National News

কেজি প্রতি দেড় টাকারও কম! ৭৫০ কেজি পেঁয়াজ বিক্রির ১০৬৪ টাকা মোদীকে পাঠিয়ে প্রতিবাদ চাষির

নাসিকের নিফাদ তহশিলের সম্ভ্রান্ত চাষি সঞ্জয় বলেন, ‘‘এ বার ফলন ভালই হয়েছিল। স্থানীয় নিফাদ পাইকারি বাজারে কেজি প্রতি এক টাকা দর দেয় ব্যাপারীরা। শেষ পর্যন্ত এক টাকা চল্লিশ পয়সা দরে রফা হয়। ৭৫০ কেজি পেঁয়াজ বিক্রি করে হাতে পাই মাত্র ১০৬৪ টাকা।’’

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

নাসিক শেষ আপডেট: ০৩ ডিসেম্বর ২০১৮ ১২:৫৭
Share:

পেঁয়াজের নামমাত্র দাম পেয়ে বিক্রির টাকা প্রধানমন্ত্রীকে পাঠালেন চাষি। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ

তিনি অভিনব প্রযুক্তির সাহায্যে কার্যত কৃষি বিপ্লব ঘটিয়েছেন। নিজের উদ্ভাবনীর গল্প শুনিয়েছেন খোদ বারাক ওবামাকে। প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্টও মহারাষ্ট্রের সেই চাষির সাফল্যের কাহিনী শুনে তারিফ করেছেন। ফের শিরোনামে মহারাষ্ট্রের নাসিকের সেই চাষি সঞ্জয় শাঠে।

Advertisement

এবার অবশ্য সাফল্যের গল্প নয়। বরং মহারাষ্ট্রের চাষিদের ভয়ঙ্কর এক দুর্দশার ছবি তুলে ধরে। এ বছর সাড়ে সাত কুইন্টাল পেঁয়াজ কেজি প্রতি দেড় টাকারও কম দরে বিক্রি করে পেয়েছেন মাত্র ১০৬৪ টাকা। সেই টাকা পাঠিয়ে দিয়েছেন নরেন্দ্র মোদীকে। আট বছর আগে যে মোদী সরকার তাঁকে বারাক ওবামার সঙ্গে সাক্ষাৎ করিয়ে সাফল্যের গল্প শুনিয়েছিল, তারই প্রধানমন্ত্রীকে ফসল বিক্রির টাকা পাঠিয়ে অভিনব প্রতিবাদ করলেন সঞ্জয় শাঠে।

নাসিকের নিফাদ তহশিলের সম্ভ্রান্ত চাষি সঞ্জয় বলেন, ‘‘এ বার ফলন ভালই হয়েছিল। স্থানীয় নিফাদ পাইকারি বাজারে কেজি প্রতি এক টাকা দর দেয় ব্যাপারীরা। শেষ পর্যন্ত এক টাকা চল্লিশ পয়সা দরে রফা হয়। ৭৫০ কেজি পেঁয়াজ বিক্রি করে হাতে পাই মাত্র ১০৬৪ টাকা।’’

Advertisement

আরও পড়ুন: আদালতের ইংরেজি নির্দেশ বুঝতেই পারল না পুলিশ! ব্যবসায়ীকে পুরল জেলে

সংবাদ সংস্থা পিটিআই-কে সঞ্জয় বলেন, ‘‘টানা চার মাস মাথার ঘাম পায়ে ফেলে পরিশ্রমের দাম এই! এই সামান্য টাকা দিয়ে কি করব? তাই সিদ্ধান্ত নিই, প্রধানমন্ত্রীর বিপর্যয় মোকাবিলা তহবিলে পাঠিয়ে দিই। মানি অর্ডার করতে খরচ হয়েছে আরও ৫৪ টাকা।’’

জানা গিয়েছে, গত ২৯ নভেম্বর নিফাদ পোস্ট অফিস থেকে ওই মানি অর্ডার করা হয়। ঠিকানা ছিল, ‘নরেন্দ্র মোদী, প্রাইম মিনিস্টার অব ইন্ডিয়া।’ সঞ্জয় বলেন, ‘‘আমি কোনও রাজনৈতিক দল করি না। কিন্তু কৃষকদের দুর্দশা নিয়ে সরকারের উদাসীনতা ও বিরূপ মনোভাবে আমি হতাশ, ক্ষুব্ধ ও ব্যথিত।’’

আরও পড়ুন: রজতকে আমি খুন করিনি, আদালত চত্বরে বললেন অনিন্দিতা

এই সূত্রেই ফের উঠে এসেছে বারাক ওবামার সঙ্গে সঞ্জয় শাঠের সেই সাক্ষাৎকারের প্রসঙ্গও। তিনি জানিয়েছেন, একটি টেলিকম অপারেটর সংস্থার ভয়েস বেসড সার্ভিস ব্যবহার করে তাৎক্ষণিক এবং দীর্ঘমেয়াদি আবহাওয়ার চরিত্রের একটি পূর্বাভাস পেতেন তিনি। তার উপর ভিত্তি করেই তিনি নিজে এবং এলাকার চাষিদের আবহাওয়ার চরিত্র অনুযায়ী ফসল চাষের পরামর্শ দিতেন। তাতে ফলন ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পায়।

তাঁর এই উত্তরণের গল্প স্থানীয় অল ইন্ডিয়া রেডিয়োতেও শুনিয়েছেন তিনি। তারপর ২০১০ সালে ভারত সফররত তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সঙ্গে তাঁর সাক্ষাৎকারের বন্দোবস্ত করে ভারতের কৃষি মন্ত্রক। স্মৃতি হাতড়ে সঞ্জয় বলেন, ‘‘মুম্বইয়ের সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজে একটি স্টল পেয়েছিলাম। সেখানেই বারাক ওবামা এসেছিলেন। দোভাষীর সাহায্য নিয়ে কয়েক মিনিট কথা বলেছিলাম।’’

দেশের প্রায় ৫০ শতাংশ পেঁয়াজের উৎপাদন হয় মহারাষ্ট্রের এই নাসিক থেকেই। কিন্তু প্রায় প্রতি বছরই দাম না পেয়ে হতাশ হতে হয় চাষিদের। মাঝেমধ্যেই আত্মহত্যার ঘটনাও ঘটে। অথচ সরকার সেসব নিয়ে উদাসীন বলে অভিযোগ দীর্ঘদিনের। এ নিয়ে প্রতিবাদ বিক্ষোভও কম হয়নি। চাষিদের সেই চিরাচরিত ছবিই আরও একবার সামনে নিয়ে এলেন এবং প্রতিবাদ করলেন সঞ্জয়। ভোটের মুখে যা মোদী সরকারের অস্বস্তি বাড়িয়ে দেওয়ার পক্ষে যথেষ্ট, এমনটাই মত ওয়াকিবহাল মহলের।

(ভারতের রাজনীতি, ভারতের অর্থনীতি- সব গুরুত্বপূর্ণ খবর জানতে আমাদের দেশ বিভাগে ক্লিক করুন।)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন