সুভাষ-কন্যা অনিতা বসু পাফ
ধোঁয়াশা কাটুক, চাইছেন অনিতা বসু পাফও। সুভাষচন্দ্র বসু সংক্রান্ত সমস্ত নথি প্রকাশ করার জন্য সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর কাছে আর্জি জানিয়েছেন তিনি। জাপানের রেনকোজি মন্দিরে রাখা চিতাভস্ম আদৌ তাঁর বাবার কি না, তা জানতে ডিএনএ পরীক্ষারও দাবি করেছেন বছর বাহাত্তরের অনিতা।
সুভাষচন্দ্র সংক্রান্ত সব ফাইল প্রকাশের দাবি পরিবারের তরফে আগেও এসেছে। একই দাবি তুলে সম্প্রতি মোদী সরকারের উপর চাপ সৃষ্টি করেছেন প্রবীণ বিজেপি নেতা লালকৃষ্ণ আডবাণী। টানা ছ’বছর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন আডবাণী। এই নথি প্রকাশে তখন বিশেষ আগ্রহ না দেখালেও, এখন তাঁর দাবি— ‘‘সব নথি সামনে না এলে নেতাজিকে নিয়ে রহস্য থেকেই যাবে।’’
চাপ বাড়িয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। তাঁর সরকার চলতি মাসেই নিজেদের হেফাজতে থাকা সুভাষচন্দ্র সম্পর্কিত ৬৪টি ফাইল প্রকাশ করেছে। অনিতা চাইছেন, এ বার কেন্দ্রীয় সরকারও সেই পথে হাঁটুক। অর্থনীতিবিদ অনিতা জার্মানি থেকে সংবাদ সংস্থা পিটিআইকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এই আর্জি রেখেছেন। অক্টোবরে বসু পরিবারের ৫০ সদস্য দিল্লিতে মোদীর সঙ্গে দেখা করবেন। ঠিক তার আগেই অনিতার আর্জিতে কেন্দ্রের উপর চাপ আরও বাড়ল বলেই মনে করা হচ্ছে।
অনিতার বক্তব্য, শুধু মেয়ে হিসেবে নয়, এক জন বিদ্যোৎসাহী হিসেবেও তিনি চান সুভাষচন্দ্র সংক্রান্ত গত তিরিশ বছরের সব নথি সামনে আসুক। খোদ প্রধানমন্ত্রীর দফতরেই এমন ৪১টি গোপন ফাইল রয়েছে বলে সূত্রের খবর। যার মধ্যে দু’টি ফাইল গত এপ্রিল মাসে প্রকাশ করেছে কেন্দ্র। এ ছাড়া কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক, বিদেশ মন্ত্রক, ইন্টেলিজেন্স ব্যুরোর দফতরেও নেতাজি সংক্রান্ত বেশ কিছু প্রামাণ্য নথি আছে বলে দাবি সুভাষ-গবেষকদের। অনিতা চাইছেন, এর সবই প্রকাশ করুক ভারত সরকার।
গোপন নথি প্রকাশে পশ্চিমবঙ্গের ভূমিকা নিয়ে তাঁর কী বক্তব্য? সংবাদ সংস্থাকে ইমেল-সাক্ষাৎকারে অনিতা বলেছেন, ‘‘এখনও যে-হেতু সেই সব নথি আমার হাতে আসেনি, তাই তাতে কী রয়েছে বলতে পারব না।’’ অনেক গবেষক মনে করেন, সুভাষচন্দ্রের অন্তর্ধান রহস্যের উত্তর রয়েছে দিল্লির মহাফেজখানায়। কিছু নথি রয়েছে জাপান, রাশিয়া ও ব্রিটেনের কাছেও। অনিতা কি এদের কাছেও নথি প্রকাশের আর্জি জানাবেন? এর উত্তরেও তিনি বল ঠেলেছেন মোদী সরকারের কোর্টেই। তাঁর কথায়, ‘‘তথ্য জানার অধিকার তো কিছু দেশে আছেই। তাই এই বিষয়টি নিয়ে ভারত সরকার যদি এই তিন দেশের দ্বারস্থ হয়, খুবই ভাল হবে।’’ তবে নিজে সব ফাইল প্রকাশ না করা পর্যন্ত অন্যের কাছে সেই আর্জি জানানো যে সহজ হবে না, সেটাও মনে করিয়ে দিয়েছেন অনিতা।
১৯৪৫-এ তাইহোকো (বর্তমানে তাইওয়ান) বিমান দুর্ঘটনাতেই নেতাজির মৃত্যু হয়েছিল কি না, তা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। অনিতা মনে করেন, জাপানের রেনকোজি মন্দিরে রাখা চিতাভস্মের ডিএনএ পরীক্ষা হলে ধন্দ কাটতে পারে। এ ক্ষেত্রে অনিতার পরামর্শ, এ নিয়ে জাপানের সঙ্গে চুক্তি করুক দিল্লি। তবে নেতাজির মৃত্যু নয়, তাঁর জীবন এবং দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে তাঁর অবদানের কথা জানতেই ভারতবাসী বেশি আগ্রহী হোক, চাইছেন সুভাষ-কন্যা।