সরকারকে ঠেসে ধরার মতো হাতিয়ারের অভাব নেই। কিন্তু সবই ধামাচাপা পড়ে যাচ্ছে সুশান্ত সিংহ রাজপুতকে নিয়ে হইচইয়ে। কী করে এর মোকাবিলা করা যায়, হাতড়াচ্ছেন কংগ্রেস নেতারা।
অথচ গলা ফাটানোর মতো বিষয় অঢেল। আইএমএফ-এর মুখ্য অর্থনীতিবিদ গীতা গোপীনাথ জানিয়ে দিয়েছেন, এপ্রিল-জুন মাসে জি-২০ গোষ্ঠীভুক্ত দেশগুলির মধ্যে ভারতের জিডিপি সঙ্কোচনের মাত্রাই সবচেয়ে বেশি। তার পাশাপাশি, সরকারি পরিসংখ্যানই বলছে, ২০১৯-এ দেশে ১০ হাজারের বেশি চাষি আত্মহত্যা করেছেন। কিন্তু সংবাদমাধ্যমে শিরোনাম জুড়ে শুধুই সুশান্তের খবর!
কংগ্রেসের একাধিক নেতার দৃঢ় বিশ্বাস, অর্থনীতির দুর্দশার খবর ধামাচাপা দিয়ে সুশান্তের মৃত্যু-তদন্তের খবর নিয়মিত ভাবে শিরোনামে রেখে দেওয়ার পিছনে বিজেপি নেতৃত্বের সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা রয়েছে।
তাঁদের মতে, এ জন্য সিবিআই-ইডির মতো কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলিকে কাজে লাগানো হচ্ছে। তাঁরা তদন্তের খবর নিয়মিত ভাবে ফাঁস করছেন। অভিযুক্তদের হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাট থেকে তদন্তকারী অফিসারদের মন্তব্য, সটান সংবাদমাধ্যমে চলে আসছে। এআইসিসি-র এক নেতা বলেন, “বাস্তবে খতিয়ে দেখলেই বোঝা যাবে, সিবিআই-ইডি সুশান্তর মৃত্যু বা তাঁর টাকা নয়ছয় নিয়ে তেমন নতুন কোনও তথ্য পায়নি।”
তা হলে সে কথা তাঁরা জোর দিয়ে বলছেন না কেন?
সেখানেও রাজনীতির গেরো। কংগ্রেস নেতৃত্বের আশঙ্কা, এ নিয়ে মুখ খুললেই বিহার নির্বাচনে তাঁরা বিপাকে পড়ে যাবেন। এমনিতেই মহারাষ্ট্রের শিবসেনা-কংগ্রেস-এনসিপি জোট সরকার বিহারের ভূমিপুত্র সুশান্তের মৃত্যুর তদন্ত ঠিক মতো করছিল না বলে বিজেপি ও নীতীশ কুমার অভিযোগ তুলে রেখেছেন। এখন কংগ্রেস সুশান্তের মৃত্যুর তদন্ত ঘিরে হইচই নিয়ে প্রশ্ন তুলতে গেলেই বিজেপি, জেডিইউয়ের ফাঁদে নতুন করে পা দেওয়া হয়ে যাবে বলে তাঁদের আশঙ্কা।
এই অবস্থায় আজ কংগ্রেস জিডিপি সঙ্কোচনের প্রশ্নটি সামনে রেখে নির্মলা সীতারামনের পদত্যাগ দাবি করল। এপ্রিল-জুনে দেশের জিডিপি-র ২৩.৯% সঙ্কোচনের খবর সামনে আসার পরেই প্রশ্ন উঠেছিল, গোটা বিশ্বে আর কোনও দেশে কি অর্থনীতির এত খানি সঙ্কোচন হয়েছে? তখন অর্থ মন্ত্রকের শীর্ষ মহলের যুক্তি ছিল, কোভিড ও লকডাউনের জেরে আমেরিকা, ব্রিটেন, জাপানের মতো দেশেও সঙ্কোচন অনেক বেশি।
কিন্তু আইএমএফ-এর গীতা গোপীনাথ যে রেখচিত্র প্রকাশ করেছেন, তাতে দেখা যাচ্ছে, জি-২০ দেশগুলির মধ্যে ভারতেই জিডিপি-র সঙ্কোচন সবচেয়ে বেশি। ফলে দৈব দুর্বিপাকের কথা বলা নির্মলাকে এই ব্যর্থতার দায় নিতে হবে বলে দাবি তুলছে কংগ্রেস।
প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরমের বক্তব্য, “এ বার আর কোনও জল্পনার অবকাশ রইল না। আমাদের অর্থনীতির অবস্থাই সবচেয়ে খারাপ।” কংগ্রেস নেতা রণদীপ সিংহ সুরজেওয়ালা এও বলেন, ‘‘আর্থিক সংস্থাগুলির আশঙ্কা সত্যি করে গোটা বছরে যদি জিডিপি-র ১১ শতাংশ সঙ্কোচন হয়, তা হলে এ দেশের মানুষের বছরে মাথাপিছু আয় ১৫ হাজার টাকা কমে যাবে।”
রাহুল গাঁধী ফের নোট বাতিলের প্রসঙ্গও টেনে আনেন। অভিযোগ করেছেন, নরেন্দ্র মোদী নোট বাতিল করে দেশের চাষি, মজুর, ছোট দোকানদারদের উপরে হামলা চালিয়েছেন। এতে কালো টাকার সমস্যার কোনও সমাধান হয়নি। শুধু কোটিপতি শিল্পপতিদের মুনাফা হয়েছে। তাঁর অভিযোগ, “আমজনতা নোট বাতিলের পরে ব্যাঙ্কে যে টাকা জমা করেছিলেন, সরকার সেই টাকায় কোটিপতিদের ঋণ মকুব করে দিয়েছে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy