National news

সপা নাটক, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পিছু হটে অখিলেশকে ফেরালেন মুলায়ম

বাবা-ছেলের দড়ি টানাটানিতে পিছু হটলেন বাবা। বহিষ্কারের ২৪ ঘণ্টা কাটতে না কাটতেই সিদ্ধান্ত ফিরিয়ে পুত্র অখিলেশকে দলে ফিরিয়ে নিলেন মুলায়ম সিংহ যাদব। দলে ফিরিয়ে নেওয়া হয় রামগোপাল যাদবকেও।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

শেষ আপডেট: ৩১ ডিসেম্বর ২০১৬ ১৪:১০
Share:

ফাইল চিত্র।

বাবা-ছেলের দড়ি টানাটানিতে চাপের মুখে পিছু হটলেন বাবা। বহিষ্কারের ২৪ ঘণ্টা কাটতে না কাটতেই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে পুত্র অখিলেশকে দলে ফিরিয়ে নিলেন মুলায়ম সিংহ যাদব। দলে ফিরিয়ে নেওয়া হয় রামগোপাল যাদবকেও। শনিবার সকালে অখিলেশের ডাকা বৈঠক শেষে আপাতদৃষ্টিতে তাঁর দিকেই পাল্লা খানিকটা ঝুঁকে ছিল বলে মনে করছিল রাজনৈতিক মহল। বেলা বাড়তে সেটাই সত্যি প্রমাণিত হল।

Advertisement

এ দিন তাঁর ঘোষিত সম্ভাব্য প্রার্থীদের নিয়ে একটি বৈঠক ডেকেছিলেন অখিলেশ। এই বৈঠকে মন্ত্রী-বিধায়কদের যোগদানের সংখ্যার গরিষ্ঠতার উপরেই নির্ভর করছিল অখিলেশের সপা-ভবিষ্যৎ। বৈঠকে পাল্লা তাঁর দিকেই ভারী থাকে। কারণ, যে ২৩৫ জনের প্রার্থী তালিকা অখিলেশ ঘোষণা করেছিলেন, বৈঠকে সেই তালিকার ২০৭ জন বিধায়কই উপস্থিত হন। বৈঠক শেষে উপস্থিত বিধায়কের নামের তালিকা নিয়ে আজম খানের সঙ্গে বাবা তথা পার্টি সুপ্রিমো মুলায়ম সিংহ যাদবের বাসভবনে যান অখিলেশ। পার্টিতে তাঁর সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমানের সঙ্গে মুলায়মের কাছে বেশ কিছু দাবিও রাখেন তিনি। দলের স্বার্থরক্ষার্থেই যে তাঁর এই পদক্ষেপ মুলায়মকে বোঝান। তাঁর প্রতি ভরসা রাখার আবেদনের সঙ্গে তিনি অমর সিংহকে দল থেকে বের করে দেওয়ার অনুরোধও জানান। বৈঠক শেষে অখিলেশ বেরিয়ে চলে গেলেও মুলায়মের কাছে থেকে যান আজম খান। এর কিছু ক্ষণ পরেই নিজের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে নেন মুলায়ম। অখিলেশ এবং রামগোপাল যাদবকে দলে ফিরিয়ে নেন। বাতিল করে দিয়েছেন তাঁর ঘোষিত প্রার্থী তালিকাও। জানান, অখিলেশের সঙ্গে আলোচনা করেই পরবর্তী প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করবেন তিনি। এর পিছনে একটা বড় ভূমিকা রয়েছে আজম খানের। দলে অখিলেশের সমর্থন দেখে নেহাতই চাপে পড়েই মুলায়মের এই সিদ্ধান্তে বদল বলে মনে করছেন রাজনৈতিক মহল।

কারণ, অখিলেশের সংখ্যা গরিষ্ঠতায় পিছু না হটলে পরবর্তী ধাপে দলের রাশ হাতে চেয়ে রাজ্যপালের কাছে যে আবেদন করতে পারতেন তিনি, তা বেশ ভাল করেই জানতেই মুলায়ম। তাতে মুলায়মের জন্য হিতে-বিপরীত ফলও ঘটতে পারত। মুলায়মকেই দল থেকে বেরিয়ে যেতে হতে পারত। তার উপরে, জানুয়ারিতেই ভোটের নির্ঘণ্ট ঘোষণা করার কথা নির্বাচন কমিশনের। তার আগে দলে এমন একটা ভাঙন থেকে যে আখেরে বিজেপি, বসপাই ফায়দা লুঠবেন তা বেশ ভাল করেই বুঝতে পারছিলেন মুলায়ম-শিবির। তাই অখিলেশকে না চটিয়ে সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে নেওয়াই শ্রেয় মনে করেন। যাদব পরিবারের রাজনীতিতে এই নাটকীয় মোড়ের সঙ্গে ফের কংগ্রেসের সঙ্গে সপার জোটের সম্ভাবনা উজ্জ্বল হয়ে উঠল। তবে অখিলেশের দাবি মেনে অমর সিংহকে দলে থেকে বহিষ্কার করা হবে কি না তা এখনও জানাননি পার্টি সুপ্রিমো।

Advertisement


বহিষ্কারের পর মুলায়মের বাসভবনের সামনে অখিলেশ সমর্থকদের বিক্ষোভ। ছবি: পিটিআই।

কিন্তু কেন অমর সিংহকে বহিষ্কারের দাবি রাখলেন অখিলেশ?

রাজনৈতিক মহলের মতে, যাদব পরিবারের এই অন্তর্দ্বন্দ্বের পিছনে অমর সিংহের একটা বড় ভূমিকা রয়েছে। সামনে না এলেও মুলায়মের দ্বিতীয় স্ত্রী সাধনার সঙ্গে মিশে তিনিই নাকি মুলায়ম এবং অখিলেশের মাঝে এই প্রাচীর তৈরি করছেন। এমনকী এমন জল্পনাও শোনা যায় যে, অখিলেশকে মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে সরানোর জন্য পরোক্ষে মুলায়ম পত্নী সাধনা এবং অপর্ণাকে মদত দিয়ে যাচ্ছেন তিনিই। যে কারণে, বহিষ্কারের পর অখিলেশের পরিবর্তে উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে অপর্ণার নাম উঠে আসার সম্ভাবনা দেখা গিয়েছিল। যার নেপথ্যেও ছিলেন ওই অমর সিংহই।

অপর্ণা হলেন মুলায়মের পুত্রবধূ। দ্বিতীয় স্ত্রী সাধনার ছেলে প্রতীকের স্ত্রী। প্রতীক অবশ্য সক্রিয় রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত নন। কিন্তু স্ত্রী অপর্ণা বছর খানেক আগে থেকেই রাজনৈতিক ময়দানে লড়ছেন। লখনউয়ের আসনের জন্য লড়েছেন তিনি। এ বারেও নাকি মুলায়মের প্রার্থী তালিকায় লখনউয়ের আসনটি পুত্রবধূর জন্যই রাখা হয়েছে। অমর সিংহের কৌশলে ভর করে আস্তে আস্তে নাকি সে দিকেই এগোতে চাইছেন অপর্ণা। সক্রিয় রাজনীতিতে না থেকেও তাঁকে পুরোদস্তুর মদত দিয়ে যাচ্ছেন প্রতীকও। অপর্ণা আবার বিজেপির সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখে চলেন বলে পরিচিত। কারণ, বেশ কিছু ক্ষেত্রে বিজেপির হয়ে কথা বলতে দেখা গিয়ে তাঁকে। মণিপুরে যাদব পরিবারের একটি বিয়ের অনুষ্ঠানে নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে সেলফিও তুলেছিলেন তিনি।

তবে শুধু অপর্ণাই নন, রাজনৈতিক মহলের একাংশের দাবি, মুখ্যমন্ত্রীর আসনের দিকে তাকিয়ে রয়েছেন মুলায়ম পত্নী সাধনাও। এর পিছনেও রয়েছেন অমর সিংহ। মাস খানেক আগে অখিলেশ-ঘনিষ্ঠ দলের এক বিধায়ক নাকি মুলায়মকে চিঠি দিয়ে বিষয়টি জানান। স্ত্রী সাধনা যে ভিতরে ভিতরে মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছেন তা ওই চিঠিতে বেশ স্পষ্ট করেই উল্লেখ করেছিলেন তিনি। যাতে বেশ বিরক্তই হয়েছিলেন মুলায়ম।

অখিলেশ তাই সমাজবাদী পার্টিতে তাঁর মূল ‘কাঁটা’ অমর সিংহকেই আগে উপড়ে ফেলতে চাইছেন। সে কারণেই সংখ্যা গরিষ্ঠতা দেখিয়ে অমর সিংহকে দল থেকে বের করে দেওয়ার জন্য বাবাকে চাপ দেন।

আরও পড়ুন: অখিলেশ যাদবকে পার্টি থেকেই বের করে দিলেন যাদব কুলপতি মুলায়ম

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন