নরেন্দ্র মোদী। ছবি: এএফপি।
বেকারি, ডোকলাম, হরিয়ানায় ধর্ষণ। ন’দিন আগে রাহুল গাঁধীর দেওয়া একটি বিষয়ও দাগ কাটেনি নরেন্দ্র মোদীর মনে। তাই রেডিওয় মাসিক ‘মন কি বাত’ অনুষ্ঠানে সে সব নিয়ে কথাই বললেন না প্রধানমন্ত্রী। ছুঁলেন না ‘পদ্মাবত’ বা কাশগঞ্জের হিংসার প্রসঙ্গও। কিন্তু তার পরেই দুর্নীতি দমনে নিজের ‘সাফল্য’ মেলে ধরতে প্রকাশ্য সভায় টেনে আনলেন লালু প্রসাদের জেলযাত্রার কথা।
বছরের প্রথম ‘মন কি বাত’ অনুষ্ঠানে কী বলা যায়, তা নিয়ে জনতার মত চেয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী। জবাবে রাহুল গাঁধী বেকারি, ডোকলাম, হরিয়ানায় ধর্ষণ প্রসঙ্গ টেনে বলেছিলেন, প্রধানমন্ত্রী সেগুলি নিয়ে নিজের ‘মনের কথা’ বলুন। কিন্তু রাহুলের সেই ‘পরামর্শ’ নিয়ে আলোচনার ধারেকাছেই গেলেন না মোদী। উল্টে ‘পদ্ম’ পুরস্কার নিয়ে পরোক্ষে কংগ্রেস জমানার স্বজনপোষণকে বিঁধলেন। শিবসেনার পরে চন্দ্রবাবু নায়ডুও জোট ছাড়ার হুমকি দেওয়ায় আর এক শরিক নীতীশ কুমারের তারিফ পর্যন্ত করলেন। আর এ সবের পরে এনসিসি-র অনুষ্ঠানে গিয়ে প্রকাশ্য সভায় দুর্নীতি প্রশ্নে বিঁধলেন নীতীশের মূল প্রতিপক্ষ লালুকে। এমনকী সেটিকেই মেলে ধরলেন নিজের সাফল্য হিসেবে।
এনসিসি-র এ দিনের অনুষ্ঠানে যুব ভোটারদেরই পাখির চোখ করেছেন মোদী। যে ভোট ক্রমশ হাতছাড়া হচ্ছে বলে দেখাচ্ছে বিভিন্ন সমীক্ষা। বললেন, ‘‘দুর্নীতি দমন নিয়ে অনেকেই হতাশ হন। ভাবেন, দুর্নীতি নিয়ে বড় বড় কথা হচ্ছে, কিন্তু বড় লোকেরা পার পেয়ে যাচ্ছেন। অথচ এই মুহূর্তে তিন জন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী জেলে পচছেন।’’ নাম না নিলেও এই তিন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী লালু প্রসাদ যাদব, জগন্নাথ মিশ্র আর হরিয়ানার ওমপ্রকাশ চৌটালার কথাই বলতে চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
দুর্নীতি প্রশ্নে মোদীর বক্তব্য শুনে বিকেলে প্রধানমন্ত্রীর সর্বদল বৈঠকে আসা আরজেডি সাংসদ জয়প্রকাশ নারায়ণ যাদব বলেন, ‘‘আরএসএসের এজেন্ডা চালাতে গোটা দেশে ভয়ের পরিবেশ তৈরি করা হচ্ছে। ষড়যন্ত্র করে জেলে পাঠানো হয়েছে লালু প্রসাদকে।’’ কংগ্রেসের এক নেতা বলেন, ‘‘বিরোধী নেতাদের জেলে পাঠিয়ে প্রধানমন্ত্রী নিজের ঢাক পেটাচ্ছেন। অথচ সাড়ে তিন বছরে বিজেপির কোনও নেতার দুর্নীতির বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ করলেন না! বরং সিবিআইকে কাজে লাগিয়ে বিজেপি নেতাদের বাঁচানো হচ্ছে! এর পরে কোন মুখে বিরোধীদের থেকে সাহায্যের আশা করেন তিনি?’’
ভোট যত এগিয়ে আসছে, বিজেপি বুঝতে পারছে বেকারি, কৃষক সমস্যা এবং অর্থনীতির বেহাল দশার জন্য বেশ ব্যাকফুটে দল। দুর্নীতি নিয়েই তাই এই মুহূর্তে তারা সরব হতে চাইছে। তাই মোদী আজ যুবকদের বুঝিয়েছেন, আধারের ফলে কী ভাবে দুর্নীতি ঠেকানো গেছে। যা শুনে কংগ্রেসের কটাক্ষ, ‘‘গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে নরেন্দ্র মোদী প্রায় রোজ আধারের বিরোধিতা করতেন। আর এখন আধারকেই অস্ত্র করছেন!’’