Narendra Modi

দুই নরেনকে মিশিয়ে মাত্রা ছাড়াল স্তুতি

বিহারের জন্য আর এক গুচ্ছ প্রকল্প ঘোষণার অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী নিত্যানন্দ রাইয়ের দাবি, এক নরেন্দ্র (দত্ত) যে একবিংশ শতকের ভারতের স্বপ্ন দেখেছিলেন, তা পূরণ করছেন আর এক নরেন্দ্র (মোদী)। 

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২০ ০৪:০৮
Share:

এমন পোস্টারই দেখা গেল নয়াদিল্লির অশোক রোডে। ছবি: সুকুমার ধাড়া

নরেন্দ্র নামের যোগসূত্রে ফের ‘এক বন্ধনীতে’ স্বামী বিবেকানন্দ এবং নরেন্দ্র মোদী!

Advertisement

গত ১৩ সেপ্টেম্বর বিহারের জন্য এক গুচ্ছ কেন্দ্রীয় প্রকল্পের উদ্বোধনী ভিডিয়ো-অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ প্রতিমন্ত্রী অশ্বিনী চৌবে বলেছিলেন, “…আমাদের গর্ব, নরেন্দ্র দত্ত (স্বামী বিবেকানন্দ) নরেন্দ্র মোদীর আত্মায় প্রবেশ করেছেন। ভারত একবিংশ শতাব্দীর অগ্রণী দেশ হয়ে ওঠার চৌকাঠে।” আর শুক্রবার সেই বিহারের জন্যই আর এক গুচ্ছ প্রকল্প ঘোষণার অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী নিত্যানন্দ রাইয়ের দাবি, এক নরেন্দ্র (দত্ত) যে একবিংশ শতকের ভারতের স্বপ্ন দেখেছিলেন, তা পূরণ করছেন আর এক নরেন্দ্র (মোদী)।

এ দিন ভোটমুখী বিহারের জন্য কোশী রেল মহাসেতু-সহ বিভিন্ন প্রকল্পের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। সেই ভিডিয়ো-অনুষ্ঠানের স্বাগত বক্তৃতায় মোদীর উদ্দেশে রাই বলেন, “উন্নয়নের গঙ্গাকে সকলের জীবনে পৌঁছনোয় আপনি ভগীরথ।… বিবেকানন্দের বিদেশ যাত্রার সময়ে কেউ এক জন তাঁকে ক্ষুধার্ত, দুর্বল দেশের সন্ন্যাসী বলেছিলেন। তখন বিবেকানন্দের জবাব ছিল, একবিংশ শতকের যে ভারত তিনি দেখতে পাচ্ছেন, সেখানে কেউ অনাহারে থাকবে না। কেউ দুর্বল কেউ গৃহহীন কিংবা অশিক্ষিতও থাকবে না। আমরা জানি বিবেকানন্দের ছোটবেলার নাম নরেন্দ্র। এক নরেন্দ্র ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন, আর এক নরেন্দ্র তা পূরণ করছেন।” বিশ্বে ভারতের প্রথম সারির দেশ হয়ে ওঠার যে স্বপ্ন স্বামীজি দেখতেন, মোদীর নেতৃত্বে ভারত সে দিকে পা বাড়াচ্ছে বলেও রাইয়ের দাবি।

Advertisement

আরও পড়ুন: প্রশ্নের খোঁচা নিয়েই ছাঁটাই সাংসদ তহবিল

এখানেই না-থেমে ভারত সমেত সারা দুনিয়া মোদীর ‘একই অঙ্গে কত রূপ’ প্রত্যক্ষ করছে, তার বিস্তারিত বিবরণ দিয়েছেন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী। ‘গরিবের মসিহা’, ‘করোনার বিরুদ্ধে যুদ্ধে পথ প্রদর্শক’, ‘দেশের চৌকিদার’, ‘৩৭০ অনুচ্ছেদ রদে দৃঢ়সঙ্কল্প নেতা’, ‘লাদাখ-লে-তে সেনার সামনে শৌর্যের প্রতিমূর্তি’ আবার ‘অযোধ্যায় রামলালার সামনে সাষ্টাঙ্গ প্রণামে ভক্তি ভাবে চূর’- বর্ণনা অফুরান।

দল নির্বিশেষে ক্ষমতাবানের ভজনা ও স্তুতি এ দেশের রাজনীতিতে গা-সওয়া। কংগ্রেস থেকে তৃণমূল, এডিএমকে থেকে বিএসপি— শীর্ষ নেতা বা নেত্রীর বেলাগাম স্তুতি বার বার শোনা যায় প্রত্যেক দলের নেতা ও কর্মীদের মুখে। কিন্তু দিল্লির রাজনৈতিক মহলে গুঞ্জন, সেই মাপকাঠিতেও যেন এত দিনের সমস্ত রেকর্ডকে ছাপিয়ে যাচ্ছে মোদী-বন্দনা। ভোট রাজনীতির কথা মাথায় রেখে মোদীর জন্য সংসারত্যাগী, নির্লোভ, সৎ, অনলস কর্মযোগীর ভাবমূর্তি বহু দিন ধরেই সযত্নে তৈরি করেছে তাঁর দল। কিন্তু বিরোধীদের একাংশের মতে, ধীরে ধীরে তাঁকে ক্রমশ যেন ঠেলে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে মহামানবের কক্ষপথে।

মোদীও প্রায়ই দাবি করেন, তাঁর নিজের কোনও রাজনৈতিক আকাঙ্ক্ষা নেই। দেশসেবাতেই জীবন নিয়োজিত। সেই জীবনকে সকলের কাছে তুলে ধরতে কখনও গল্প-কার্টুনের বই, তো কখনও রুপোলি পর্দার ছায়াছবি। যেখানে কোথাও ছোটবেলায় স্নান করতে গিয়ে কুমিরছানা ধরে আনার গল্প, তো কোথাও সন্ন্যাসী হতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বনে যাওয়ার আখ্যান। ‘দুই নরেন্দ্রকে’ এক করাও এই কৌশলের অঙ্গ বলে বিরোধীদের দাবি।

এর সঙ্গে সাযুজ্য রেখেই প্রধানমন্ত্রীর ৭০তম জন্মদিন উপলক্ষে বিশেষ পুস্তিকা প্রকাশ করেছেন বিজেপি সভাপতি জে পি নড্ডা। দাবি করেছেন, সাধারণ পরিবার থেকে মোদীর প্রধানমন্ত্রী হওয়ার আখ্যান কিংবা দেশসেবায় তাঁর নিবেদিত-প্রাণ সঙ্কল্প বিজেপি কর্মীদের প্রেরণা। সকলের কাছে পৌঁছতে তা তুলে ধরা হয়েছে ওই বইয়ে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন