রাহুল গাঁধী।
অক্ষির দাপটে দীর্ঘক্ষণ ধরে কচ্ছের আকাশে চক্কর কাটল হেলিকপ্টারটা। মাটিতে অপেক্ষায় থাকা রঙচঙে জনতা কিন্তু একটুও অধৈর্য না হয়ে ঠায় দাঁড়িয়ে রইল। কপ্টার থেকে রাহুল গাঁধী মাটিতে পা রাখতেই ভিড় ফেটে পড়ল উল্লাসে। সভায় নিয়ে যাওয়ার জন্য রাহুলকে তোলা হল উটের গাড়িতে। পিছনে জনতা। ওই অবস্থাতেই রাহুল গেলেন কচ্ছের আনজারে জনসভায়।
সদ্য গতকাল কংগ্রেসের সভাপতি পদে মনোনয়ন পেশ করেছেন রাহুল। আজ দিল্লিতে কংগ্রেসের তরফে বলা হল, সভাপতি পদের দৌড়ে রাহুল একাই। ফলে সামনের সোমবার নাম প্রত্যাহারের শেষ দিনেই আনুষ্ঠানিক ভাবে সভাপতি হিসেবে রাহুলের নাম ঘোষণা করবে কংগ্রেস। সেই উৎসাহটাই উপস্থিত জনতার মধ্যে ছড়িয়ে দিতে পেরেছিলেন কংগ্রেসের স্থানীয় নেতা-কর্মীরা। ফলে প্রতিকূল আবহাওয়াতেও মিইয়ে যায়নি সভার মেজাজ।
সভার এমন চেহারা দেখে রাহুল বক্তৃতা শুরুই করলেন একটু অন্য ভাবে। গল্পের মেজাজে বললেন, ‘‘কাল রাতে বোন (প্রিয়ঙ্কা) এসেছিল বাড়িতে। রান্নাঘরে গিয়েই অবাক। বলল, এ সব কী? রান্নাঘর ভর্তি খাকরা, আচার, বাদাম— সব গুজরাতি খাবারে ভর্তি!’’ লাজুক গলায় কংগ্রেসের হবু সভাপতি বললেন, ‘‘গত দু’মাসে আপনারা আমার অভ্যাস বদলে দিয়েছেন! ফলে ওজনও বেড়েছে। কিন্তু তার জন্য ধন্যবাদ।’’ জনতার মধ্যে হাসি আর হাততালির ঝড়।
আরও পড়ুন: পিছিয়ে গেল শুনানি, রাম রাজনীতি গুজরাত জুড়ে
গুজরাত ভোটের মুখে রাহুলের এই ক্রমবর্ধমান জনপ্রিয়তাই সবথেকে চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছেন নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহদের। এবিপি নিউজ-সিএসডিএসের সমীক্ষাও বলছে, অগস্ট মাসে নিজের রাজ্য গুজরাতে মোদীর জনপ্রিয়তা ছিল ৮২ শতাংশ। অক্টোবরে তা কমে ৬৭ এবং নভেম্বরে ৬৪ শতাংশে ঠেকেছে। তিন মাসে কমেছে ১৮ শতাংশ! তুলনায় রাহুলের জনপ্রিয়তা বাড়তে বাড়তে এখন ৫৭ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। কংগ্রেস কর্মীরা বলছেন, সব ক্ষেত্রেই তো ‘কাঁটে কা টক্কর’!
সেটা বোঝাচ্ছেন মোদীও। রাহুলকে খোঁচা দিতে আজ তাঁর লোকসভা কেন্দ্র অমেঠীর নগর পঞ্চায়েতে জয়ী বিজেপি নেত্রী চন্দ্রমা দেবীর ফটো টুইটারে দিয়ে লিখেছেন, ‘‘অমেঠীর অনুন্নয়ন নিয়ে ক্ষোভ বুঝতে পারি।’’ সকালেই উত্তরপ্রদেশের পুরভোটে জেতা প্রার্থীদের নিজের বাসভবনে ডেকে বৈঠক করেছেন। এই জয়ীদের পাঠানো হচ্ছে গুজরাতের প্রচারে। সুপ্রিম কোর্টে রামমন্দির শুনানি পিছিয়ে যাওয়ার পরে অমিত শাহের নেতৃত্বে গোটা বিজেপি রাহুলকে নিশানা করে মেরুকরণের রাজনীতির পারদ চড়াচ্ছেন।
যদিও রাহুল এ সবের পরোয়া করছেন না। বরং এ নিয়ে নানা ভাবে বিজেপিকেই কটাক্ষ করে যাচ্ছেন। আনজারের সভায় এ দিন রাহুল বলেন, ‘‘আমি মন দিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বক্তৃতা দেখেছি। ৬০ শতাংশ বক্তৃতা শুধু আমাকে আক্রমণ করতেই খরচ হয়! কিন্তু আসল প্রশ্নের উত্তর দেন না! গুজরাতের ভবিষ্যৎ নিয়ে কী ভাবনা, তা না বলে শুধু অন্য কথা বলেন!’’
কংগ্রেস নেতৃত্ব বলছেন, সভাপতি হয়ে রাহুলের প্রথম চ্যালেঞ্জ গুজরাত ভোটে ভাল ফল করা। তার পর এআইসিসি-র খোলনলচে বদলানো ও পরের বিধানসভাগুলি জেতা। তা হলেই ২০১৯-এ মোদীকে টক্কর দিয়ে তিনিই প্রধানমন্ত্রী মুখ।
আত্মবিশ্বাসী রাহুল নিজেও। আজ সভায় জনতাকে বললেন, ‘‘১৮ তারিখ ঢোল বাজাবেন। ওই দিন ফল বেরোবে।’’