লোকসভায় মুলায়ম সিংহ যাদব।—ছবি পিটিআই।
পাশে সনিয়া গাঁধী, বিরোধী দলের অন্য নেতারা। উল্টো দিকে ট্রেজারি বেঞ্চে বসে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। লোকসভা ভোটের আগে শেষ দিনের বক্তৃতা। আর এই সময়েই মুলায়ম সিংহ যাদব বিরোধীদের চরম অস্বস্তিতে ফেলে নরেন্দ্র মোদীকেই ফের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেখতে চাইলেন।
লোকসভার সব সদস্যই যাতে ভোটে জিতে ফিরে আসেন, সেই শুভেচ্ছা জানিয়ে সাধারণ ভাবেই বক্তৃতা করছিলেন সমাজবাদী পার্টির নেতা। এর মধ্যে এতটাই বেসুরো গাইলেন যে শাসক-বিরোধী সকলেই অবাক। মোদীর উদ্দেশে মুলায়ম বলেন, ‘‘শুভেচ্ছা রইল মোদীজি। আপনিই আবার প্রধানমন্ত্রী হোন।’’ মুখে হাসি মোদীর। ট্রেজারি বেঞ্চ থেকে উঠল ‘জয় শ্রীরাম’ স্লোগান। নমস্কার বিনিময় করলেন মোদী-মুলায়ম। একেবারেই অপ্রস্তুত সনিয়া মুখ ঘুরিয়ে নিয়েছিলেন। পরে লোকসভায় মোদীও টেনে আনেন মুলায়মের নাম। বলেন, ‘‘অনেক কাজ বাকি। মুলায়মজি শুভেচ্ছা জানিয়েছেন, আমি কৃতজ্ঞ।’’ স্পিকার সুমিত্রা মহাজন মোদীকে বলেন, ‘‘আপনি তো মুলায়ম সিংহের আশীর্বাদ পেয়ে গেলেন।’’ মুলায়মের এমন কাণ্ড নিয়ে পরে প্রতিক্রিয়া জানান রাহুল গাঁধী। বলেন, ‘‘আজ উনি যা বললেন, তার সঙ্গে একমত নই। তবে সংসদীয় রাজনীতিতে মুলায়ম সিংহের গুরুত্ব অনেক। সেটাকে আমি সম্মান করি।’’
সমাজবাদী পার্টির নেতা অখিলেশ যাদবের পরিবারে আজ সকাল থেকেই অবশ্য ঘটনার ঘনঘটা। দিনের শুরুতেই প্রিয়ঙ্কা গাঁধী বঢরার প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়েছেন ভ্রাতৃবধূ অপর্ণা। যোগী আদিত্যনাথ মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পরে ফুল হাতে তাঁর সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন অপর্ণা। আজ যদিও তাঁর মুখে ছিল প্রিয়ঙ্কার প্রশংসা। অপর্ণা বলেন, ‘‘প্রিয়ঙ্কাজির রাজনীতিতে আসাকে স্বাগত জানাচ্ছি। মনে আছে, কংগ্রেস উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসেবে শীলা দীক্ষিতের নাম ঘোষণা করেছিল। সে দিন যদি প্রিয়ঙ্কার নাম আসত, ব্যাপারটা অন্য রকম হতে পারত।’’ প্রিয়ঙ্কাকে নিয়ে এমনিতেই টেনশনে রয়েছেন অখিলেশ। পরশু রাতে যোগী সরকার অখিলেশকে জানিয়ে দেয়, ইলাহাবাদে যাওয়ার অনুমতি মিলবে না। কিন্তু তার পরেই গত কাল অখিলেশ এমন সময়ে বিমানবন্দরে পৌঁছন যখন সেখানে প্রিয়ঙ্কার আসার কথা। প্রিয়ঙ্কার থেকে সংবাদমাধ্যমের নজর ঘোরাতেই তিনি এমন করেছেন বলে কংগ্রেসের একাংশ মনে করছে। আর আজই উত্তরপ্রদেশে মহান দলের নেতা কেশবদেব মৌর্যকে কংগ্রেসে নিয়ে আসেন প্রিয়ঙ্কা। তাঁর সামনেই কেশবদেব রাজ্যে মায়বতী-অখিলেশ জোটকে তুলোধোনা করেন।
পারিবারিক নাটকের পুনরাবৃত্তি চাপে ফেলে দিয়েছে অখিলেশকে। মুলায়ম যাতে শিবপাল-বিজেপির ফাঁদে না পড়েন, তা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই সতর্ক ছিলেন অখিলেশ। কিছু দিন আগে মুলায়মের জন্মদিনে বাবাকে সঙ্গে নিয়ে যান দলীয় দফতরে, কেক কাটেন। শিবপাল জন্মদিনের অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিলেন। কিন্তু অখিলেশ মুলায়মকে হাতছাড়া করেননি। কিন্তু আজ বাবার মন্তব্যে প্রতিক্রিয়া হয়েছে লখনউ পর্যন্ত। এসপি নেতারা মুলায়মের মন্তব্য থেকে নিজেদের দূরত্ব তৈরি করে ব্যাপারটা লঘু করে দেখাতে চেয়েছেন। তবে ঘরোয়া ভাবে কংগ্রেস বলছে, মুলায়মের কথায় বোঝা গেল, এসপি-বিজেপির সম্পর্ক কতটা গভীরে।