বিদ্রোহের মুখে দেশ ছাড়তে পারেন প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলি। গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।
দেশজোড়া বিক্ষোভের মাঝে এ বার কি পালানোর পরিকল্পনা করছেন নেপালের প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলি? সূত্রের দাবি, বাংলাদেশের শেখ হাসিনার মতোই তিনি দেশ ছেড়ে চলে যেতে পারেন। সে ক্ষেত্রে তাঁর গন্তব্য হতে পারে সংযুক্ত আরব আমিরশাহির দুবাই। প্রধানমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ সূত্র উল্লেখ করে ইন্ডিয়া টুডে এই তথ্য জানিয়েছে। ইতিমধ্যে গণবিক্ষোভের চাপে পড়ে ওলি ইস্তফা দিয়ে দিয়েছেন। সূত্রের আরও দাবি, নেপালের সেনাপ্রধান অশোক রাজ সিগদেল তাঁকে প্রধানমন্ত্রীর পদ ছাড়ার জন্য অনুরোধ করেছিলেন। জবাবে ওলি জানিয়েছেন, নিরাপদে তাঁকে দেশ ছাড়ার বন্দোবস্ত করে দেওয়া হোক।
চিকিৎসার জন্য দুবাই যাওয়া যায় কি না, তা বিবেচনা করে দেখছেন ওলি। ব্যক্তিগত বিমান সংস্থা হিমায়ল এয়ারলাইন্সের সঙ্গে যোগাযোগও করা হয়েছে। তাদের তৈরি থাকতে বলেছেন ওলি। ইতিমধ্যে তিনি মন্ত্রিসভার দায়িত্ব উপপ্রধানমন্ত্রীর হাতে অর্পণ করে ফেলেছেন। মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টায় ওলি সর্বদলীয় বৈঠক ডেকেছিলেন। বর্তমান পরিস্থিতির মোকাবিলা এবং আলোচনার মাধ্যমে সমাধান খোঁজার জন্য এই বৈঠক ডাকা হয়। একটি বার্তায় নেপালের প্রধানমন্ত্রী লিখেছিলেন, ‘‘এই পরিস্থিতির মোকাবিলা এবং সমাধান খোঁজার জন্য আমি নির্দিষ্ট কিছু দলের সঙ্গে আলোচনা চালাচ্ছি। মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টায় একটা সর্বদলীয় বৈঠকও ডেকেছি। এই কঠিন পরিস্থিতিতে সকল ভাইবোনকে শান্ত থাকার অনুরোধ করছি।’’ কিন্তু তার আগেই তাঁকে ইস্তফা দিতে হল।
মঙ্গলবার উত্তেজিত জনতা ওলির ব্যক্তিগত বাসভবনে আগুন ধরিয়ে দেয়। একের পর এক নেতা-মন্ত্রীর বাড়িতেও আগুন ধরিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
সম্প্রতি সমাজমাধ্যমে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল নেপাল সরকার। তা ঘিরেই বিতর্কের সূত্রপাত। দীর্ঘ দিনের পুঞ্জীভূত ক্ষোভের আগুনে ঘৃতাহুতি দেয় ওলির ওই সিদ্ধান্ত। প্রতিবাদে পথে নামে দেশের ছাত্র-যুবরা। তাদের বিক্ষোভে সোমবার অগ্নিগর্ভ হয়ে উঠেছিল রাজধানী কাঠমান্ডু। পরিস্থিতি সামাল দিতে পুলিশ গুলি চালায়। তাতে মৃত্যু হয় অন্তত ১৯ জন বিক্ষোভকারীর। এর পর বিক্ষোভের ঝাঁজ আরও বেড়ে গিয়েছে। চাপে পড়ে রাতেই নেপাল সরকার সমাজমাধ্যমের উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়ে বিবৃতি জারি করেছিল। কিন্তু তাতে চিঁড়ে ভেজেনি। মঙ্গলবার সকাল থেকে ওলির পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ শুরু হয়। পরিস্থিতি ক্রমে হাতের বাইরে চলে যাচ্ছিল। চাপে পড়ে ওলি পদ ছাড়লেন।
মঙ্গলবার নেপালের ত্রিভুবন বিমানবন্দর বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। সমস্ত বিমান বাতিল হয়ে গিয়েছে। সেনার হেলিকপ্টারে করে সকল মন্ত্রীকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এই কাজে অন্তত পাঁচটি হেলিকপ্টার দিয়েছে নেপাল সেনাবাহিনী। সূত্রের খবর, ওলিকেও তাঁর বাড়ি থেকে বার করে নিয়ে যাওয়া হবে। ত্রিভুবন বিমানবন্দরে ৩০০-র বেশি সেনা মোতায়েন করা হয়েছে।