সিএএ না-পড়েই সমর্থনে সদ্‌গুরু, বিক্ষোভ সামলাতে ‘গুরু’ শরণে মোদী

প্রধানমন্ত্রীর হয়ে সওয়াল করতে নেমে সদ্‌গুরুর যুক্তি, পুলিশ ‘সংযম’ দেখিয়েছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ৩১ ডিসেম্বর ২০১৯ ০৪:০৪
Share:

ছবি: এপি।

নয়া নাগরিকত্ব আইনের পিছনে কোনও অসৎ উদ্দেশ্য নেই, তা বোঝাতে সদ্‌গুরুর শরণাপন্ন হলেন নরেন্দ্র মোদী।

Advertisement

কিন্তু শুরুতেই গন্ডগোল।

প্রধানমন্ত্রী বললেন, নয়া নাগরিকত্ব আইন বুঝতে সদ্‌গুরুর ব্যাখ্যা শুনুন। আর সদ্‌গুরু বললেন, ‘‘আমি নয়া নাগরিকত্ব আইন পুরোটা পড়িনি।’’

Advertisement

এত দিন বিজেপির নেতা-মন্ত্রীরাই বিরোধী শিবির এবং বিক্ষোভে শামিল গোটা দেশের ছাত্রছাত্রীদের ‘উপদেশ’ দিচ্ছিলেন, নয়া নাগরিকত্ব আইন পড়ে দেখুন। যুক্তি ছিল, ছাত্রছাত্রীদের ভুল বোঝানো হয়েছে। তারা আইনে কী রয়েছে, না পড়েই রাস্তায় নেমে পড়েছে।

সেই ‘আইন না-পড়া’ বিক্ষোভকারীদের দাপটেই অবশ্য পাল্টা প্রচারে নামতে হয়েছে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীকে। তিনি আজ ‘আধ্যাত্মিক গুরু’ সদ্‌গুরু জগ্গী বাসুদেবের একটি ভিডিয়ো টুইট করেছেন। লিখেছেন, ‘‘সদ্‌গুরু সিএএ জলের মতো ব্যাখ্যা করেছেন, তা শুনে দেখুন।’’ বিরোধীদের কটাক্ষ, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী যে কতটা মরিয়া, তা বোঝা যাচ্ছে। অর্থনীতিবিদরা সমালোচনা করছিলেন বলে নোট বাতিলের গুণাগুণ ব্যাখ্যা করতে তিনি বলিউডের অভিনেতা-অভিনেত্রীদের নামিয়েছিলেন। এ বার তাঁরাও নারাজ। আবার তিনি নিজেও আইন বোঝাতে পারছেন না। তাই আধ্যাত্মিক গুরুকে দিয়ে নয়া নাগরিকত্ব আইন বোঝাচ্ছেন বলে বিরোধীদের দাবি।

আরও পড়ুন: গেরুয়া পরলেই যোগী হয় না, প্রিয়ঙ্কার কটাক্ষে পাল্টা আক্রমণে আদিত্যনাথেরও

সদ্‌গুরু জগ্গী বাসুদেব

অথচ প্রধানমন্ত্রীর প্রচারিত ভিডিয়োয় সদ্‌গুরু ২০ মিনিটের বেশি সিএএ-র গুণাগুণ ব্যাখ্যা করলেও প্রথমেই বলছেন, ‘‘আমি পুরো আইন পড়িনি। সংবাদপত্র পড়েছি, যা লেখালেখি হচ্ছে, সেগুলো পড়েছি।’’ যদিও সিএএ না পড়েই তিনি বলেছেন, ‘‘এই আইন সব দেশেই রয়েছে। এই আইনের প্রয়োজন রয়েছে।’’ আবার ছাত্রছাত্রীদের আইন না পড়েই রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ দেখানোর জন্য তিরস্কার করতেও ছাড়েননি। পড়ুয়াদের পাথরের খনির শ্রমিকের সঙ্গে তুলনা করে তাঁর মন্তব্য, ‘‘সবাই বলছে, পুলিশ বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢুকে পড়েছে। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়ারা তো পাথরের খনির শ্রমিকের মতো আচরণ করছে। সবাইকে লক্ষ্য করে পাথর ছুড়ছে।’’ তাঁর দাবি, এতটা প্রতিক্রিয়া হবে বলে সরকারের ধারণা ছিল না, তাই বেশি পুলিশ নামায়নি। ফলে পুলিশই মার খেয়েছে। কংগ্রেস নেত্রী প্রিয়ঙ্কা গাঁধী বঢরাকে এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তাঁর মন্তব্য, ‘‘পড়ুয়ারা প্রতিবাদ করছেন। তাঁরা শিক্ষিত। তাঁরা পড়ে দেখেছেন, কোনটা ঠিক, কোনটা বেঠিক। এ বার মিথ্যে প্রচারের অভিযান শুরু হবে।’’

সিএএ-এনআরসির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ শুরুর পর থেকে গোটা দেশে পুলিশের গুলিতে অন্তত ২৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর হয়ে সওয়াল করতে নেমে সদ্‌গুরুর যুক্তি, পুলিশ ‘সংযম’ দেখিয়েছে। গোলাগুলি ব্যবহার করেনি। না হলে আরও অনেক বেশি সংখ্যায় মৃত্যু হত। পুলিশের লাঠি চালানোকে কার্যত সমর্থন করে তাঁর মন্তব্য, ‘‘এক জন পাথর ছুড়েছে, অন্য জন ছোড়েনি। পুলিশের হাতে ভিড়ের মধ্যে দু’জনেই মার খাবে।’’ তরুণ-তরুণীদের এই ভিডিয়ো দেখার পরামর্শ দিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহও।

দিল্লিতে সিএএ-র বিরুদ্ধে আন্দোলনের পুরোভাগে থাকা সিপিআই (এমএল) নেত্রী কবিতা কৃষ্ণন বলেন, ‘‘এ বার প্রধানমন্ত্রী মরিয়া হয়ে রং নাম্বার করে ফেললেন। উনি তো আইনটাই পড়েননি। যাঁরা পড়াশোনা করছেন, সেই ছাত্রছাত্রীরা প্রতিবাদ করছেন। কিন্তু যাঁরা লেখাপড়াই করেননি, তাঁরাও বুঝছেন, সিএএ, এনআরসি হলে তাঁরা বিপদে পড়বেন।’’ কবিতার মতে, প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন, আধ্যাত্মিক গুরুদের নামালে শিক্ষিত মানুষের একাংশ প্রভাবিত হবেন। কিন্তু এ বার যাঁদের থেকে সমর্থন পাওয়া যাবে বলে তাঁর আশা ছিল, তাঁরাও সমর্থন করছেন না। বলিউডও তো রাস্তায় নেমে পড়েছে।

শুধু জগ্গী বাসুদেবের ভি়ডিয়ো টুইট করাই নয়, নিজের একটি টুইটার হ্যান্ডল থেকে ‘#ইন্ডিয়াসাপোর্টসিএএ’ দিয়ে সমর্থনের আর্জি জানিয়ে মোদী লিখেছেন, ‘‘এই আইন সমর্থন করুন, কারণ এটা অত্যাচারিত শরণার্থীদের নাগরিকত্ব দেওয়ার আইন, কারও নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়ার জন্য নয়।’’ নমো অ্যাপ থেকে ‘#ইন্ডিয়াসাপোর্টসিএএ’ টুইটারে প্রচার অভিযান শুরু হয়েছে। সিএএ-র পক্ষে প্রচারের জন্য সরকার নানারকম ভিডিয়ো, গ্রাফিক তৈরি করেছে। বিজেপি-র নেতা-মন্ত্রীরা তা নিয়ে প্রচারে নেমে পড়েছেন। সিএএ নিয়ে বিজেপি ‘জনজাগরণ অভিযান’-এ নামছে। টুইটারে পাল্টা #ইন্ডিয়াডাজনটসাপোর্টসিএএ দিয়ে পাল্টা প্রচারও শুরু হয়েছে।

এর আগে অযোধ্যার রামমন্দির নিয়ে ঐকমত্য গড়ে তুলতে শ্রী শ্রী রবিশঙ্করের উপর ভরসা করেছিল বিজেপি-আরএসএস। নোট বাতিলের সমর্থনে দাঁড়িয়েছিলেন রামদেব, সদ্‌গুরুরা। সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী প্রশান্ত ভূষণ বলেন, ‘‘আসারাম, রাম রহিম, নিত্যানন্দের মতো ধর্ষণকারী জালিয়াতের সামনে নতজানু হয়ে রাজনৈতিক সাহায্য চাওয়ার পরে মোদী এ বার সিএএ-এনআরসি নিয়ে সদ্‌গুরুর দ্বারস্থ হয়েছেন।’’ প্রসঙ্গত, স্ত্রীয়ের অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনা থেকে শুরু করে নিজের ফাউন্ডেশনের কাজকর্ম নিয়ে একাধিক বিতর্কে জড়িয়েছেন সদগুরু।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement