(উপরে) নেপালের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ঝালানাথ খানালের বাড়িতে আগুন। তাঁর স্ত্রী রাজ্যলক্ষ্মী চিত্রকরের মৃত্যু (নীচে)। ছবি: সংগৃহীত।
নেপালের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ঝালানাথ খানালের স্ত্রী রাজ্যলক্ষ্মী চিত্রকরের মৃত্যু হয়েছে। গণবিক্ষোভের সময়ে তাঁদের বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। ভিতরে আটকে পড়েছিলেন রাজ্যলক্ষ্মী। পরে আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাঁকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু তাঁকে বাঁচানো যায়নি। নেপালের স্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলি এই খবর জানিয়েছে।
প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ঝালানাথ খানালের স্ত্রী রাজ্যলক্ষ্মী চিত্রকর। ছবি: সংগৃহীত।
গণবিদ্রোহের জেরে নেপালের প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে ইস্তফা দিতে বাধ্য হয়েছেন কেপি শর্মা ওলি। তাঁর ব্যক্তিগত বাসভবনেও আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। এর পর একে একে নেপালের প্রাক্তন এবং বর্তমান একাধিক মন্ত্রীর বাড়িতে আগুন দেয় উত্তেজিত জনতা। দেশের উপপ্রধানমন্ত্রী তথা অর্থমন্ত্রী বিষ্ণু পৌডেলকে তাড়া করা হয় রাস্তার মাঝে। রাস্তায় ফেলে তাঁকে মারধর করা হয়। রেহাই পাননি প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ঝালানাথ এবং তাঁর পরিবার। রাজধানী কাঠমান্ডুর ডাল্লু এলাকায় তাঁদের বাড়িতে মঙ্গলবারই আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। সে সময় বাড়িতে ছিলেন রাজ্যলক্ষ্মী। কোনও কোনও সূত্রে দাবি, তাঁকে ভিতরে আটকে বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। পরে পোড়া ক্ষত নিয়ে তাঁকে কীর্তিপুর বার্ন হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। সেখানে তাঁর মৃত্যু হয়েছে। ঝালানাথের পারিবারিক সূত্র উল্লেখ করে নেপালি সংবাদমাধ্যমগুলি এই মৃত্যুসংবাদ নিশ্চিত করেছে।
সমাজমাধ্যমে রাজ্যলক্ষ্মীর ঝলসানো দেহের একটি ছবি ছড়িয়ে পড়েছে। সেখানে তাঁর শরীরের অধিকাংশই অস্পষ্ট। এই ছবির সত্যতা যাচাই করেনি আনন্দবাজার ডট কম। ঝালানাথ নেপালের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিএন) সদস্য। ২০১১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে তিনি নেপালের প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন। পদে ছিলেন ওই বছরের অগস্ট মাস পর্যন্ত।
কিছু দিন আগে সমাজমাধ্যমে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল নেপাল সরকার। তাকে কেন্দ্র করে দেশ জুড়ে বিক্ষোভের আগুন ছড়িয়ে পড়ে। পথে নামে নেপালের ছাত্র-যুবরা। সোমবার সেই বিক্ষোভে পুলিশ গুলি চালালে ১৯ জনের মৃত্যু হয়। এর পর বিক্ষোভ আরও বেড়ে গিয়েছিল। রাতে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়ে নতুন বিজ্ঞপ্তি জারি করতে বাধ্য হয় কেপি শর্মা ওলির সরকার। কিন্তু তাতে লাভ হয়নি। মঙ্গলবার সকাল থেকে ওলির পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ জোরালো হয়। বেলার দিকে ওলি ইস্তফা দেন। মনে করা হচ্ছে, তিনি দেশ ছেড়ে চলে যাবেন। আশ্রয় নিতে পারেন দুবাইতে। কিন্তু এখনও সে বিষয়ে স্পষ্ট করে কিছু জানা যায়নি। ওলির পদত্যাগপত্র গ্রহণের পর ইস্তফা দিয়েছেন নেপালের রাষ্ট্রপতিও।
মঙ্গলবার সকাল থেকে নেপালের অনেক মন্ত্রী এবং প্রাক্তন মন্ত্রী বিক্ষোভকারীদের হাতে আক্রান্ত হয়েছেন। আর এক প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শের বাহাদুর দেউবা এবং তাঁর স্ত্রী আরজু রানা দেউবাকে মারধর করা হয়েছে। আরজু বর্তমানে নেপাল সরকারের বিদেশমন্ত্রীও বটে।মঙ্গলবার দুপুরে সমাজমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া এক ভিডিয়োয় দু’জনকেই রক্তাক্ত অবস্থায় দেখা যায়। যদিও ওই ভিডিয়োর সত্যতা যাচাই করেনি আনন্দবাজার ডট কম।
নেপালের প্রেসিডেন্ট রামচন্দ্র পৌডেলের বাসভবনে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। অপর প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী তথা সিপিএন নেতা প্রচণ্ডের বাসভবনেও আগুন ধরিয়ে দিয়েছে উত্তেজিত জনতা। এ ছাড়া সদ্য ইস্তফা দেওয়া স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রমেশ লেখক এবং টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী পৃথ্বী সুব্বা গুরুংয়ের বাসভবনেও আগুন ধরানো হয়েছে। অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে নেপালি কংগ্রেসের প্রেসিডেন্ট শের বাহাদুর দেউবার বাড়িতে, নেপালি কংগ্রেসের সদর দফতরে। এ ছাড়া ইউএমএল নেতা মহেশ বাসনেত, নেপালি কংগ্রেসের নেতা গগন থাপার বাড়িতেও আগুন ধরানো হয়েছে। নেপালের পার্লামেন্ট ভবন এবং সুপ্রিম কোর্টেও তাণ্ডব চালিয়েছে জনতা।