কয়েক দিনের মধ্যে নিজেই পরীক্ষায় বসতে চলেছেন। তার আগে ‘মন কি বাত’ অনুষ্ঠানে পড়ুয়াদের পরীক্ষার টেনশনমুক্তির দাওয়াই দিলেন তিনি। আর তাঁর এই দাওয়াই শুনে প্রশ্ন উঠে গিয়েছে, উত্তরপ্রদেশ-সহ পাঁচ রাজ্যের ভোট-পরীক্ষার আগে নিজেই কি টেনশনে রয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী? পড়ুয়াদের টেনশন থেকে বাঁচার উপায় বাতলানোর মধ্যে দিয়ে নিজেই কি চাপমুক্ত থাকতে চাইছেন নমো?
পাঁচ রাজ্যের বিধানসভা ভোট শেষ হচ্ছে ৮ মার্চ। ৯ মার্চ থেকে শুরু হচ্ছে দশম ও দ্বাদশ শ্রেণির বোর্ডের পরীক্ষা। ভোটের মুখে রবিবার সকালে রেডিওতে ‘মন কি বাত’ অনুষ্ঠানে মোদী তাই ছাত্রছাত্রীদের পরীক্ষাকে উৎসব হিসেবে দেখার পরামর্শ দিলেন। বললেন, ‘‘চাপ নয়, পরীক্ষাকে উৎসব হিসেবে নাও। হাসিখুশি থাকলেই পরীক্ষার নম্বর ভাল আসবে।’’ সচিন তেন্ডুলকরের উদারহণ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বোঝানোর চেষ্টা করেন, মার্কশিট বড় কথা নয়, অন্যের সঙ্গে প্রতিযোগিতার থেকে নিজেকে ছাপিয়ে যাওয়ায় বড় কথা। যা শুনে তেন্ডুলকরও প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়ে বললেন, খেলা হোক বা পরীক্ষা, প্রস্তুতিই আসল। লক্ষ্যই চ্যালেঞ্জকে সহজ করে।
কিন্তু মোদীর এই চাপ লাঘবের দাওয়াই শুনে কংগ্রেসের এক নেতা বলেন, ‘‘যে ভাবে রাহুল গাঁধী এবং অখিলেশ যাদব হই-হই করে লখনউয়ের রাস্তা দাপাচ্ছেন, তাতে রক্তচাপ বেড়েছে প্রধানমন্ত্রীর। তাই ছাত্রদের বলার নামে আসলে নিজের কঠিন পরীক্ষার কথাই বলছেন।’’
মোদী এ দিন বলেন, ‘‘যখন কেউ চিকিৎসক বা আইনজীবীর কাছে যান, তখন কি কেউ তাঁর মার্কশিট দেখতে চান? প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি এ পি জে আব্দুল কালাম এক বার বায়ুসেনায় ভর্তি হতে চেয়েও বিফল হয়েছিলেন। তিনি তাতে ভেঙে পড়লে কি এত বড় বিজ্ঞানীকে পাওয়া যেত?’’ প্রধানমন্ত্রীর কথায়, ‘‘পরীক্ষার নম্বর নয়, জ্ঞান অর্জনই আসল।’’ এমনিতেই নরেন্দ্র মোদীর মার্কশিট নিয়ে বিতর্ক চলছে। তার উপর তাঁর সরকারেরই আর এক মন্ত্রী স্মৃতি ইরানির শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। অনেকেই বলছেন, এ সবের উত্তর দিতেই মোদীর এই মার্কশিট-মন্তব্য।
ছাত্রদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রীর দাওয়াই, চাপমুক্তির জন্য পর্যাপ্ত ঘুম দরকার। ছাদে গিয়ে জোরে শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে হবে। জানান, তাঁকেও কেউ কেউ পর্যাপ্ত ঘুমের পরামর্শ দিয়েছেন। মোদীর কথায়, ‘‘পরীক্ষাকে সঠিক প্রেক্ষাপটে দেখতে হবে। সেটিকে জীবন-মরণের সমস্যা বানালে চলবে না। পরীক্ষা জীবনের একটা অধ্যায় মাত্র। এর সঙ্গে জীবনের সাফল্য-ব্যর্থতা জড়িয়ে নেই।’’ পরীক্ষার্থীদের টুকলি না করারও পরামর্শ দেন প্রধানমন্ত্রী।
শুধু পড়ুয়া নন, অভিভাবকদেরও মোদীর পরামর্শ, ছেলেমেয়ের উপর প্রত্যাশার বোঝা চাপিয়ে দেবেন না। বলেছেন, ‘‘ছাত্রছাত্রীদের ভারী স্কুলব্যাগ নিয়ে প্রচুর আলোচনা হয়েছে। বাবা-মায়ের প্রত্যাশার বোঝা আরও ভারী।’’
আর মোদীর এই মন খোলা ‘বাত’ শুনে কংগ্রেসের অজয় মাকেন বলেন, ‘‘মনে হচ্ছে, মোদী আসলে নিজের চাপের কথা বলছেন। তিনি নিজে কী ভাবে চাপ কাটাচ্ছেন, সে কথাই বলছেন ছাত্রদের।’’