ই-সিগারেট বন্ধের ভাবনা কেন্দ্রের

এর ক্ষতির দিকটি বিবেচনা করে পঞ্জাব, কর্নাটক, মিজোরাম, কেরল, উত্তরপ্রদেশ, বিহার, মহারাষ্ট্র, তামিলনাড়ুর মতো প্রায় এক ডজন রাজ্য ইতিমধ্যেই ই-সিগারেটের কেনা-বেচা বন্ধ করেছে।

Advertisement

অনমিত্র সেনগুপ্ত

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৮ জুলাই ২০১৯ ০০:৫৭
Share:

প্রতীকী ছবি।

কমার বদলে বাড়িয়ে দিচ্ছে ক্ষতির সম্ভাবনা। তবু ই-সিগারেটের ব্যবহারে ধূমপায়ী বাড়ছে উন্নয়নশীল দেশগুলিতে।

Advertisement

এর ক্ষতির দিকটি বিবেচনা করে পঞ্জাব, কর্নাটক, মিজোরাম, কেরল, উত্তরপ্রদেশ, বিহার, মহারাষ্ট্র, তামিলনাড়ুর মতো প্রায় এক ডজন রাজ্য ইতিমধ্যেই ই-সিগারেটের কেনা-বেচা বন্ধ করেছে। এ বার গোটা দেশে তা বাতিল করার ভাবছে নরেন্দ্র মোদী সরকার। স্বাস্থ্য মন্ত্রক সূত্রে খবর, বাকি রাজ্যগুলির কথা ভেবে একটি বৈঠক ডাকার কথা ভাবছে কেন্দ্র। বৈঠকে সব রাজ্য একমত হলেই ই-সিগারেট বন্ধে পদক্ষেপ করবে কেন্দ্র।

সিগারেটের বিকল্প হিসেবে বা তার চেয়ে কম ক্ষতিকর মনে করে ই-সিগারেট, তথা ইলেকট্রনিক নিকোটিন ডেলিভারি সিস্টেম (এন্ডস) ব্যবহার করে থাকেন অনেকে। সিগারেটের মতো দেখতে এই যন্ত্রে রাখা তরল ব্যাটারির মাধ্যমে গরম হয়ে বাষ্পে পরিণত হয়। যা টেনে নেন ধূমপায়ী। ক্যানসার বিশেষজ্ঞদের মতে, ওই তরলে নিকোটিনের সঙ্গে থাকে আরও কিছু ক্ষতিকর রাসায়নিক কণা। যা ফুসফুস ও গলার জন্য ক্ষতিকর। দীর্ঘদিনের ব্যবহারে, বমি ভাব, কাশি, জিভে দানার মতো উপসর্গ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এইমসের ক্যানসার চিকিৎসক মুকুরদীপি রায় বলেন, ‘‘ই-সিগারেটের মাধ্যমে যেখানে-সেখানে ভেপিং করা যায় বলে এতে দ্রুত নিকোটিন-আসক্তি তৈরি হয়। এটিও সরাসরি ফুসফুসের ক্ষতিই করে।’’ ক্যানসার চিকিৎসক গৌতম মুখোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘অনেকে মনে করেন, এটি নিরাপদ। কিন্তু আদৌও তা নয়।’’ আমেরিকার এক গবেষণায় দেখা গিয়েছে, তরুণদের আরও বেশি করে সিগারেট নির্ভরতার দিকে ঠেলে দিচ্ছে ই-সিগারেট।

Advertisement

চিকিৎসকেরা ই-সিগারেট বন্ধের ভাবনাকে স্বাগত জানালেও, সার্বিক ভাবে কেন সিগারেট-গুটখা বন্ধ করা হচ্ছে না— সেই প্রশ্নও তুলছেন? প্রশ্নটা দীর্ঘদিনের। মুকুরদীপি বললেন, ‘‘সিগারেট মাত্রেই ক্ষতিকর। নানা রোগের কারণ। সার্বিক ভাবে তামাকের ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা জারি করা উচিত। ৪০ শতাংশ ক্ষেত্রে তামাকই ক্যানসারের কারণ।’’

অনেকে মনে করেন, এর জন্য দায়ী তামাক লবি। সিগারেট উৎপাদনে নিষেধাজ্ঞা ঠেকাতে তামাক লবি ভীষণ ভাবে সক্রিয়। তামাক-বিরোধী তৎপরতা দেখলেই তারা তামাক চাষীদের দুর্দশার ছবিটি তুলে ধরে সরব হয়। একই ছবি গুটখা ব্যবসার ক্ষেত্রেও। এর ক্ষতির কথা জেনেও মূলত উত্তর ভারত-সহ গোবলয়ের গুটখা লবির কারণে সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা জারি করতে ব্যর্থ সরকার। এর পিছনে আর্থিক কারণও রয়েছে। রাজ্যগুলি ও কেন্দ্র সিগারেট ও গুটখা থেকে বিপুল রাজস্ব সংগ্রহ করে। প্রশ্নটি জনস্বাস্থ্যের হলেও তাই কেন্দ্র বা রাজ্য, কেউই আজ পর্যন্ত সেই আর্থিক ক্ষতির দায় নিতে রাজি হয়নি।

গৌতমবাবু বলেন, ‘‘বেঙ্গল অঙ্কোলজি ফাউন্ডশনের দাবি, স্বল্প ও দীর্ঘ মেয়াদি লক্ষ্যমাত্রা-সহ একটি তামাক নীতি তৈরি করুক কেন্দ্র। একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে তামাকজাতীয় পদার্থের ব্যবহার বন্ধ করা হোক। প্রয়োজনে তামাক শিল্পের সঙ্গে জড়িতদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করুক সরকার।’’ গৌতমবাবুদের দাবি, ই-সিগারেট যেহেতু আরও ক্ষতিকর, তাই দ্রুত এর ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা জারি করুক সরকার। সম্প্রতি ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিক্যাল রিসার্চ (আইসিএমআর) ই-সিগারেটের উপরে একটি শ্বেতপত্র প্রকাশ করেছে। তাতে দেশবাসীর স্বাস্থ্যের কথা ভেবে ই-সিগারেট ব্যবহার পুরো নিষিদ্ধ করার সুপারিশ রয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন