নিখুঁত হোক বিচারের ব্যবস্থা, পরামর্শ মোদীর

তিনি মেনে নিলেন, দেশের বিচারব্যবস্থা যথেষ্ট শক্তিশালী। কিন্তু তা নিখুঁত হয়ে ওঠার প্রয়োজন রয়েছে বলে মন্তব্য করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী হাইকোর্টের বিচারপতি এবং মুখ্যমন্ত্রীদের এক যৌথ সম্মেলনে মোদীর এই মন্তব্যে শুরু হয়েছে জল্পনা। তবে কি দেশের বিচারব্যবস্থাকে নিখুঁত বলে মনে করছেন না তিনি? স্পষ্ট করেননি প্রধানমন্ত্রী। তবে তুলনা টেনে বুঝিয়ে দিয়েছেন, রাজনীতিকদের পাঁচ বছর পরপর জনতার কাছে জবাবদিহি করতে হয়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৬ এপ্রিল ২০১৫ ০৩:২০
Share:

এক অনুষ্ঠানে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি এইচ এল দাত্তুর সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ছবি: পিটিআই।

তিনি মেনে নিলেন, দেশের বিচারব্যবস্থা যথেষ্ট শক্তিশালী। কিন্তু তা নিখুঁত হয়ে ওঠার প্রয়োজন রয়েছে বলে মন্তব্য করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।

Advertisement

হাইকোর্টের বিচারপতি এবং মুখ্যমন্ত্রীদের এক যৌথ সম্মেলনে মোদীর এই মন্তব্যে শুরু হয়েছে জল্পনা। তবে কি দেশের বিচারব্যবস্থাকে নিখুঁত বলে মনে করছেন না তিনি? স্পষ্ট করেননি প্রধানমন্ত্রী। তবে তুলনা টেনে বুঝিয়ে দিয়েছেন, রাজনীতিকদের পাঁচ বছর পরপর জনতার কাছে জবাবদিহি করতে হয়। ভুল করলে মাসুল দিতে হয়। কিন্তু বিচারব্যবস্থা কোনও ভুল করলে তার সংশোধন অসম্ভব। তাই বিচারব্যবস্থাকে শুধু শক্তিশালী হলেই চলবে না, হতে হবে নিখুঁত। এবং সেই কারণেই আত্মসমীক্ষার জন্য বিচারবিভাগের নিজস্ব পদ্ধতি থাকা উচিত বলে মন্তব্য করেছেন মোদী। এই সূত্রেই বিচারপতিদের উদ্দেশ করে তাঁর সরস মন্তব্য, ‘‘আমরা রাজনীতিকরা ভাগ্যবান যে মানুষ আমাদের ওপর সর্বক্ষণ নজর রাখছে। আমাদের মূল্যায়ন করছে, কাটাছেঁড়া করছে। আপনারা এতটা ভাগ্যবান নন।’’

নিজের বক্তৃতায় মোদী এ দিন আরও বলেন, ‘‘যদি আপনারা কাউকে মৃত্যুদণ্ডও দেন, তা হলেও সে বলবে ‘বিচার বিভাগে আমার আস্থা রয়েছে।’ সমালোচনার সুযোগ যেখানে কম, সেখানেই আত্মসমীক্ষার জন্য নিজস্ব ব্যবস্থা থাকা উচিত।’’ মোদীর মতে, বিচারবিভাগের আত্মসমীক্ষার ব্যবস্থা না থাকলে তা তৈরি করতে হবে। ঠিক যে ভাবে সরকার নিজের হাত-পা বাঁধা পড়বে জেনেও নির্বাচন কমিশন, তথ্যের অধিকার আইন তৈরি করেছে। তৈরি হচ্ছে লোকপাল। তবে সরকারি ট্রাইবুনালের ভূমিকা নিয়ে মোদী এ দিন যথেষ্ট কড়া কথা বলেছেন। যত টাকা ট্রাইবুনাল গঠনে খরচ হয়, সেই টাকা আদালতের উন্নয়নে খরচ করা যেতে পারে বলে মত দিয়েছেন তিনি। ট্রাইবুনাল দ্রুত ন্যায়ের পথে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে কি না, তা ভেবে দেখা দরকার বলেও মন্তব্য করেন মোদী। মনে রাখা যেতে পারে, এই সব ট্রাইবুনালের মাথায় থাকেন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতিরাই।

Advertisement

আবার মোদী যে বিচারব্যবস্থাকে ‘শক্তিশালী’ বলেছেন, তার মধ্যেও একটা পরোক্ষ খোঁচা রয়েছে বলে মনে করছেন অনেকে। ইউপিএ আমলেই টুজি মামলা বা কয়লা ব্লক বণ্টনের মতো দুর্নীতি মামলায় সর্বোচ্চ আদালতে ধাক্কা খেয়েছিল ইউপিএ সরকার। সেই সময়ে বিরোধী বিজেপি সাধুবাদ জানিয়েছিল আদালতের সিদ্ধান্তকে। কিন্তু মোদী জমানায় মাত্র ক’দিন আগে সরকারের আপত্তি উড়িয়ে ৬৬এ ধারা খারিজ করেছে সুপ্রিম কোর্ট। গু়ড ফ্রাইডে-র দিনে বিচারপতিদের সম্মেলন করা নিয়েও বিতর্ক দানা বেঁধেছে। প্রধানমন্ত্রীর কাছে চিঠিও গিয়েছে। সম্প্রতি একজন মহিলা অফিসারকে হেনস্থা করার অভিযোগে মধ্যপ্রদেশ হাইকোর্টের এক বিচারপতির বিরুদ্ধে সংসদে ‘ইমপিচমেন্ট মোশন’ আনা হয়েছে। উপরন্তু গোধরা দাঙ্গা মালায় গুজরাতের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী মোদীকে কাঠগড়ায় তোলার দাবিতে আন্দোলন চালাচ্ছিলেন যে সমাজকর্মী তিস্তা শেতলবাড়, তাঁর গ্রেফতারিতেও সম্প্রতি স্থগিতাদেশ দিয়েছে সেই সুপ্রিম কোর্টই। বস্তুত তিস্তার মতো প্রতিবাদী সমাজকর্মীদের চাপের মুখেই বিচারপতিরা বিভিন্ন মামলার রায় দিচ্ছেন কি না— তা নিয়ে নতুন বিতর্কের অবকাশ আজ তৈরি করে দিয়েছেন মোদী। ‘‘অনেক সময় পাঁচতারা আন্দোলনকারীরাই বিভিন্ন ধারণা তৈরি করে দেন’’ বলে মন্তব্য করে তিনি বলেছেন, কোনও ধারণার দ্বারা প্রভাবিত হয়ে রায় দেওয়া থেকে সতর্ক থাকতে হবে বিচারবিভাগকে। মোদীর মন্তব্যের বিরোধিতা করে সমাজকর্মী নূতন ঠাকুর বলেন, ‘‘আমাদেরও আদালতে যথেষ্ট লড়াই করতে হয়। অনেক সময় আদালত আমাদের ফিরিয়েও দেয়। কাজেই আমাদের চাপে পড়ে আদালত রায় দিচ্ছে, এটা সত্যি নয়।’’

বিচারপতিরা প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্যের সরাসরি কোনও প্রতিক্রিয়া জানাননি। মোদীও বলেছেন, তাঁর বক্তব্য সংঘাতের মনোভাব হিসেবে না দেখে সাধারণ মানুষের মনের কথা হিসেবে দেখা হোক। সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি এইচ এল দাত্তু আজ এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। তিনি মন্তব্য করেন, ‘‘বিচারবিভাগ ও আইনসভা দুই ভাই। উভয়েই গণতন্ত্রের সন্তান। আমাদের পরস্পরকে সহায়তা যেমন করতে হবে, তেমনই পবিত্র সংবিধানের পথ থেকে কেউ সরে এলে তাকে শুধরেও দিতে হবে।’’

কংগ্রেস অবশ্য মোদীর বিরুদ্ধে পরোক্ষে বিচার বিভাগের উপরে চাপ সৃষ্টির অভিযোগ তুলেছে। কংগ্রেস নেতা অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি বলেন, ‘‘কারা বিচারবিভাগের উপর চাপ তৈরির চেষ্টা করছে, আমরা জানি। সমস্যা আমাদের জানা রয়েছে, সমাধানও।’’ প্রাক্তন বিজেপি নেতা তথা বর্ষীয়ান আইনজীবী রাম জেঠমলানীর কথায়, ‘‘বিচারপতিদের নিজের চরিত্রে সেই দৃঢ়তা আনতে হবে যাতে কেউ চাপ সৃষ্টি করতে না পারে। তার পরেও কেউ চাপ তৈরির চেষ্টা করলে তাঁর বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার মামলা করতে হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন