কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারীদের জুলাই মাস থেকেই নতুন হারে বেতন দিতে চাইছে নরেন্দ্র মোদী সরকার। অর্থাৎ, ১ অগস্ট কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারীরা যে বেতন পাবেন, সেটা তাঁরা বর্ধিত হারেই পাবেন।
গত বছরের নভেম্বরে সপ্তম বেতন কমিশনের সুপারিশ জমা পড়ার পরে তা খতিয়ে দেখে কার্যকর করার জন্য একটি এমপাওয়ার্ড কমিটি তৈরি করে মোদী সরকার। ক্যাবিনেট সচিব পি কে সিন্হার নেতৃত্বে ওই কমিটিতে ১৩ জন সচিবকে সদস্য করা হয়। সেই কমিটির কাজ চূড়ান্ত পর্যায়ে। এর পর কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার অনুমোদন মিললেই নতুন বেতনক্রম কার্যকর হবে।
বিচারপতি এ কে মাথুরের নেতৃত্বাধীন সপ্তম বেতন কমিশন মূল বেতনে ১৪.২৭% বৃদ্ধির সুপারিশ করেছিল। কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারীদের জন্য ন্যূনতম বেতন মাসে ১৮ হাজার টাকা ও সর্বাধিক বেতন মাসে ২ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা করারও সুপারিশ করেছিল বেতন কমিশন। চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে নতুন বেতনক্রম কার্যকর হওয়ার কথা। নতুন বেতনক্রম চালু হলে উপকৃত হবেন ৪৭ লক্ষ কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারী ও ৫৩ লক্ষ পেনশনভোগী। তবে ১ অগস্ট থেকে নতুন হারে বেতন চালু হলে কবে থেকে বকেয়া বেতন মিলবে, তা এক কিস্তিতেই মিলবে কি না, জানার জন্যও অধীর অপেক্ষায় কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারীরা। তবে কেন্দ্রের সপ্তম বেতন কমিশন কার্যকর করার পরিস্থিতিতে এলেও পশ্চিমবঙ্গে রাজ্য সরকারি কর্মীরা তাদের জন্য গঠিত বেতন কমিশন নিয়ে এখনও অন্ধকারেই। রাজ্যে ষষ্ঠ বেতন কমিশন গঠিত হয়েছে। প্রথম ছয় মাস কেটে যাওয়ার পরে তার মেয়াদ ছয় মাস বাড়ানো হয়েছে। কিন্তু এখনও কাজই শুরু করতে পারেনি এই কমিশন।
তবে কেন্দ্রের সপ্তম বেতন কমিশনের সুপারিশ ঘিরে প্রথম থেকেই কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারী ও শ্রমিক সংগঠনগুলির মধ্যে অসন্তোষ ছিল। সকলেরই দাবি ছিল, কমিশন যে বেতন বৃদ্ধির সুপারিশ করেছে, তা যথেষ্ট নয়। সঙ্ঘ-পরিবারের শ্রমিক সংগঠন বিএমএস-ও এ নিয়ে আপত্তি তোলে। যুক্তি ছিল, কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী মূল বেতন, ভাতা ইত্যাদি মিলে মোট বেতনে মাত্র ১৬ শতাংশ বৃদ্ধি হবে। তাই দাবি ওঠে, কমিশনের সুপারিশের থেকেও বেশি হারে বেতন বাড়াক মোদী সরকার।
কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মীদের ক্ষেত্রে প্রতি ১০ বছর অন্তর বেতন কমিশনের সুপারিশ মেনে বেতন কাঠামো বদল হয়। এত দিন যে ষষ্ঠ বেতন কমিশন চালু ছিল, তার সুপারিশ কার্যকর হয় ২০০৬-র ১ জানুয়ারি থেকে। ষষ্ঠ বেতন কমিশনে কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মীদের মোট বেতনে প্রায় ৩৫% বৃদ্ধি হয়েছিল। এ বার তাই মোদী সরকারের কাছে দাবি ছিল, মোট বেতনের অন্তত ৩০% বৃদ্ধি করা হোক। সে ক্ষেত্রে ন্যূনতম মূল বেতন প্রায় ২১ হাজার টাকা এবং সর্বোচ্চ বেতন প্রায় ২ লক্ষ ৭০ হাজার টাকায় পৌঁছতে পারে।
কমিশনের হিসেব অনুযায়ী, বেতন, ভাতা ও পেনশন বাবদ সরকারের খরচ প্রায় ২৩.৫% বাড়বে।
অর্থ মন্ত্রকের অনুমান, সপ্তম বেতন কমিশন কার্যকর করতে গেলে সরকারি কোষাগারে ১.০২ লক্ষ কোটি টাকার বাড়তি বোঝা চাপবে। এর মধ্যে রেল কর্মচারীদের জন্য রেলের বাজেট থেকে ব্যয় হবে ২৮ হাজার ৪৫০ কোটি টাকা। সাধারণ বাজেট থেকে ব্যয় হবে ৭৩ হাজার ৬৫০ কোটি টাকা। সপ্তম বেতন কমিশনের সুপারিশ কার্যকর হলে আরও এক দফা মূল্যবৃদ্ধির আশঙ্কা রয়েছে। রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর রঘুরাম রাজনও এই আশঙ্কার কথা স্বীকার করেছেন।