বাজপেয়ীর শেষযাত্রায় নরেন্দ্র মোদী। ফাইল চিত্র।
কামানবাহী শকট মূল ফটক পেরোতেই হঠাৎ তার পিছনে দাঁড়িয়ে পড়লেন নরেন্দ্র মোদী। পাশে অমিত শাহ।
ভিড় তখন উপচে পড়ছে অটলবিহারী বাজপেয়ীকে শেষ বার ছোঁয়ার জন্য। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী আর বিজেপি সভাপতি যে গাড়ির পিছনে হাঁটছেন! ভিড় সরাতে নাজেহাল এসপিজি। বিজেপির ঝাঁ চকচকে নতুন দফতর থেকে রাষ্ট্রীয় স্মৃতিস্থল পর্যন্ত শেষযাত্রা বাজপেয়ীর। কাল থেকেই নিজেকে বাজপেয়ীর উত্তরসূরি প্রমাণ করতে মরিয়া চেষ্টা চালাচ্ছেন মোদী। তারই অঙ্গ হিসেবে যেন বিজেপি দফতরের দরজা পেরোতেই বাজপেয়ীর কামানবাহী শকটের পিছনে হাঁটতে শুরু করলেন মোদী-শাহ। মোদী বোঝাতে চাইলেন, তিনিই উত্তরসূরি, অমিত তাঁর সেনাপতি।
হাসপাতাল থেকে বাজপেয়ীর বাড়ি— গত দু’দিন ধরে সর্বত্র ছোটাছুটি করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ। একাধিক মুখ্যমন্ত্রী, বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতারাও রাত জেগেছেন। তাঁরা কোথায়? কয়েক পা হেঁটেই মোদী-শাহ বোধহয় বুঝতে পারলেন, ব্যাপারটা বেমানান হচ্ছে। একটু থমকে গিয়ে ভিড়ের মধ্যে হাতের কাছে যাঁকে যাঁকে দেখতে পেলেন, ডেকে নিলেন। শিবরাজ সিংহ চৌহান, দেবেন্দ্র ফডণবীস, অনুরাগ ঠাকুরের মতো কয়েক জন এলেন সে বলয়ে।
তার পরে প্রায় সাড়ে ছ’ কিলোমিটার পথ বাজপেয়ীর শকটের পিছনে হাঁটলেন মোদী। বাকিদের, এমনকি অমিত শাহকেও পিছনে ফেলে একাই সকলের আগে। টিভিতে এ ছবি দেখে কংগ্রেসের এক নেতা বললেন, ‘‘বাজপেয়ী হতে চাইছেন মোদী। কিন্তু বাজপেয়ী সকলকে নিয়ে চলতেন। দেখুন, এখানেও বাজপেয়ী হতে গিয়ে মোদী সেই মোদীতেই থেকে গেলেন! বাজপেয়ীর যাঁরা কাছের লোক ছিলেন, অন্তত তাঁদের তো সঙ্গে নিতে পারতেন!’’
ক্ষমতায় এসেই যে বাজপেয়ীর ছবি মুছে সর্বত্র নিজের ছবিতে ছয়লাপ করেছেন, আজ তাঁর মৃত্যুর পরে জনসমুদ্রে নিজেকে ভাসাতে চাইলেন মোদী। অন্ত্যেষ্টির পরে টুইট করে হাঁটার ছবিও দিলেন। সঙ্গে লেখা, ‘‘দেশের সব প্রান্তের, সমাজের সব অংশের মানুষ এসেছে অসামান্য সেই ব্যক্তিকে শ্রদ্ধা জানাতে। যিনি দেশের প্রতি অসামান্য অবদান রেখেছেন। অটলজি, আপনি প্রতিটি ভারতীয়ের হৃদয়ে থাকবেন।’’ সন্ধ্যে থেকে বিজেপিও সোশ্যাল মিডিয়ায় মোদীর জয়ধ্বনি তুলল— এত গরমেও প্রধানমন্ত্রী কেমন হেঁটেছেন দেখুন।
গুজরাত দাঙ্গার পরে বাজপেয়ী মোদীকে ‘রাজধর্ম’ পালনের কথা মনে করিয়ে দিয়েছিলেন। সেই মোদী কাল থেকে বাজপেয়ীকে ‘পিতা’ বলে সম্বোধন করার পাশাপাশি যে ভাবে সব আলো কেড়ে নিতে মরিয়া, তাতে বিজেপির অনেকে অসন্তুষ্ট। এক মন্ত্রীর গলায় স্পষ্ট হতাশা, ‘‘সবই তাঁর সিদ্ধান্ত। আমাদের আর কী?’’
অটল হতে গিয়ে মোদী ভুললেন অটলকেই? নিজের দলেই ‘আমরা-ওরা’ বিভাজন করে বসলেন?