একমাত্র টাইম মেশিনে চাপলেই এটি সম্ভব! অথচ না-চেপেই সেই অসম্ভবকে ‘সম্ভব’ করে ফেললেন প্রধানমন্ত্রী।
দাবি করে বসলেন, মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ তৈরি করতে তিনিই যেন প্রথম রেডিয়োকে ব্যবহারের কথা ভেবেছেন। সঙ্গে যোগ করলেন, ঠিক সে ভাবে দেশবাসীর সঙ্গে যোগাযোগের জন্য সুভাষচন্দ্র বসুও রেডিয়োর কথা ভেবেছিলেন।
বিষয়টি এমন ভাবে পেশ করলেন নরেন্দ্র মোদী, যেন রেডিয়োয় কথা বলার পুরোধা তিনিই। আর তাঁকে দেখেই রেডিয়োয় বার্তা দেওয়ার কথা ভেবেছিলেন নেতাজি। নেতাজির প্রপৌত্র ও তৃণমূল সাংসদ সুগত বসু বলেন, ‘‘যে ভঙ্গিতে মোদী কথা বলেছেন, তাতে মনে হয়েছে— যেন তিনিই রেডিয়ো বক্তৃতা শুরু করেছেন। মনে রাখতে হবে— শুধু দেশবাসীকে বার্তা দেওয়া নয়, ইউরোপ ও দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার সঙ্গেও রেডিয়োয় যোগাযোগ রাখতেন সুভাষচন্দ্র। সেই সময়ে সেটা খুবই কষ্টসাধ্য কাজ ছিল। নেতাজির সময়ে টেলিভিশন ও অন্য বৈদ্যুতিন মাধ্যম ছিল না। রেডিয়োই ছিল যোগাযোগের সব চেয়ে উৎকৃষ্ট মাধ্যম।’’
আরও পড়ুন: জলে ৬১০০ কোটি, তবু মোদীর জমানায় দূষণ বেড়েছে গঙ্গায়!
এ বছরের প্রথম ‘মন কি বাত’ অনুষ্ঠানে মোদী এ-ও শুনিয়েছেন, যে তাঁকে ‘বলা হয়েছে’ নেতাজির আজাদ হিন্দ রেডিয়োয় বিভিন্ন প্রাদেশিক ভাষাতেও বুলেটিন প্রচার হত। সেটি জনপ্রিয়ও ছিল!
চার দিন আগেই লালকেল্লায় নেতাজি সংগ্রহশালার উদ্বোধন করেছেন মোদী। প্রবেশদ্বারে নেতাজির ছবির সঙ্গে রয়েছে তাঁর ছবিও। নিজের সেই ছবির সামনে মোহিত হয়ে তিনি দাঁড়িয়েও থাকেন কিছু ক্ষণ।
কিন্তু বিরক্ত বিরোধীরা। কংগ্রেসের মণীশ তিওয়ারি বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রীর সব কিছু শুরু হয় ‘আমি’ দিয়ে, শেষও হয় ‘আমি’তে। স্বাধীনতা আন্দোলনে জনসঙ্ঘ, আরএসএসের কোনও ভূমিকা ছিল না। এখন কংগ্রেসের নেতাদেরই ধরতে হচ্ছে প্রধানমন্ত্রীকে। আর নিজেকে সেই মনীষীদের পাশে বসানোটাও তাঁর পুরনো অভ্যাস।’’
সুগত বসুও বলেন, ‘‘একটি অদ্ভুত বিষয় লক্ষ করি— গাঁধী-নেতাজির মতো যে ব্যক্তিদের শ্রদ্ধা জানানো হয়, নিজেকে তাঁদের সমকক্ষ মনে করেন নরেন্দ্র মোদী। এই বড়াই রুচিসম্পন্ন মনে করি না।’’
সুগতবাবু মনে করিয়ে দেন, লালকেল্লায় ইন্দিরা গাঁধীও এক সময়ে নেতাজিকে নিয়ে অনুষ্ঠান করেছিলেন। কিন্তু সেখানে সব দলের নেতাকে আমন্ত্রণ জানান। দীনদয়াল উপাধ্যায়ও ছিলেন।
মোদীর মতো ‘একা’ সব কিছু করার চেষ্টা করেননি। তাঁর কথায়, লালকেল্লায় নেতাজি সংগ্রহশালা হয়েছে, ভাল। কিন্তু তাঁর বাবা ও বন্ধুরা মিলে
নেতাজির গুরুত্বপূর্ণ চিঠিপত্র, ফিল্ম ফুটেজ, ভয়েস রেকর্ডিং ইত্যাদি সংরক্ষণ করে না-রাখলে সেগুলি হারিয়েই যেত।