Narendra Modi

লগ্নি টানতে সওয়াল মোদীর, প্রশ্ন তুললেন বিরোধীরা

গন্তব্য হয়ে ওঠার মতো পোক্ত অর্থনীতি ভারতের কোথায়, সেই প্রশ্নে মোদীকে বিঁধেছেন বিরোধীরা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২০ ০৪:১১
Share:

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।—ছবি পিটিআই।

শুধু খরচ কমানোর হিসেব কষে নয়। করোনা উত্তর পৃথিবীতে কল-কারখানা গড়তে লগ্নির সিদ্ধান্ত নিতে হলে সবার আগে বিশ্বাসের নিক্তি মেপে নেওয়া উচিত বলে দাবি করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। যা শুনে অনেকেরই ধারণা, এর মাধ্যমে চিনের পরিবর্তে ভারতকেই বিনিয়োগের পছন্দের গন্তব্য করে তুলতে বিদেশি লগ্নিকারীদের ডাক দিয়েছেন তিনি। যদিও গন্তব্য হয়ে ওঠার মতো পোক্ত অর্থনীতি ভারতের কোথায়, সেই প্রশ্নে মোদীকে বিঁধেছেন বিরোধীরা।

Advertisement

এক লপ্তে বিপুল পরিমাণে পণ্য তৈরির পরিকাঠামো এবং কাছেই বন্দর সমেত ঝাঁ-চকচকে পরিবহণ- মূলত এই যুগলবন্দিতে চিনে পণ্য তৈরির গড় খরচ পৃথিবীর অন্যান্য প্রান্তের তুলনায় কম এবং সেকারণে অধিকাংশ বহুজাতিকের কারখানা ওই দেশে বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদদের একাংশ। বিভিন্ন সময়ে একই কথা কবুল করেছে আমেরিকা-সহ সারা দুনিয়ার শিল্পমহল। বৃহস্পতিবার মার্কিন-ভারত কৌশলগত অংশীদারির মঞ্চে (ইউএসআইএসপিএফ) সেই আমেরিকার শিল্পপতিদের উদ্দেশেই প্রধানমন্ত্রীর বার্তা, “পৃথিবী জোড়া জোগান-শৃঙ্খল (সাপ্লাই চেন) তৈরির জন্য কোন দেশে কারখানা করা হবে, সেই সিদ্ধান্ত আর শুধু খরচের ভিত্তিতে নেওয়া উচিত নয়। দেখা জরুরি, কোন দেশ কতটা বিশ্বস্ত, সেটাও। ... শিল্প এখন খুঁজছে নির্ভরযোগ্যতা এবং দীর্ঘমেয়াদি নীতি। ভারতে সবই আছে।”

বক্তৃতায় এক বারের জন্যও পড়শি মুলুকের নাম করেননি। কিন্তু চিনের বিকল্প হিসেবেই যে মোদী ভারতকে তুলে ধরছেন, তা মনে হয়েছে অনেকেরই। তাঁদের মতে, এক দলীয় শাসন থেকে শুরু করে গোড়ায় করোনা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা পর্যন্ত বিভিন্ন কারণে চিনের প্রতি বাকি বিশ্বের যে সন্দেহের দৃষ্টি রয়েছে, তার পাশে ভারতকে বিশ্বস্ত, লগ্নিবান্ধব দেশ বলে তুলে ধরতে চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। যে কারণে, আলাদা ভাবে উল্লেখ করেছেন এ দেশের গণতন্ত্র এবং বৈচিত্রের কথা।

Advertisement

আরও পড়ুন: নজর অর্থনীতিতে টানাই চ্যালেঞ্জ কংগ্রেসের

তবে শুধু গণতন্ত্রের প্রতি বিশ্বাসে বিনিয়োগের চিঁড়ে ভেজে না। সেই কারণে এমন বিপুল জনসংখ্যা এবং সীমিত সামর্থ্য নিয়েও করোনার প্রকোপে রাশ টানতে ভারত কতখানি সফল, তা ফলাও করে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। তুলে ধরেছেন জিএসটি, দেউলিয়া বিধি সমেত তাঁর জমানায় হওয়া সংস্কারের তালিকা। দাবি করেছেন, এ দেশে কর ব্যবস্থা স্বচ্ছ। আসতে চলেছে নতুন শ্রম আইন। জানিয়েছেন, পরিকাঠামো-রেল-কৃষি-খনন-প্রতিরক্ষার মতো প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রে বিদেশি লগ্নিকে স্বাগত জানাতে তৈরি তাঁর সরকার। আহ্বান জানিয়েছেন এ দেশের বিপুল বাজারের কথা মাথায় রেখে নিশ্চিন্তে টাকা ঢালার জন্য। তুলেছেন আত্মনির্ভর ভারতের প্রসঙ্গ।

কিন্তু কংগ্রেস-সহ বিরোধীদের প্রশ্ন, এত দিন এমন মঞ্চে ভারতকে দ্রুততম বৃদ্ধির দেশ হিসেবে তুলে ধরতেন প্রধানমন্ত্রী। প্রথম ত্রৈমাসিকে সেই বৃদ্ধির হার শূন্যের প্রায় সিকি শতাংশ নীচে তলিয়ে যাওয়ার পরে প্রথম বক্তৃতায় জিডিপি কিংবা বৃদ্ধির হারের প্রসঙ্গ তোলার সাহস কোথায় দেখালেন তিনি?

মোদীর দাবি, করোনার কামড়ে ক্ষতবিক্ষত অর্থনীতির স্বাস্থ্য ফেরাতে চাহিদা এবং জোগান উভয় দিকেই নজর দিচ্ছে কেন্দ্র। পাখির চোখ করা হচ্ছে দরিদ্রদের পাতে খাবার আর পরিযায়ী শ্রমিকদের হাতে কাজ দেওয়াকে। কিন্তু কংগ্রেস মুখপাত্র রণদীপ সিংহ সুরজেওয়ালার কটাক্ষ, চাহিদার ভাটা কাটাতেই তো কাজ হারানো কর্মী আর দরিদ্রদের হাতে নগদ দেওয়ার কথা নাগাড়ে বলা হচ্ছে। কিন্তু তা কানে তোলেনি সরকার। অথচ সরকার যে ২০ লক্ষ কোটি টাকার প্যাকেজ ঘোষণা করেছে, তা মূলত ঋণের প্রকল্পে ঠাসা। কত লোকের কাজ গিয়েছে আর পরিযায়ী শ্রমিকদের কী হাল, তা সকলের সামনে স্পষ্ট। তাঁদের প্রশ্ন, শুধু মুখে আশ্বাস দিয়ে কি বিদেশি লগ্নি টানা সম্ভব?

গত কয়েক মাসে ভারতে যে ভাবে পিপিই কিট কিংবা মাস্ক তৈরি বেড়েছে, তার কৃতিত্ব এ দেশের মানুষের ব্যবসা শুরুর স্বাভাবিক দক্ষতাকে দিয়েছেন মোদী। কিন্তু এই একই অনুষ্ঠানে মোদীর বক্তব্যের কিছুক্ষণ আগেই মহীন্দ্রা গোষ্ঠীর কর্ণধার আনন্দ মহীন্দ্রার আক্ষেপ, ভারতে নতুন ব্যবসা শুরুর প্রবণতা বাড়ছে। কিন্তু ঝুঁকি নিয়ে গোড়ায় পুঁজি ঢালার মতো লগ্নিকারী (ভেঞ্চার ক্যাপিটাল)নেই। সংস্থা সামান্য বড় করার বিনিয়োগও (সিড ক্যাপিটাল) এ দেশে বাড়ন্ত। তাঁর মতে, শুরুতে এর জন্য সরকার তহবিল তৈরি করে এগিয়ে এলে, তবেই পরে আগ্রহ দেখাবে বেসরকারি ক্ষেত্র। কিন্তু সরকারের তরফে তেমন উদ্যোগের ঘাটতি এখনও যথেষ্ট বলেই মনে তাঁর ধারণা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন