রাজ্যে অর্ধশতাধিক হাসপাতাল চলছে বিনা চিকিৎসকেই। হাইলাকান্দি, করিমগঞ্জের হাসপাতালে নেই নার্সও। বিকল এক্স-রে, বন্ধ ব্লাড ব্যাঙ্ক। সেই ছবি বদলানোর আশ্বাস দিলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মা। পাশাপাশি তিনি জানালেন, শিলচর ও তেজপুরে তৈরি করা হবে ১০০ শয্যার ক্যানসার হাসপাতাল।
আজ বাজেট অধিবেশনের দ্বিতীয় দিনে করিমগঞ্জের বিধায়ক কমলাক্ষ দে পুরকায়স্থের প্রশ্নের উত্তরে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানান, অসমের ৫০টি হাসপাতাল-স্বাস্থ্যকেন্দ্র চলছে চিকিৎসক ছাড়াই। ৫৪টি হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নেই নার্সও। জরুরি ভিত্তিতে বিভিন্ন স্তরে ডাক্তারদের ৭৮৬টি পদ পূরণের জন্য অসম লোকসেবা আয়োগের মাধ্যমে বিজ্ঞাপন প্রকাশ করা হয়েছে। শ্রীমন্ত শঙ্ককদেব শঙ্করদেব স্বাস্থ্য বিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দু’বছরের পাঠ্যক্রম শেষ করা চিকিৎসকদের বিভিন্ন জেলা ও গ্রামের স্বাস্থ্যকেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে।
করিমগঞ্জ হাসপাতালে নার্স, চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মী, টেকনিশিয়ানের অভাবের কথা তুলে ধরেন কমলাক্ষবাবু। তিনি জানান, হাসপাতালে যে তিন জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ছিলেন, তাঁদেরও অন্য জায়গায় বদলি করা হয়েছে। হিমন্ত দ্রুত সেখানে শূন্যপদ পূরণের প্রতিশ্রুতি দেন। তিনি জানান, সরকারি হাসপাতালগুলির উন্নয়নের লক্ষ্যে স্বাস্থ্যকর প্রতিযোগিতার পরিবেশ দরকার। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের আকর্ষণ করার মতো প্যাকেজ ও পরিকাঠামো বিকাশের কথাও ভাবা হচ্ছে।
হাইলাকান্দির বিধায়ক আনোয়ার হুসেন লস্কর অভিযোগ করেন, ১০০ শয্যার হাইলাকান্দি হাসপাতাল চিকিৎসক ও নার্সের অভাবে ধুঁকছে। গোটা জেলার এক মাত্র হাসপাতাল হলেও সেখানে পর্যাপ্ত ওষুধ পর্যন্ত মেলে না। হাসপাতালের ব্লাড ব্যাঙ্ক বন্ধ, এক্স-রে, সোনোগ্রাফি যন্ত্র খারাপ।
হিমন্ত জানান, হাইলাকান্দি হাসপাতালে চিকিৎসক থাকার কথা ২২ জন। কিন্তু রয়েছেন মাত্র ৯ জন। হাসাপাতালে সুপার, ডেপুটি সুপারও নেই। রক্ত নেওয়ার লোক থাকলেও সঞ্চয় করার ব্যবস্থা নেই। ১৭ জন নার্স কম আছেন। হাসপাতালের ব্লাড ব্যাঙ্ক, এক্স-রে ও সোনোগ্রাফি যন্ত্র সারানোর প্রক্রিয়া চলছে। তবে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর মতে, হাসপাতাল চত্বরে থাকা রিজিওনাল ডায়াগনস্টিক সেন্টারের এক্স-রে ও সিটি স্ক্যান যন্ত্র কাজ করছে। রোগীরা সেখানে যেতে পারেন। তিনি জানান, রেডিওলজিস্ট ও সোনোলজিস্ট নিয়োগ করার প্রক্রিয়াও চলছে। রাজ্য সরকার ডাক্তারদের শূন্যপদ পূরণে যে বিজ্ঞাপন দিয়েছে, সেখান থেকেই হাইলাকান্দি হাসপাতালের শূন্যপদ পূরণ করা হবে।
বিধায়ক আমিনুল ইসলামের প্রশ্নের জবাব হিমন্ত জানান, রাজ্যের সব বিধানসভা কেন্দ্রে একটি করে মডেল হাসপাতাল তৈরির পরিকল্পনা থাকলেও এখনও পর্যন্ত ১১৬টির কাজ শুরু হয়েছে। তার মধ্যে কাজ শেষ হয়েছে ৭৪টির। ৬০টি হাসপাতালে চিকিৎসা ও রোগী ভর্তিও শুরু হয়ে গিয়েছে। শিলচর, ডিফু, পূর্ব বিলাসীপাড়া, গোঁসাইগাঁও, পূর্ব কোকরাঝাড়, বঙাইগাঁও, বরপেটা, বকো, পূর্ব গুয়াহাটি, পানেরি, মাজবাট, ধিং, ডিব্রুগড়, নাহরকটিয়া ও নাজিরায় মডেল হাসপাতাল গড়ার কাজ শুরু হয়নি।
রাজ্যে ক্যানসার রোগীর সংখ্যা বাড়ছে বলে জানিয়ে হিমন্ত জানান, গত পাঁচ বছরে রাজ্যে ৮৬ হাজার ৮০৫ জন ক্যানসার রোগীর নাম বি বরুয়া ক্যানসার হাসপাতালে নথিভুক্ত হয়েছে। সেই তুলনায় রাজ্যে ক্যানসার চিকিৎসাকেন্দ্রের সংখ্যা কম। মন্ত্রী জানান, সব সরকারি হাসপাতালে থাকবে ক্যানসারের ওপিডি। বরপেটা ও ডিব্রুগড় মেডিক্যাল কলেজে পৃথক ক্যানসার হাসপাতাল তৈরি করা হবে। তেজপুর ও শিলচরে ১০০ শয্যার ক্যানসার হাসপাতাল তৈরি করা হবে। প্রতি বছর নভেম্বর মাসকে ক্যানসার সচেতনতা মাস হিসেবে পালন
করা হবে। ১২ অগস্ট গুয়াহাটি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ক্যানসার শণাক্তকরণে নতুন প্রযুক্তি পেটসিটি স্ক্যান মেশিনের উদ্বোধন করবেন মুখ্যমন্ত্রী। ক্যানসারের চিকিৎসা বিনামূল্য করার কথাও ঘোষণা করেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী।