২২ সেপ্টেম্বর থেকে কার্যকর হচ্ছে জিএসটি-র নতুন হার। —প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
আগামী সোমবার (২২ সেপ্টেম্বর) থেকে দেশে পণ্য এবং পরিষেবা কর (জিএসটি)-এর নতুন হার কার্যকর হবে। নিত্যপ্রয়োজনীয় অধিকাংশ জিনিসের দাম কমবে। তুলনায় অল্প কিছু পণ্যের দাম বাড়বে। কিন্তু পণ্যের প্যাকেটে পুরনো মুদ্রিত মূল্যই ছাপা থাকবে কি না, তা নিয়ে ক্রেতা এবং বিক্রেতাদের মধ্যে একটি সংশয় তৈরি হয়েছে। সংশয় দূর করতে কেন্দ্রের উপভোক্তা বিষয়ক মন্ত্রক নতুন একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে । ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, প্রস্তুতকারী সংস্থাগুলিকে পণ্যের নতুন দাম জানানোর জন্য সংবাদপত্রে বিজ্ঞাপন না-দিলেও চলবে।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে, নতুন প্যাকেট বা মোড়কের উপর স্টিকার লাগিয়ে ক্রেতাদের নতুন দাম জানানো যেতে পারে। এই ভাবে ২২ সেপ্টেম্বরের আগেই তৈরি হওয়া বা প্যাকেটজাত করা জিনিস নতুন দামে বিক্রি করতে হবে। প্যাকেটে পুরনো দাম দেখা গেলেও অসুবিধা নেই বলে জানানো হয়েছে ওই বিজ্ঞপ্তিতে। অর্থাৎ, একটি প্যাকেটে দু’টি দামের উল্লেখ থাকবে। একটি পুরনো দাম, আর একটি নতুন। সে কারণে ক্রেতাদের মুদ্রিত মূল্য ভাল করে খুঁটিয়ে দেখার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। আগামী ৩১ মার্চ পর্যন্ত অথবা যত দিন না দোকানে থাকা পণ্য পুরো শেষ হচ্ছে, তত দিন পুরনো মোড়ক বা প্যাকেটে জিনিস বিক্রি করা যাবে।
বিভ্রান্তি যাতে না-ছড়ায়, তার জন্য সব রকম মাধ্যম ব্যবহার করে সংস্থাগুলিকে দোকানদার এবং ক্রেতাদের নতুন দাম নিয়ে অবহিত করার পরামর্শ দিচ্ছে কেন্দ্র। সে ক্ষেত্রে নতুন মূল্যতালিকা তুলে দিতে হবে খুচরো এবং পাইকারি বিক্রেতাদের কাছে। মূল্যতালিকা দিতে হবে ‘লিগ্যাল মেট্রোলজি’ কর্তৃপক্ষকেও। তবে বাণিজ্যমহলের একাংশের আশঙ্কা, ছোট দোকানগুলিতে ক্রেতাদের কাছে পুরনো দামেই জিনিস বিক্রি করা হতে পারে। সে ক্ষেত্রে একদম প্রান্তিক স্তরেও যাতে ক্রেতা এবং বিক্রেতা উভয়েই নতুন দামের বিষয়ে অবহিত থাকতে পারেন, সেই বিষয়টি নিশ্চিত করার চেষ্টা হচ্ছে।
প্রথমে পণ্য প্রস্তুতকারী সংস্থাগুলিকে নতুন
দাম জানিয়ে দু’টি সংবাদপত্রে বিজ্ঞাপন দিতে বলা হয়েছিল। কিন্তু নতুন বিজ্ঞপ্তিতে
সেই নির্দেশিকা প্রত্যাহার করা হয়েছে। কিন্তু তাদের কাজ সহজ করতে নতুন বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, যে কোনও মাধ্যম ব্যবহার করে ক্রেতা এবং বিক্রেতাদের নতুন দাম জানিয়ে দিলেই চলবে।
নতুন জিএসটির হারে সস্তা হচ্ছে কী কী
দুধ, ছানা, পনির, রুটি, পাউরুটির উপর পাঁচ শতাংশ জিএসটি ছিল। তা প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে।
কনডেনস্ড মিল্ক, মাখন, ঘি, তেল, চিজ় এবং দুগ্ধজাত যাবতীয় পণ্যের উপর ১২ শতাংশ থেকে কমিয়ে জিএসটি করা হয়েছে পাঁচ শতাংশ। একই হার প্রযোজ্য বাদাম, খেজুর, আনারস, অ্যাভোকাডো, পেয়ারা, আম এবং অন্যান্য ফলের ক্ষেত্রে।
পশুচর্বি, সসেজ়, সংরক্ষিত বা রান্না করা মাংস, মাছ, চিনি, পাস্তা, নুডল্স, স্প্যাগেটি এবং বিভিন্ন সব্জির দাম কমছে। জিএসটি এ সব ক্ষেত্রে ১২ শতাংশ থেকে ৫ শতাংশে নামছে।
জ্যাম, জেলি, মাশরুম, নারকেলের জল, ইস্ট, সর্ষে, সয়াবিন, ভুজিয়া এবং পানীয় জলের ২০ লিটারের বোতলের উপর থেকে জিএসটি ১২ শতাংশ থেকে কমে হল পাঁচ শতাংশ।
মধু, মিছরি, চকোলেট, কর্নফ্লেক্স, কেক, পেস্ট্রি, স্যুপ, আইসক্রিম, জিলেটিনের উপর থেকে জিএসটি কমানো হয়েছে। এত দিন ১৮ শতাংশ জিএসটি ছিল এই সমস্ত পণ্যে। কমে হয়েছে পাঁচ শতাংশ।
এ ছাড়া, যাবতীয় জীবনবিমা এবং স্বাস্থ্য বীমার উপর থেকে জিএসটি সম্পূর্ণ প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে।
বিড়ির দাম কমছে। বিড়ির পাতার উপর ১৮ শতাংশ থেকে জিএসটি কমে হচ্ছে পাঁচ শতাংশ। বিড়ির উপর ২৮ শতাংশ থেকে জিএসটি কমে হচ্ছে ১৮ শতাংশ।
সালফিউরিক অ্যাসিড, নাইট্রিক অ্যাসিড, অ্যামোনিয়ার উপর জিএসটি পাঁচ শতাংশে নামিয়ে আনা হচ্ছে।
টিভি, এসি, ছোট গাড়ি, ৩৫০ সিসি-র নীচে বাইকের দাম কমছে। এখন থেকে এই পণ্যগুলিতে ১৮ শতাংশ জিএসটি নেওয়া হবে।
নতুন জিএসটির হারে দামি হচ্ছে কী কী
বিলাসবহুল গাড়ি, মোটরসাইকেল, প্রাইভেট জেট, রেসিং কারের উপর ৪০ শতাংশ জিএসটি আরোপ করা হয়েছে।
পানমশলা, বাড়তি চিনি মিশ্রিত পানীয়, কার্বনযুক্ত পানীয়ের দাম বাড়ছে। ২৮ শতাংশ থেকে জিএসটি করা হচ্ছে ৪০ শতাংশ।