মেরঠের এসপিকে কড়া বার্তা নকভির

সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের (সিএএ) বিরুদ্ধে বিক্ষোভে গত ২০ ডিসেম্বর উত্তাল হয়ে উঠেছিল মেরঠের লিসারি গেট অঞ্চল।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা 

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ৩০ ডিসেম্বর ২০১৯ ০২:১৫
Share:

মুখতার আব্বাস নকভি।—ছবি পিটিআই।

‘পাকিস্তানে চলে যাও’ বলে যিনি মন্তব্য করেছেন, মেরঠের সেই পুলিশ সুপারের (এসপি) পাশে দাঁড়িয়েছেন উত্তরপ্রদেশের পুলিশ প্রশাসন, খোদ মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথও। কিন্তু ভিন্ন সুর কেন্দ্রীয় সংখ্যালঘু বিষয়ক মন্ত্রী তথা বিজেপি নেতা মুখতার আব্বাস নকভির। মেরঠের এসপি (শহর) অখিলেশ নারায়ণ সিংহের মন্তব্য সম্পর্কে তিনি বলেছেন, ‘‘অভিযোগ যদি সত্যি হয়, তা অত্যন্ত নিন্দনীয়। ওই এসপি-র বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।’’

Advertisement

সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের (সিএএ) বিরুদ্ধে বিক্ষোভে গত ২০ ডিসেম্বর উত্তাল হয়ে উঠেছিল মেরঠের লিসারি গেট অঞ্চল। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে সেখানে গিয়েছিলেন অখিলেশ। ওই দিনই সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছিল মিনিট দুয়েকের একটি ভিডিয়ো। তাতে তিন যুবকের উদ্দেশে অখিলেশকে বলতে শোনা যায়, ‘‘যারা কালো-হলুদ ফেট্টি বেঁধে রেখেছে, তাদের বলো পাকিস্তানে চলে যেতে। খাবে এখানকার আর গুণগান করবে অন্য দেশের?’’ তিনি ওই যুবকদের রীতিমতো শাসিয়ে ছিলেন, ‘‘প্রত্যেক বাড়ির মানুষকে জেলে পাঠাব। শেষ করে দেব সবাইকে।’’

ভিডিয়োটি প্রকাশ্যে আসতেই সুপারের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থার দাবি তোলেন বিরোধীরা। কার্যত সেই সুরেই নকভি বলেছেন, ‘‘পুলিশ হোক বা জনতা— কোনও পক্ষের সন্ত্রাসই মেনে নেওয়া যায় না। কোনও গণতান্ত্রিক দেশ তা মেনে নিতে পারে না। ওই পুলিশ অফিসারের বিরুদ্ধে অবিলম্বে ব্যবস্থা নেওয়া হোক।’’ স্থানীয় জনতা থেকে বিরোধী পক্ষ— সকলেরই অভিযোগ, ধরপাকড় চালিয়ে বহু নিরপরাধ মানুষকে গ্রেফতার করেছে যোগীর পুলিশ। ওই পুলিশি ধরপাকড়কে গত কাল প্রকাশ্যে সমর্থন করেন উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী। তা নিয়ে কেন্দ্রীয় সংখ্যালঘু বিষয়ক মন্ত্রী বলেন, ‘‘পুলিশের অবশ্যই এটা দেখা উচিত যে, নিরপরাধ ব্যক্তিরা যেন শাস্তি না-পান।’’

Advertisement

আরও পড়ুন: এনআরসিতে এনপিআর তথ্য! গুলিয়ে দিলেন রবিশঙ্করও

নকভির গলায় ভিন্ন সুর এই প্রথম নয়। অতীতে দেশ জুড়ে ‘জয় শ্রীরাম’ স্লোগানে গলা না-মেলানোয় হেনস্থা ও মারধরের যে-ঘটনা ঘটেছিল, তার বিরুদ্ধেও সরব হয়েছিলেন তিনি। বলেছিলেন, ‘‘জোর করে জয় শ্রীরাম বলানো যায় না। এটা আইনবিরুদ্ধ। দেশের আইন বলে, কাউকে দিয়ে জোর করে কিছু করানো যায় না।’’ ঘটনাচক্রে, আজই আর এক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধান বলেছেন, ‘‘যাঁরা ভারতমাতার জয় বলবেন, তাঁরাই ভারতে থাকবেন।’’

নকভির গলায় মাঝেমধ্যেই ভিন্ন সুর কেন?

জাতীয় রাজনীতি নিয়ে যাঁরা চর্চা করেন, তাঁদের একাংশের মতে, নকভির উপরে মুসলিম সমাজের চাপ রয়েছে। কারণ, বিজেপি-র অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নেতা তিনি। ফলে সংখ্যালঘু সমাজকে বার্তা দেওয়ার দায় রয়েছে তাঁর। বিজেপির একাংশের মতে, নকভি মুখ খুললে এক দিকে কিছুটা হলেও যেমন ক্ষত মেরামত হয়, তেমনই মুসলিম সমাজকে বার্তা দিয়ে ভারসাম্যের রাজনীতি রক্ষা করাও সম্ভব হয়। তা ছাড়া, সিএএ মুসলিম-বিরোধী এবং তাঁদের দেশ থেকে তাড়ানোর জন্য আইন আনা হয়েছে বলে গোড়া থেকেই প্রচার চালাচ্ছেন বিরোধীরা। সেখানে ওই পুলিশ অফিসারের এই ধরনের মন্তব্যে বিরোধীরা আরও প্রচারের হাতিয়ার পাবে বলেই মনে করছেন বিজেপি শীর্ষ নেতৃত্ব। সেই কারণেই পরিস্থিতি সামলাতে তড়িঘড়ি নকভিকে মাঠে নামানো হয়।

আরও পড়ুন: মোদীর ‘মন কি’ উদ্বেগ ছাত্রযুবরাই!

নকভি ছাড়াও ক্ষত মেরামতিতে নামেন উত্তরপ্রদেশের উপমুখ্যমন্ত্রী কেশবপ্রসাদ মৌর্য। বলেন, ‘‘অখিলেশ যা বলেছেন, তা সব মুসলিমদের জন্য নয়। যারা ভারত-বিরোধী স্লোগান দিচ্ছিল এবং পাথর ছুড়ছিল, তাদেরই ওই হুমকি দেওয়া হয়েছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন