পরনে অতি সাধারণ সাদা পাঞ্জাবি, পায়ে আরও সাধারণ চটি, কাঁধে ঝোলা ব্যাগ, টাকমাথা আর এক মুখ এলোমলো কাঁচা-পাকা দাড়ি। রোগা-পাতলা মানুষটা বৃহস্পতিবার যখন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নতুন মন্ত্রিসভার ৫৬তম সেনা হিসেবে শপথ নিতে মঞ্চে উঠলেন, রাইসিনা চত্বর তখন উল্লাসে ফেটে পড়ছে। হাততালি দিয়ে তাঁকে অভ্যর্থনা জানালেন স্বয়ং মোদী, অমিত শাহ, রাজনাথ সিংহেরা।
তিনি প্রতাপচন্দ্র ষড়ঙ্গী। ওড়িশায় দু’দফার বিজেপি বিধায়ক ছিলেন। থাকেন কুঁড়েঘরে। ‘ওড়িশার মোদী’ নামে পরিচিত প্রতাপচন্দ্র প্রথম বার বালেশ্বর লোকসভা কেন্দ্র থেকে নির্বাচনে জিতেই ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প এবং পশুপালন, ডেয়ারি ও মৎস্য মন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পেয়েছেন। ওড়িয়া ও সংস্কৃত ভাষায় পারদর্শী প্রতাপ সমাজসেবার জন্য গোটা রাজ্যে পরিচিত নাম। আদিবাসী শিশুদের জন্য অন্তত ১০০টি স্কুল চালু করেছেন তিনি। ভোটের আগে সাইকেলে চেপে প্রত্যন্ত এলাকায় প্রচারে গিয়েছেন। তাঁকে নিয়ে উৎসাহের খামতি নেই নেটিজেনদের। শপথগ্রহণের আগের দিন স্রেফ একটি ঝোলা ব্যাগ নিয়ে তাঁর দিল্লি আসার ছবি ভাইরাল হয়েছে।
রাতারাতি প্রচারের আলোয় এসে পড়া মানুষটির অতীত ঘাঁটলে অবশ্য ‘অপ্রিয়’ কিছু তথ্যও উঠে আসছে। ১৯৯৯ সালে বালেশ্বরে অস্ট্রেলীয় মিশনারি গ্রাহাম স্টেইনস ও তাঁর দুই শিশুপুত্রকে পুড়িয়ে মারার ঘটনায় নাম জড়িয়েছিল বজরং দলের। সেই সময়ে বজরং দলের রাজ্য সভাপতি ছিলেন প্রতাপ। মূল অভিযুক্ত দারা সিংহের যাবজ্জীবন জেল হলেও তদন্তে রেহাই পেয়ে যায় বজরং দল। প্রতাপ এই ঘটনার সঙ্গে যাবতীয় যোগ অস্বীকার করেছিলেন। তবে তাঁকে পাল্টা জেরাও করেননি সরকারি আইনজীবী। ২০০২ সালে ওড়িশার বিধানসভা ভবনের সামনে ভাঙচুরের অভিযোগে গ্রেফতার হন আরএসএসের এই একনিষ্ঠ কর্মী। দাঙ্গা, অগ্নিকাণ্ড, সরকারি সম্পত্তি নষ্ট করার অভিযোগে মামলা হয় তাঁর বিরুদ্ধে।
শুক্রবার প্রতাপ অবশ্য সব অভিযোগই অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘‘সব অভিযোগই মিথ্যা। আমি ঘুষ আর দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছি বলে অনেকের শত্রু হয়ে গিয়েছি। পুলিশ ইচ্ছে করে আমাকে এই সব মামলায় জড়িয়েছে। বেশির ভাগ অভিযোগই ভুল প্রমাণিত হয়েছে। বাকিগুলিও অচিরেই হবে।’’