জঙ্গিদের নিরাপদ আশ্রয় হয়ে উঠেছে ঝাড়খণ্ড— একের পর এক ঘটনায় এমনই আশঙ্কা ছড়িয়েছে রাজ্যের পুলিশ মহলে। জঙ্গি-দমনে তাই আরও তৎপর হল ঝাড়খণ্ড পুলিশ।
রাজ্যে জঙ্গি সংগঠনের ‘স্লিপিং সেল’ ভাঙতে কয়েক দিন আগে তৈরি হয়েছে সন্ত্রাস দমন শাখা (এটিএস)। সম্প্রতি এনআইএ-র সঙ্গে যৌথ অভিযান চালিয়ে বর্ধমান বিস্ফোরণ-কাণ্ডে অন্যতম এক অভিযুক্তকে গ্রেফতার করেন ওই শাখার অফিসাররা। ঝাড়খণ্ড পুলিশের এডিজি সত্যনারায়ণ প্রধান বলেন, ‘‘আগামী দিনগুলোতে
জঙ্গি কার্যকলাপ বন্ধ করতে আরও তৎপর হবে এটিএস। জঙ্গিরা ঝাড়খণ্ডকে নিশ্চিত আশ্রয় ভাবলে ভুল করবে।’’
ঝাড়খণ্ডে জঙ্গি ‘আশ্রয়ের’ খোঁজ প্রথম মেলে ২০০২ সাল নাগাদ। সে বছর ২২ জানুয়ারি কলকাতার আমেরিকান সেন্টারে জঙ্গিহানা হয়। ওই ঘটনায় অন্যতম দুই অভিযুক্ত সেলিম, জাহিদ লুকিয়েছিল হাজারিবাগের খিরপুরে। হাজারিবাগেই দিল্লি পুলিশের অফিসারদের সঙ্গে সংঘর্ষে সেলিম ও জাহিদ গুরুতর জখম হয়। তাদের মৃত্যুকালীন জবানবন্দির সূত্র ধরেই পুলিশ ঘটনার মূল অভিযুক্ত আফতাব আনসারির নাম জানতে পারে। সেখানেই শেষ নয়। সম্প্রতি ইন্তেজার আলি নামে এক ব্যক্তিকে পুলিশ বর্ধমান-রাঁচি লোকাল ট্রেন থেকে বিস্ফোরক-সহ গ্রেফতার করে। পশ্চিমবঙ্গে জঙ্গি কার্যকলাপের সঙ্গে তার জড়িয়ে থাকার আশঙ্কা উড়িয়ে দিচ্ছেনা তদন্তকারীরা। বিহারের গাঁধী ময়দানে নরেন্দ্র মোদীর সভার আগে বিস্ফোরণে জড়িত অভিযুক্তের বাড়ির খোঁজ মেলে রাঁচিতে। ২০১৩
সালে রাঁচির কাঁকে থেকে ধরা পড়ে ইন্ডিয়ান মুজাহিদিন জঙ্গি সংগঠনের সদস্য মনজর ইমাম। বর্ধমান বিস্ফোরণ-কাণ্ডে আরও দুই অভিযুক্ত সাদিক ও রেজাউল করিম ধরা পড়ে রামগড় ও সাহেবগঞ্জে। পুলিশ সূত্রে খবর, এখনও পর্যন্ত রাজ্যে জঙ্গিদের পাঁচটি স্লিপিং সেলের খোঁজ মিলেছে। পুলিশকর্তাদের একাংশের আশঙ্কা, ইন্ডিয়ান মুজাহিদিন, জামাতুল মুজাহিজিন বাংলাদেশ-এর মতো জঙ্গি সংগঠনের জাল ছড়িয়েছে ঝাড়খণ্ডে।
কেন নিরাপদ ডেরা হিসেবে ঝাড়খণ্ডকে বেছে নিচ্ছে জঙ্গিরা? এটিএস-এর এক অফিসার জানান, ভৌগোলিক অবস্থানগত কারণে এ রাজ্যের কয়েকটি জায়গায় ঘাঁটি গড়ছে জঙ্গিরা। সাহেবগঞ্জের লাগোয়া পশ্চিমবঙ্গ। বাংলাদেশ সীমান্তও খুব দূরে নয়। পড়শি দেশ থেকে মুর্শিদাবাদ দিয়ে সহজেই সাহেবগঞ্জ, পাকুড় বা গোড্ডায় পৌঁছনো যায়। আবার পালানোর পথও সেখানে সহজ।
ওই সব এলাকা থেকে সম্প্রতি কয়েক জন জাল নোটের পাচারকারীকেও ধরেছে পুলিশ। এক তদন্তকারী অফিসারের কথায়, ‘‘বর্ধমান বিস্ফোরণ-কাণ্ডে অন্যতম অভিযুক্ত সাদিক বিয়ের পর সাহেবগঞ্জেই সংসার শুরু করেছিল।’’
জঙ্গিদের সেই নিরাপদ আশ্রয়গুলিই এ বার ভাঙতে চায় এটিএস। ওই শাখার সুপার পি মুরুগান বলেন, ‘‘আমাদের কিছু পরিকল্পনা রয়েছে। এখানে লুকিয়ে থাকা জঙ্গিদের যে কোনও ভাবে ধরা হবেই।’’