মোদীর ধমক খেয়ে স্বামীর মুখে গীতা

প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নরসিংহ রাওয়ের শপথ গ্রহণের দিন দুয়েক আগের কথা। ভারতের অর্থনীতি তখন চরম সঙ্কটে। উদ্ধারের পরামর্শ চেয়ে নরসিংহের ফোন এসেছিল হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের এই প্রাক্তনীর কাছে। এই অর্থনীতিবিদ পূর্বতন চন্দ্রশেখর-সরকারে বাণিজ্যমন্ত্রী ছিলেন। নাম সুব্রহ্মণ্যম স্বামী।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৯ জুন ২০১৬ ০৩:১৫
Share:

প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নরসিংহ রাওয়ের শপথ গ্রহণের দিন দুয়েক আগের কথা। ভারতের অর্থনীতি তখন চরম সঙ্কটে। উদ্ধারের পরামর্শ চেয়ে নরসিংহের ফোন এসেছিল হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের এই প্রাক্তনীর কাছে।

Advertisement

এই অর্থনীতিবিদ পূর্বতন চন্দ্রশেখর-সরকারে বাণিজ্যমন্ত্রী ছিলেন। নাম সুব্রহ্মণ্যম স্বামী। সে দিন তিনি নরসিংহকে অর্থনীতির হাল বদল নিয়ে কিছু পরামর্শ দিয়েছিলেন। যার অনেক কিছুই মেনে নিয়েছিলেন নরসিংহ।

প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী নরসিংহ রাওকে নিয়ে লেখা সদ্য প্রকাশিত বই ‘হাফ লায়ন’-এ ফোনে কথোপকথনের সেই কথা তুলে ধরা হয়েছে। চন্দ্রশেখর এমনকী নরসিংহ রাও সরকারের আমলেও যে দাপট ছিল সুব্রহ্মণ্যম স্বামীর, আজ তা অনেকটাই কম। উল্টে কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গাঁধীর তীব্র সমালোচনা ছেড়ে ক্রমাগত সরকারের নানা বিষয়ে মুখে খুলে সদ্য গত কালই প্রধানমন্ত্রীর কড়া ধমক খেয়েছেন। আর তার পরেই গীতার আশ্রয়ে চলে গিয়েছেন দাপুটে সুব্রহ্মণ্যম স্বামী!

Advertisement

আসলে বিজেপির পছন্দের সনিয়া-নিন্দার লাইন ছেড়ে আচমকাই কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলির অর্থ দফতরের শীর্ষ কর্তাদের নিশানা করতে শুরু করেছিলেন স্বামী। কখনও রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর রঘুরাম রাজন, কখনও মুখ্য অর্থনৈতিক উপদেষ্টা অরবিন্দ সুব্রহ্মণিয়ন, কখনও অর্থ বিষয়ক সচিব শক্তিকান্ত দাস, এমনকী জেটলিকেও তোপ দাগেন তিনি। প্রবল অস্বস্তির মুখে গত কালই এক সাক্ষাৎকারে মোদী প্রকাশ্যে স্বামীর ভর্ৎসনা করে বুঝিয়েছেন, এমন আচরণ মোটেই বরদাস্ত করবেন না তিনি। আর তার পরেই চুপ মুখর স্বামী! কংগ্রেস অবশ্য এই চুপ থাকাকে বিশেষ পাত্তা দিচ্ছে না। মোদীর ধমক প্রসঙ্গে কংগ্রেস নেতা কপিল সিব্বল বলেন, ‘‘এ সবই লোক দেখানো। যখন স্বামী রাজনকে লাগাতার আক্রমণ করে যাচ্ছিলেন, তখন প্রধানমন্ত্রী তাঁকে নিরস্ত করেননি কেন? এখন রাজন চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী আসরে নামলেন!’’

আর স্বামী? মঙ্গলবার সকাল থেকে টুইট করলেও তাতে চেনা ঝাঁঝ উধাও। মনের অবস্থা বোঝানোর জন্য আজ তিনি গীতার শরণাপন্ন। সুখ-দুঃখ, জয়-পরাজয় নিয়ে গীতার উপদেশ শুনিয়ে টুইটে তিনি লিখেছেন, ‘‘পৃথিবীতে সাধারণ ভাবে একটি ভারসাম্য রয়েছে। কোনও এক মাপকাঠির একটি ছোট পরিবর্তন বাকি সব কিছুর পরিবর্তন করে। তাই কৃষ্ণ উপদেশ দিয়েছিলেন, সুখ দুখে…।’’

বিশদে ব্যাখ্যা না করলেও স্বামী গীতার দ্বিতীয় অধ্যায়ের ৩৮–তম শ্লোকের কথা উল্লেখ করেছেন। যেখানে সুখ-দুঃখ, জয়-পরাজয়— সব কিছুতেই সমান মানসিকতা বজায় রাখার কথা বলা রয়েছে। অবশ্য এখানেই থামেননি তিনি। মনে করিয়ে দিয়েছেন, রাজীব গাঁধীর শেষকৃত্যের জন্য কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হিসেবে তিনি কত সাহায্য করেছিলেন। আর তার পরেই ফের স্বামীর মুখে সনিয়া! নরসিংহ রাওয়ের শেষকৃত্যের সময় কংগ্রেসের বর্তমান সভানেত্রী কী করেছিলেন, সেটা মনে করিয়ে সনিয়াকে খোঁচা দিতে ছাড়েননি স্বামী।

তাতে অবশ্য বিশেষ মন গলছে না বিজেপি নেতাদের। অনেকেই বলছেন, সদ্য গত কালই প্রধানমন্ত্রীর কড়া ধমক খেয়ে আপাতত কিছুটা চুপ করে আছেন বটে, কিন্তু কবে যে মুখ খুলে স্বামী দলের মুখ পোড়াবেন, কে জানে! আর লালু প্রসাদের কটাক্ষ, ‘‘আরএসএস সুব্রহ্মণ্যম স্বামীকে নিয়ে এসেছিল সনিয়া গাঁধীকে নিশানা করতে। এখন সেটিই তাদের বুমেরাং হয়ে গিয়েছে!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন