তামিলনাড়ুতে টক্কর এ বার দুই নয়া মুখে

তামিলনাড়ুতে এ বার শশিকলা নটরাজন বনাম এম কে স্ট্যালিন! এডিএমকে নেত্রী জে জয়ললিতা মারা গিয়েছেন গত মাসের ৫ তারিখ। এক মাসের মধ্যেই সক্রিয় রাজনীতি থেকে বিশ্রামে গেলেন ৯৩ বছর বয়সি ডিএমকে-প্রধান এম কে করুণানিধি।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

চেন্নাই শেষ আপডেট: ০৫ জানুয়ারি ২০১৭ ০৩:১২
Share:

ডিএমকে-র রাশ হাতে পাওয়ার পরে বাবা করুণানিধিকে প্রণাম স্ট্যালিনের। ছবি: পি টি আই

তামিলনাড়ুতে এ বার শশিকলা নটরাজন বনাম এম কে স্ট্যালিন!

Advertisement

এডিএমকে নেত্রী জে জয়ললিতা মারা গিয়েছেন গত মাসের ৫ তারিখ। এক মাসের মধ্যেই সক্রিয় রাজনীতি থেকে বিশ্রামে গেলেন ৯৩ বছর বয়সি ডিএমকে-প্রধান এম কে করুণানিধি। দলে সভাপতিই থাকছেন তিনি। তবে দলের রাশ তুলে দেওয়া হল তাঁর ছেলে স্ট্যালিনের হাতে। এ জন্য নতুন একটি পদই তৈরি করেছে দল— কার্যনির্বাহী সভাপতি। এই নতুন দায়িত্বের পাশাপাশি দলের কোষাধ্যক্ষ পদে এবং যুব শাখার শীর্ষেও থাকবেন ৬৩ বছর বয়সি এই ডিএমকে নেতা।

চার দশকেরও বেশি সময় ধরে রাজনীতিতে আছেন স্ট্যালিন। মেগাফোন হাতে প্রথম বার যখন পুরভোটের প্রচারে পথে নামেন, তখন তিনি নেহাতই কিশোর। বাড়িতে বাবার কাছে দেশের তাবড় নেতাদের আনাগোনা দেখতে দেখতে পুরোদস্তুর রাজনীতিতে আসার স্বপ্নটা দানা বাঁধে। মাঝের সময়টুকুতে নানান রাজনৈতিক ওঠাপড়ার পাশাপাশি, সামলেছেন পারিবারিক বিরোধও। সৎ দাদা আলাগিরি এক সময়ে কেন্দ্রে মন্ত্রী হলেও দলের শীর্ষপদটি স্ট্যালিনকে ছাড়তে রাজি ছিলেন না কোনও মতেই। ২০১৪ সালে দলবিরোধী কাজের জন্য দল থেকে তাঁকে বহিষ্কার করে দেওয়া হয়। ফলে সে ভাবে কোনও বিরোধ ছিল না দলে। স্ট্যালিনের অভিষেক ছিল সময়ের অপেক্ষা। কী ভাবে কখন তা ঘটবে, তা নিয়েই চলছিল জল্পনা। করুণানিধির বার্ধক্য ও অসুস্থতা ত্বরাণ্বিত করল সেটা। আজ দলের সাধারণ পরিষদের বৈঠকে উপস্থিত সাড়ে তিন হাজারেরও বেশি সদস্য সর্বসম্মতিতে স্ট্যালিনের হাতে দায়িত্ব সঁপে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। দলের গঠনতন্ত্রেও কিছু বদল ঘটানো হয় এ জন্য। সদ্য হাসপাতাল ফেরত করুণানিধি এই বৈঠকে যেতে পারেননি। দলের ৫০ বছরের ইতিহাসে এই প্রথম এমনটা ঘটল। চিকিৎসকেরা তাঁকে বিশ্রাম নিতে বলেছেন।

Advertisement

দলের রায় পেয়েই স্ট্যালিন সোজা চলে যান বাবার কাছে। আশীর্বাদ নেন দলের শীর্ষনেতার। দলে দলে ডিএমকের নেতারা ভিড় করেন বাড়িতে, শুভেচ্ছা জানিয়ে যান। শুভেচ্ছা জানিয়েছেন সৎ বোন তথা প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী কানিমোঝিও। স্ট্যালিনের অনুগামীরা এই দিনটির জন্য অপেক্ষায় ছিলেন দীর্ঘদিন ধরে। দলের বৈঠকে ‘থালাপথি (কম্যান্ডার)’-এর অভিষেকের সিদ্ধান্ত হতেই বাইরে উল্লাসে ফেটে পড়েন তাঁরা। পটকা ফাটিয়ে, মিষ্টি বিলিয়ে চলতে থাকে উৎসব। নয়া দায়িত্ব পাওয়ার পরে বক্তব্য রাখতে গিয়ে অবশ্য গলা ভারী হয়ে আসে স্ট্যালিনের। বলেন, আগে কোনও দায়িত্ব পেলে আনন্দ হতো। কিন্তু এখন যে অবস্থায় এই গুরুভার পেলাম, তাতে মন বিষণ্ণ হয়ে রয়েছে। শরীর ভাল নেই আমাদের সকলের নেতার। বিশ্রাম দরকার তাঁর।’’

‘থালাপথি’-র অভিষেকে তামিলনাড়ুর রাজনীতিতে নতুন এক পর্বের সূচনা ঘটল। দীর্ঘদিন ধরেই জয়ললিতা ও করুণানিধি— এই দু’টি মুখকে উল্টেপাল্টে ক্ষমতায় এনেছেন তামিলনাড়ুর মানুষ। জয়ার অবর্তমানে এডিএমকে-তে আপাত ভাবে ক্ষমতার কেন্দ্র এখন দু’টি। দলের শীর্ষে প্রয়াত জয়ললিতার দীর্ঘদিনের সহচর শশিকলা। আর সরকারের নেতৃত্বে জয়ললিতারই বিশ্বস্ত ও পনীরসেলভম। দলের অন্দরে এ নিয়ে টানাপড়েন রয়েছে প্রথম থেকেই। সরকারের শীর্ষেও শশিকলাকে বসানোর জন্য সওয়াল শুরু করে দিয়েছেন লোকসভার ডেপুটি স্পিকার এম থাম্বিদুরাইয়ের মতো দলের কিছু প্রবীণ নেতা।

সে অর্থে ডিএমকে শিবিরে তেমন কোনও কাঁটা নেই স্ট্যালিনের পথে। পথে নেমে মানুষের ভিড়ে মিশে যেতে অভ্যস্ত করুণানিধির এই পুত্রটি। ‘পেসলম ভাঙ্গা (আসুন কথা বলি)’, ‘নামাক্কু নামে (আমরা আমাদের)’-র মতো স্লোগান তুলে রাজ্য চষে বেড়িয়েছেন এক সময়ে। ফলে দলের নেতৃত্বে গুছিয়ে বসতে তেমন কোনও বেগ পেতে হবে না বলেই মনে করা হচ্ছে। তাঁর লড়াইটা এ বার শশিকলার বিরুদ্ধে। কোনও দিনই যিনি পথে নেমে রাজনীতি করেননি। জয়ললিতার অন্তঃপুরে থেকেই পাঠ নিয়েছেন রাজনীতির।

কেমন হবে দুই নতুন মুখের টক্কর? এর জন্য কিছু দিন অপেক্ষা করতেই হবে। রাজ্যে ভোটের এখনও চার বছরেরও বেশি বাকি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন