Nepal Violence

প্রাক্তন রাজার ছবি পিছনে রেখে সেনাপ্রধানের বার্তা দেশকে, নেপালে রাজতন্ত্র ফেরানোরই ইঙ্গিত দিচ্ছেন?

ওলি ইস্তফা দেওয়ার পর মঙ্গলবার সন্ধ্যায় দেশবাসীর উদ্দেশে ভাষণ দেন নেপালের সেনাপ্রধান অশোকরাজ সিগদেল। তাঁর পিছনের একটি ছবি নিয়ে জল্পনা শুরু হয়েছে। ছবিতে দেখা গিয়েছে এক প্রাক্তন রাজাকে।

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১৮:১৬
Share:

নেপালের সেনাপ্রধান অশোকরাজ সিগদেলের পিছনে প্রাক্তন রাজার ছবি। ছবি: পিটিআই।

নেপালের প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলির ইস্তফার পর দেশের দায়িত্ব নিয়েছে সেনাবাহিনী। আপাতত নেপালে চলছে সেনার শাসন। এই পরিস্থিতিতে ভারতের উত্তরের এই পড়শি রাষ্ট্রের ভবিষ্যৎ নিয়ে জল্পনা শুরু হয়েছে। নেপালে কি আবার ফিরে আসবে রাজতন্ত্র? রাজার শাসন চেয়ে সেখানে ইতিমধ্যে বিক্ষোভ হয়েছে একাধিক বার। ওলির সরকারের পতনের পর তাই সে-ই জল্পনা বেড়েছে। জল্পনায় ঘি ঢেলেছে নেপালের সেনাপ্রধান অশোক রাজ সিগডেলের ভাষণ।

Advertisement

ওলি ইস্তফা দেওয়ার পর মঙ্গলবার সন্ধ্যায় দেশবাসীর উদ্দেশে ভাষণ দেন সিগডেল। জনসাধারণকে শান্তি বজায় রাখতে অনুরোধ করেন। কিন্তু সিগডেলের ভাষণ নয়, সকলের নজর কেড়েছিল তাঁর আসনের পিছনে থাকা ছবিটির দিকে। নেপালের প্রাক্তন রাজা পৃথ্বীনারায়ণ শাহের একটি বড় বাঁধানো ছবির সামনে বসে দেশবাসীর উদ্দেশে এই ভাষণ দেন সেনাপ্রধান। তা নিয়েই চলছে জল্পনা। অনেকেই দাবি করছেন, এই ছবির মাধ্যমে বিশেষ কোনও ইঙ্গিত দিতে চেয়েছেন সিগডেল। নেপালে রাজতন্ত্র কি তবে সেনাই ফিরিয়ে আনবে? প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে।

জনসাধারণের উদ্দেশে বার্তায় অবশ্য রাজতন্ত্রের কোনও উল্লেখ করেননি নেপালের সেনাপ্রধান। তিনি বলেছেন, ‘‘নেপাল সেনা দেশের মানুষের প্রতি সর্বদা দায়বদ্ধ। নেপালের ঐতিহাসিক, সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে রক্ষা করতে সেনা প্রস্তুত। আমরা নেপালবাসীকে শান্ত থাকতে এবং আন্দোলনকারীদের জনসাধারণের সম্পত্তি ধ্বংস করা থেকে বিরত থাকতে অনুরোধ করছি।’’

Advertisement

কিন্তু সেনাপ্রধানের পিছনের ছবির এই প্রাক্তন রাজা কে? অষ্টাদশ শতকের মাঝামাঝি সময়ে মাত্র ২০ বছর বয়সে নেপালের সিংহাসনে বসেছিলেন পৃথ্বী। তাঁকে আধুনিক নেপালের স্থপতি বলা হয়ে থাকে। পৃথ্বী ছিলেন রাজপুত বংশোজাত। কৌশলগত কূটনীতির মাধ্যমে তিনি নেপালের ৫০টিরও বেশি খণ্ডিত রাজ্যকে একত্রিত করেছিলেন। কাঠমান্ডুকে নেপালের রাজধানী হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন এই পৃথ্বী। নেপালের বর্তমান সেনাবাহিনীতে প্রাক্তন রাজা পৃথ্বীর জন্য একটি বিশেষ স্থান রয়েছে প্রথম থেকেই। সেনার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, সামরিক কাঠামোর নামকরণ তাঁর নামে হয়েছে। এমনকি, ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে যখন সিগডেল সেনাপ্রধানের দায়িত্ব নিয়েছিলেন, তখনও তাঁর পিছনে প্রাক্তন এই রাজার ছবি ছিল।

উল্লেখ্য, নেপালে ২০০৮ সাল পর্যন্ত রাজার শাসন প্রতিষ্ঠিত ছিল। শেষ রাজা জ্ঞানেন্দ্র শাহের পতনের পর সেখানে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হয়। কিন্তু গত ১৭ বছরে নেপালে কোনও সরকারই সে ভাবে স্থায়ী হতে পারেনি। মোট ১৩ বার সরকার পরিবর্তিত হয়েছে। ওলির সরকারের উপর জনরোষের অন্যতম কারণ দুর্নীতি এবং স্বজনপোষণ। তবে সেই সংক্রান্ত ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটে সমাজমাধ্যমের উপর সরকার আচমকা নিষেধাজ্ঞা জারি করার পর। নেপালের তরুণসমাজ এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে পথে নামে। সোমবার দিনভর বিক্ষোভে কাঠমান্ডু অগ্নিগর্ভ ছিল। আন্দোলনকারীদের থামাতে পুলিশ গুলি চালিয়েছিল। তাতে ১৯ জনের মৃত্যু হয়। ফলে আন্দোলনের তীব্রতা আরও বেড়ে গিয়েছিল। চাপের মুখে ওলি রাতেই সমাজমাধ্যমের উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেন। কিন্তু পরের দিন তাঁর পদত্যাগের দাবিতেই বিক্ষোভ জোরালো হয়। শেষে ইস্তফা দিতে বাধ্য হন ওলি।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement