গোয়ার নৈশক্লাবের সেই নর্তকী। ছবি: সংগৃহীত।
মঞ্চে তখন চলছিল ‘শোলে’ ছবির ‘মেহবুবা ও মেহবুবা’ গান। গানের তালে তালে নাচছিলেন কাজ়াখস্তানের নর্তকী। আসর যখন বেশ জমে উঠেছে, তখনই আচমকা মঞ্চের পিছনে আগুনের হলকা নজরে আসে দর্শকদের। সঙ্গে ধোঁয়া। পরমুহূর্তেই গান থেমে যায়। মঞ্চে থাকা শিল্পীরা কিছু বুঝে ওঠার আগেই বেরোনোর জন্য হুড়োহুড়ি পড়ে যায় গোটা হলঘরে। সকলে প্রাণভয়ে ছুটোছুটি শুরু করে দেন। এ বার গোয়ার নৈশক্লাবের সেই অভিজ্ঞতা প্রকাশ্যে আনলেন কোনও মতে প্রাণে বেঁচে যাওয়া সেই নর্তকী।
অগ্নিকাণ্ডের সময় মঞ্চে নাচছিলেন কাজ়াখস্তানের পেশাদার নৃত্যশিল্পী ক্রিস্টিনা। সংবাদমাধ্যম ‘ইন্ডিয়া টুডে’কে ক্রিস্টিনা জানিয়েছেন, নাচের মাঝে আচমকা হইচই শুরু হয়ে যায়। কী করবেন, প্রথমে কিছুই বুঝে উঠতে পারছিলেন না। নৈশক্লাবের এক কর্মীর তৎপরতায় কোনও মতে বেরোনোর রাস্তা খুঁজে পান তিনি। ক্রিস্টিনার কথায়, ‘‘রাতের দ্বিতীয় নৃত্য পরিবেশন করছিলাম। হঠাৎ ক্লাবে আগুন লেগে যায়। গান বন্ধ করে দেওয়া হয়। শুরুতে কিছুই বুঝতে পারছিলাম না কী হয়েছে। সকলের মতো আমিও বেরোনোর পথ খুঁজতে শুরু করে দিই!’’
শনিবার রাতের কথা মনে পড়লেও শিউরে উঠছেন এক সন্তানের মা ওই যুবতী। আগুন লাগার সময় তাঁর নাচের সেই ভিডিয়ো ইতিমধ্যেই সমাজমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে (ভিডিয়োর সত্যতা যাচাই করেনি আনন্দবাজার ডট কম)। সেই মুহূর্তের কথা বলতে গিয়ে গলা ধরে আসে ক্রিস্টিনার। তিনি বলেন, ‘‘আমি অঝোরে কাঁদছিলাম। সারা শরীর কাঁপছিল। আমি যে বেঁচে আছি, এটুকুতেই আমি কৃতজ্ঞ।’’
ওই নর্তকীর কথায়, নৈশক্লাবের কর্মীরা যুদ্ধকালীন তৎপরতায় অতিথিদের বার করে আনার চেষ্টা করছিলেন। মঞ্চস্থ সঙ্গীতশিল্পীরাও বেরোনোর পথ খুঁজতে শুরু করে দেন। এ সব ডামাডোলের মধ্যে স্বভাবত প্রথমেই পোশাক বদলানোর জন্য গ্রিনরুমের দিকে ছুটতে শুরু করেন ক্রিস্টিনা। সে সময় একজন ক্রু সদস্য তাঁর পথ আটকান। নর্তকীর কথায়, ‘‘প্রথমেই আমার মনে হয়েছিল, পোশাক বদলানো দরকার। কিন্তু ওই কর্মী আমাকে বলেন, ওদিকে যেও না। ওই দিকে ততক্ষণে আগুন ছড়িয়ে পড়েছিল। ওই কর্মীর জন্যই প্রাণে বেঁচে যাই আমি।’’
গোয়ার বাগা সমুদ্রসৈকতের কাছে আরপোরায় জনপ্রিয় নৈশক্লাব বির্চে। শনিবার রাত ১২টার পর সেখানে আচমকা আগুন লেগে যায়। গোয়া পুলিশ জানিয়েছে, অগ্নিকাণ্ডে এখনও পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা ২৫। মৃতদের মধ্যে চার জন পর্যটক রয়েছেন। এ ছাড়া, ১৪ জন ক্লাবেরই কর্মী। বাকি সাত জনের পরিচয় এখনও জানা যায়নি। ঘটনায় শোকপ্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। নিহতদের পরিবার পিছু দু’লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণের ঘোষণা করেছেন তিনি। আহতদের ৫০ হাজার টাকা করে আর্থিক সাহায্যের কথাও জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। ঘটনায় শোকপ্রকাশ করেছেন গোয়ার মুখ্যমন্ত্রী প্রমোদ সবন্ত। সব রকম সাহায্যের আশ্বাসও দিয়েছেন তিনি। ঘটনায় ম্যাজিস্ট্রেট পর্যায়ের তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যেই ক্লাবের জেনারেল ম্যানেজার-সহ তিন জনকে গ্রেফতারও করেছে পুলিশ।