‘হুনর হাট’-এ এক শিল্পীর সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। বুধবার নয়াদিল্লিতে। পিটিআই
রীতিমতো চমকে গেলেন শাহিনা গাঁধী। সামনে দাঁড়িয়ে প্রধানমন্ত্রী!
রঙিন পাথর সাজিয়ে শিল্পকর্মে বেশ নাম করেছেন গুজরাতের বডোদরার এই শিল্পী। গত এক সপ্তাহ ধরে ইন্ডিয়া গেটের সামনে ‘হুনর হাট’-এ পসরা সাজিয়েছেন। হাটের উদ্যোক্তা সংখ্যালঘু মন্ত্রক। আগাম খবর না-দিয়েই মোদী আজ সেখানে হাজির! লালকেল্লার একটি প্রতিকৃতি এগিয়ে দিয়ে শাহিনা বললেন, ‘‘এটা আপনার।’’ মোদীর নজর তখন পিছনের এক ফ্রেমে, ভারতের মানচিত্রে। তড়িঘড়ি সেটি পাড়লেন শাহিনা। চোখ বুলিয়ে মোদী বললেন, ‘‘এতে তো গুজরাতে গাঁধীজি আছেন!’’ শাহিনা যোগ করলেন, ‘‘ঐক্যের মূর্তিও গাঁথা আছে।’’
দশ কিলোমিটার দূরে তখন শাহিন বাগের প্রতিবাদীদের বোঝাচ্ছেন দুই মধ্যস্থতাকারী, সুপ্রিম কোর্টের নিয়োগ করা প্রবীণ আইনজীবী সঞ্জয় হেগড়ে ও সাধনা রামচন্দ্রন। আর এখানে, রাজপথের পাশে মুসলিম শিল্পীদের সঙ্গে খোশগল্পে মশগুল মোদী। মন্ত্রিসভার বৈঠকের পরে এই সফর এতটাই আকস্মিক যে, খোদ সংখ্যালঘু উন্নয়ন মন্ত্রী মুখতার আব্বাস নকভিও জানতেন না। খবর পেয়ে ছুটে এলেন। মোদী স্টলে স্টলে ঘুরলেন, শিল্পীদের সঙ্গে কথা বললেন, তার পরে গেলেন মেলা প্রাঙ্গণের বাবুর্চিখানার দিকে।
সামনে বিহারে ভোট। এক ঢিলে অনেক পাখি মারার কৌশল বহু দিনই রপ্ত মোদীর। ‘শুদ্ধ দেশি ঘিয়ে তৈরি বিহারি ব্যঞ্জন’-এর স্টলে গিয়ে তিনি বললেন লিট্টি-চোখা দিতে। পকেট থেকে ১২০ টাকা দিলেন। দুই ভাঁড় চা-ও নিলেন ৪০ টাকা দিয়ে। একটি নিজের জন্য, একটি নকভির জন্য। বসে পড়লেন খাটিয়ায়। চার দিকে ভিড়। কেউ তুলতে চান নিজস্বী, কেউ মেলাতে চান হাত। কাউকে ফেরাচ্ছেন না প্রধানমন্ত্রী। নাভিশ্বাস রক্ষীদের।
মেলায় মোদী রইলেন প্রায় ৫০ মিনিট। ফিরে গিয়ে ছবি, ভিডিয়ো টুইট করলেন। ওই মানচিত্রটি দেখার ভিডিয়োয় লিখলেন: ‘‘এক মানচিত্রে ভারতের সংস্কৃতি ও বৈচিত্র দেখুন।’’ বিশেষ ভাবে সক্ষম এক মহিলার সঙ্গে কথোপকথনের ভিডিয়োয় শোনা গেল, তিনি মোদী সরকারের দৌলতে ফুটপাত থেকে কী ভাবে নিজের বাড়ি কিনেছেন। আর বিহারি খানা নিয়ে লিখলেন, ‘‘ভারতের এত রং, বৈচিত্র। বিকেলটা ভাল কাটল। হাতের কাজ, কার্পেট, বস্ত্রের সেরা সামগ্রী। আর হ্যাঁ, অবশ্যই সুস্বাদু খাবার। আমিও সুস্বাদু লিট্টি-চোখা, এক কাপ চা খেলাম। গোটা দেশ থেকে এত মানুষ। চনমনে পরিবেশ। অবশ্যই আসবেন।’’
নকভি জানালেন, হুনর হাটে তিন লক্ষ শিল্পী রোজগারের পথ পেয়েছেন। সরকার বিনামূল্যে মঞ্চ দেয়। ব্যবসা তাঁদের। বিজেপি প্রচার শুরু করল, ‘‘এ থেকে শাহিন বাগ কিছু শিখছে কি?’’ নকভি টুইটারে ছবি দিলেন, মোদীর কাটআউট ঘিরে মুসলিম বাচ্চারা। ইঙ্গিত স্পষ্ট।