াত হয়েছেন চলতি বছরে। এর মধ্যে কিছু মৃত্যু ছিল আকস্মিক। হৃদয়বিদারক। একনজরে দেখে নেওয়া যাক এ বছর কাকে কাকে হারিয়েছে বলিউড।
এ বছর বলিউডের সবচেয়ে বড় ক্ষতি ধর্মেন্দ্রের প্রয়াণ। বর্ষীয়ান অভিনেতার মৃত্যু বলিউডের এক যুগের অবসান। দীর্ঘ শারীরিক অসুস্থতার পর ২৪ নভেম্বর মৃত্যু হয় বলিউডের ‘হি-ম্যান’-এর। মৃত্যুর সময় তাঁর বয়স হয়েছিল ৯০ বছর। বেশ কয়েক দিন ধরে শারীরিক অসুস্থতায় ভুগছিলেন তিনি। হাসপাতালে ভর্তিও হয়েছিলেন। ভেন্টিলেশনে ছিলেন। বাড়ি ফিরে এসেছিলেন। কিন্তু শেষরক্ষা হয়নি। নিজের বাসভবনেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন কিংবদন্তি অভিনেতা।
এ ছাড়়াও এ বছর প্রয়াত বলিউড ব্যক্তিত্বদের তালিকায় রয়েছেন বর্ষীয়ান অভিনেতা মনোজ কুমার। ৪ এপ্রিল মুম্বইয়ের কোকিলাবেন হাসপাতালে প্রয়াত হন তিনি। মৃত্যুর সময় বয়স হয়েছিল ৮৭। বার্ধক্যজনিত একাধিক শারীরিক সমস্যায় ভুগছিলেন বর্ষীয়ান অভিনেতা। সিরোসিস অফ লিভার ছিল তাঁর, যা অভিনেতার স্বাস্থ্যের দ্রুত অবনতি ঘটিয়েছিল। ২১ ফেব্রুয়ারি তাঁকে মুম্বইয়ের কোকিলাবেন ধীরুভাই অম্বানী হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। সেখানেই হৃদ্রোগজনিত সমস্যায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।
চলতি বছরের শুরুতে প্রয়াত হন কবি-সাহিত্যিক তথা চলচ্চিত্র নির্মাতা প্রীতীশ নন্দী। ৮ জানুয়ারি মুম্বইয়ে নিজের বাসভবনে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৩ বছর। রাজ্যসভার সাংসদও ছিলেন প্রীতীশ।
১৪ মার্চ প্রয়াত হন প্রবীণ অভিনেতা, প্রযোজক এবং পরিচালক দেব মুখোপাধ্যায়। দেব ছিলেন ষাটের দশকের জনপ্রিয় মুখ। যদিও দীর্ঘ দিন অভিনয় থেকে দূরে ছিলেন তিনি। বয়স হয়েছিল ৮৩। দীর্ঘ দিন ধরে বার্ধক্যজনিত সমস্যায় ভুগছিলেন দেব। শ্বাসকষ্টের কারণে তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। সেখানেই মৃত্যু হয় চিকিৎসাধীন অবস্থায়। দেব ছিলেন মুম্বইয়ের বিনোদন দুনিয়ার স্তম্ভ শশধর মুখোপাধ্যায়ের বংশধর। জনপ্রিয় পরিচালক অয়ন মুখোপাধ্যায় তাঁর পুত্র।
২০২৫ সালের ২৩ মে প্রয়াত হন জনপ্রিয় টেলিভিশন এবং চলচ্চিত্র অভিনেতা মুকুল দেব। মৃত্যুর সময় তাঁর বয়স হয়েছিল মাত্র ৫৪ বছর। বেশ কিছু দিন ধরেই তিনি শারীরিক অসুস্থতায় ভুগছিলেন। দিল্লির একটি হাসপাতালে মৃত্যু হয় তাঁর।
২০২৫ সালের ২৭ জুন হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়ে প্রয়াত হন অভিনেত্রী-মডেল শেফালী জ়রীওয়ালা। শেফালীর মৃত্যুও ছিল আকস্মিক। মৃত্যুর সময় তাঁর বয়স হয়েছিল মাত্র ৪২। ‘কাঁটা লগা’ গানের জন্য বিপুল জনপ্রিয়তা ছিল অভিনেত্রীর।
চলতি বছরের ১৫ জুলাই মৃত্যু হয়েছে প্রবীণ অভিনেতা এবং টেলিভিশন প্রযোজক ধীরজ কুমারের। নিউমোনিয়া আক্রান্ত হয়ে মুম্বইয়ের কোকিলাবেন ধীরুভাই অম্বানী হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন তিনি। চিকিৎসাধীন অবস্থাতেই মৃত্যু হয় তাঁর।
১৮ অগস্ট ঠাণের একটি বেসরকারি হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন অভিনেতা অচ্যুত পোটদার। মৃত্যুর সময় তাঁর বয়স হয়েছিল ৯০ বছর। বলিউডের বহু ছবিতে পার্শ্বচরিত্রে অভিনয় করেছেন অচ্যুত। ‘থ্রি ইডিয়ট্স’ ছবিতে তাঁর একটি সংলাপ, ‘আরে, কহেনা কয়া চাহতে হো?’ ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করে।
সিঙ্গাপুরে অনুষ্ঠান করতে গিয়ে ১৯ সেপ্টেম্বর রহস্যজনক ভাবে মৃত্যু হয় প্লেব্যাক গায়ক তথা সঙ্গীতশিল্পী জ়ুবিন গর্গের। স্কুবা ডাইভিংয়ের সময় মারা যান অহমিয়া এই শিল্পী। মৃত্যুর সময় তাঁর বয়স হয়েছিল মাত্র ৫২। জ়ুবিনের মৃত্যুতে উত্তাল হয়ে উঠেছিল অসম। তাঁর অনুরাগীদের দাবি ছিল, খুন হয়েছেন গায়ক। একই দাবি করেছিলেন অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মাও। জ়ুবিনের রহস্যমৃত্যুর তদন্তে ধৃতদের মধ্যে চার জনের বিরুদ্ধে ইতিমধ্যেই খুনের অভিযোগ এনে চার্জশিট দিয়েছে বিশেষ তদন্তকারী দল (সিট)।
১৫ অক্টোবর শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন প্রয়াত জনপ্রিয় অভিনেতা পঙ্কজ ধীর। বয়স হয়েছিল ৬৮। বিআর চোপড়ার ‘মহাভারত’-এর কর্ণ চরিত্রে তাঁর অভিনয় এখনও দর্শকমনে গেঁথে আছে। দীর্ঘ দিন ধরেই ক্যানসারের সঙ্গে লড়াই করছিলেন পঙ্কজ। তবে ধীরে ধীরে সেরেও উঠেছিলেন। কিন্তু, মাস কয়েক আগে আবার তাঁর অবস্থার অবনতি হয়। গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন অভিনেতা। অস্ত্রোপচারও হয়েছিল তাঁর। এর পরেই ১৫ অক্টোবর মৃত্যু হয় অভিনেতার।
চলতি বছরের দীপাবলির আনন্দের মাঝেই শোকের আবহ ছিল বলিউডে। দীপাবলির আলো ম্লান করে প্রয়াত হন বর্ষীয়ান অভিনেতা অসরানী। শোকস্তব্ধ হয়ে পড়ে বলিউড। মৃত্যুর সময় কৌতুকাভিনেতার বয়স হয়েছিল ৮৪ বছর। স্বাস্থ্যবিষয়ক জটিলতার কারণে মুম্বইয়ের জুহুর একটি হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন অসরানী। ২০ অক্টোবর সেখানেই তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। ‘শোলে’ ছবিতে তাঁর অভিনীত ‘আঙ্গরেজো কে জ়মানে কে জেলর’ চরিত্রটি আজও মানুষের মনে গেঁথে আছে।
পর্দায় অভিনয় করে সকলের মুখে হাসি ফোটাতেন। ২৫ অক্টোবর সেই হাসির কারণই হারিয়ে যায়। ৭৪ বছর বয়সে প্রয়াত হন জনপ্রিয় কৌতুকাভিনেতা সতীশ শাহও। কিডনির অসুখের কারণে মুম্বইয়ের হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন বর্ষীয়ান অভিনেতা। সেখানেই মৃত্যু হয় তাঁর।
৬ নভেম্বর প্রয়াত হয়েছেন অভিনেত্রী তথা গায়িকা সুলক্ষণা পণ্ডিত। মৃত্যুকালে সুলক্ষণার বয়স হয়েছিল ৭১ বছর। ৭০ ও ৮০-র দশকের চর্চিত অভিনেত্রী ছিলেন তিনি। সঞ্জীবকুমারের সঙ্গে তাঁর সম্পর্কের কথা আজও উঠে আসে আলোচনায়। পাশাপাশি তিনি সঙ্গীত পরিচালক জুটি যতীন-ললিতের বোন। বেশ কিছু দিন ধরে অসুস্থ ছিলেন সুলক্ষণা। শ্বাসকষ্ট নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছিল তাঁকে। হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়ে তাঁর মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছিলেন চিকিৎসকেরা।
২০২৫ সালের ৭ নভেম্বর মৃত্যু হয় বলিউডের প্রাক্তন মডেল তথা অভিনেত্রী জ়ারিন খানের। তিনি ছিলেন অভিনেতা-পরিচালক সঞ্জয় খানের স্ত্রী। বলিউড তারকা হৃত্বিক রোশনের প্রাক্তন স্ত্রী সুজ়ান খানের মা। ৮১ বছর বয়সে বার্ধক্যজনিত অসুস্থতার কারণে মুম্বইয়ে নিজের বাসভবনে মারা যান জ়ারিন।
বর্ষীয়ান অভিনেত্রী কামিনী কৌশলকেও এ বছর হারিয়েছে বলিউড। ১৪ নভেম্বর মুম্বইয়ের বাসভবনে বার্ধক্যজনিত কারণে মৃত্যু হয় কামিনীর। মৃত্যুর সময় তাঁর বয়স ছিল ৯৮ বছর।