ভাঙনের আশায় রাহুল

অখিলেশকে সামাল দিতে ব্যস্ত মুলায়ম

উত্তরপ্রদেশে মুলায়ম সিংহ যাদব ও অখিলেশের দ্বন্দ্বকে কেন্দ্র করে রাজনীতির ছবিটা ক্রমেই জটিল হয়ে উঠছে। সমাজবাদী পার্টি সূত্র বলছে, প্রথমে মনে হয়েছিল যে বাবা-ছেলের সংঘাতটি একটি সাজানো ঘটনা। কিন্তু ক্রমশ পরিষ্কার হয়ে গিয়েছে, সাজানো সংঘাত নয় এটা।

Advertisement

জয়ন্ত ঘোষাল

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২০ অক্টোবর ২০১৬ ০৩:২৭
Share:

উত্তরপ্রদেশে মুলায়ম সিংহ যাদব ও অখিলেশের দ্বন্দ্বকে কেন্দ্র করে রাজনীতির ছবিটা ক্রমেই জটিল হয়ে উঠছে। সমাজবাদী পার্টি সূত্র বলছে, প্রথমে মনে হয়েছিল যে বাবা-ছেলের সংঘাতটি একটি সাজানো ঘটনা। কিন্তু ক্রমশ পরিষ্কার হয়ে গিয়েছে, সাজানো সংঘাত নয় এটা। রাজনীতির একটা নিজস্ব গতি আছে। এবং তার জেরেই ভোটের আগে জট বাড়ছে সমাজবাদী পার্টির সংসারে। দ্বিতীয় স্ত্রী এবং পুত্রপ্রতিম অমর সিংহের হাত ধরে মুলায়ম যে ভাবে তাঁর ভাই শিবপাল যাদবকে মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী করার খেলায় নেমেছেন, মুখ্যমন্ত্রী অখিলেশ তাতে ক্ষুব্ধ। এতটাই চটেছেন যে, ভোটের মুখে দল ভেঙে বেরিয়েও যেতে পারেন। অখিলেশ শুধু নয়, সমাজবাদী পার্টির একটা বড়সড় অংশও দলে ভাঙন ধরাতে তৎপর। সেটা টের পেয়েই মুলায়ম গত কাল অখিলেশ এবং শিবপালকে নিয়ে বৈঠক করেছেন।

Advertisement

মুলায়ম নড়ে বসার আর একটি কারণ কংগ্রেস। অখিলেশের ক্ষোভের আঁচ উস্কে দিয়ে তাঁকে শিবিরে টানার চেষ্টায় নেমেছেন রাহুল গাঁধী। গত সপ্তাহে তিনি একটি গোপন বৈঠকও করেছেন অখিলেশের সঙ্গে। আনুষ্ঠানিক ভাবে কংগ্রেস এই বৈঠকের কথা না জানালেও দলের সূত্র বলছে, রাহুল অখিলেশকে প্রস্তাব দেন, যদি তিনি সমাজবাদী পার্টি ভেঙে আলাদা দল গড়েন, তবে কংগ্রেস তার শরিক হতে পারে। উত্তরপ্রদেশে মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসেবেও স্বীকার করে নিতে পারে অখিলেশকে।

নির্বাচন যত এগিয়ে আসছে, বিজেপি ততই তালাক, অযোধ্যা, পাকিস্তান— নানান বিতর্ক উস্কে দিয়ে মেরুকরণের রাজনীতিতে বেশি করে আক্রমণাত্মক হচ্ছে। ঠিক এই সময়ে সংখ্যালঘু ভোটকে সুসংহত করার লক্ষ্যেই কংগ্রেস এমন একটি প্রস্তাব দিয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। কংগ্রেস মুখপাত্ররা অবশ্য গোপন বৈঠকের কথা স্বীকার করছেন না। তার কারণ হল, সমাজবাদী পার্টি যে আদৌ ভাঙবে তার নিশ্চয়তা কোথায়? এই অবস্থায় প্রকাশ্যে সব কিছু বলার যুক্তিও নেই। এ সবই হল প্রাক-নির্বাচনী রণকৌশল।

Advertisement

উত্তরপ্রদেশ বিধানসভায় মোট আসন ৪০৪টি। সেখানে সমাজবাদী পার্টির সদস্য ২২৯। অখিলেশ আগামী মাসে মুলায়মের নামাঙ্কিত সন্দেশ-যাত্রা বের করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তিনি দেখাতে চান, সংখ্যাগরিষ্ঠ বিধায়ক তাঁর সঙ্গে আছেন। আবার বাবার নামে যাত্রায় বেরিয়ে তিনি মুলায়ম-অনুগামীদের একটি অংশকেও পাশে রাখতে চান। দলের বৃদ্ধতন্ত্র প্রথম থেকেই অমর সিংহের উপর ক্ষুব্ধ। তাঁদের অনেকেই অখিলেশের পাশে। পরিস্থিতি এ রকম ঘোরালো হয়ে যাওয়াতেই মুলায়ম কাল অখিলেশ ও শিবপাল যাদব, দুজনকে নিয়ে বৈঠকে বসেন। দলটা যাতে কিছুতেই না ভাঙে, তার জন্য পাল্টা চেষ্টা শুরু করেছেন তিনি।

রামগোপাল যাদব আর কিরণময় নন্দ মুলায়মকে এ কথাও বলেছেন যে, মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে অখিলেশের নাম অবিলম্বে ঘোষণা করে দেওয়া দরকার।

দিন কয়েক আগে অমর আর শিবপালের দিকে তাকিয়ে মুলায়ম সেই ঘোষণা না করাতেই পরিস্থিতি এত জটিল হয়ে উঠেছে। অখিলেশের ঘনিষ্ঠ কয়েক জন নেতা আবার মুলায়মকে বলছেন, অমর সিংহ বিজেপির ‘চর’। ওঁর ফাঁদে পা না দিতে। এই পরিস্থিতিতে মুলায়ম আগামী ৫ নভেম্বর দলের বৈঠক ডেকেছেন। সেখানেই অমরকে নিয়ন্ত্রণে রাখা ও অখিলেশের নেতৃত্বে দলকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার বার্তা দেওয়া হতে পারে।

কংগ্রেস সমাজবাদী পার্টির দিকে নজর দিয়েছে কিছুটা দেরিতে। সনিয়া গাঁধী প্রথমে মায়াবতীর সঙ্গে বোঝাপড়া করতে চেয়েছিলেন। সেই সূত্রে মায়াবতীর ঘনিষ্ঠ রাজ্যসভার সদস্য সতীশ মিশ্র সনিয়ার সঙ্গে দেখা করেন। সনিয়া নিজেও মায়াবতীর সঙ্গে ফোনে কথা বলেন। কিন্তু মায়াবতী সনিয়াকে বিনীত ভাবে জানিয়ে দেন, ভোটের আগে তিনি কোনও জোটে যাবেন না। প্রয়োজনে ভোটের পর ভাবা যেতে পারে। ঠিক যেভাবে উত্তরাখণ্ডে তিনি সমর্থন জানিয়েছেন কংগ্রেসকে। রাহুল এর পরে সনিয়াকে বোঝান, উড়তে থাকা দু’টো বনের পাখির চেয়ে ধরা পড়া একটি পাখি বেশি কাজে আসতে পারে। ভোটের পর কী হবে, সেটি তখনই ঠিক করা হবে। ভোটের আগেই যদি সমাজবাদী পার্টি ভাঙে, তখন ভাঙা দলের সঙ্গে বোঝাপড়া করে নেওয়া উচিত কংগ্রেসের। তার জন্য হোমওয়ার্ক করাটাই হবে বুদ্ধিমানের কাজ।

অখিলেশের সামনে বিকল্প এখন দু’টি। এক, দল না ভেঙে ভোট করা, প্রয়োজনে অমর সিংহের দাপট মেনে নিয়েও। দুই, দল ভেঙে রাহুল গাঁধী, অজিত সিংহদের সঙ্গে জোট বাঁধা। বাবার পরামর্শ না রাহুলের হাতছানি, অখিলেশ কীসে সাড়া দেবেন, সময় বলবে সেটা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন