নিহত নিকি ভাটি ও স্বামী বিপিন ভাটি। — ফাইল চিত্র।
নয়া মোড় নিল গ্রেটার নয়ডায় পণের দাবিতে বধূহত্যার তদন্ত। এ বার খোদ নিকি ভাটির পরিবারের বিরুদ্ধেই একই রকম অভিযোগ আনলেন মৃতার ভাইয়ের বিচ্ছিন্না স্ত্রী। যুবতীর দাবি, পণের দাবিতে চাপ দেওয়া হত তাঁকেও। এমনকি, যৌতুক দিতে না পারায় বিয়ের পর পরই বাপের বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল তাঁকে।
সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি-র একটি প্রতিবেদন সূত্রে জানা গিয়েছে, পাল্লা গ্রামের বাসিন্দা ওই যুবতীর নাম মীনাক্ষী। বছর ৩১-এর ওই যুবতী নিকির ভাই রোহিত পায়লার প্রাক্তন স্ত্রী। ২০১৬ সালে রোহিতের সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল তাঁর। মিনাক্ষীর দাবি, বিয়েতে যৌতুক হিসাবে নিকির পরিবারের তরফে গাড়ি দাবি করা হয়েছিল। সেই মতো জামাইকে একটি মারুতি সুজ়ুকি সিয়াজ গাড়ি কিনে দেন মীনাক্ষীর বাবা। কিন্তু তাতে মন ভরেনি নিকির পরিবারের। এমনকি, দিন কয়েক পরেই ‘অশুভ’ তকমা দিয়ে গাড়িটি বিক্রি করে দেন শ্বশুরবাড়ির লোকেরা।
অভিযোগ, এর পর নিকির পরিবার নতুন আর একটি গাড়ি কিনে দেওয়ার জন্য মিনাক্ষীদের চাপ দিতে থাকে। একটি স্করপিও এসইউভি এবং নগদ টাকা দাবি করা হয়। মিনাক্ষীর বাবা সেই দাবি পূরণ করতে না পারলে মেয়েকে সটান বাপের বাড়ি ফেরত পাঠিয়ে দেয় নিকির পরিবার। হাতে-পায়ে ধরেও লাভ হয়নি। শেষমেশ বিষয়টি গ্রাম পঞ্চায়েতে গড়ায়। সালিশি সভায় নিদান দেওয়া হয়, হয় মেয়েকে পূত্রবধূ হিসাবে ফিরিয়ে নিতে হবে, অন্যথায় বিয়ের খরচ বাবদ ৩৫ লক্ষ টাকা মিনাক্ষীর পরিবারকে ফেরত দেবেন নিকিরা, যাতে বাবা-মা অন্যত্র মীনাক্ষীর বিয়ে দিতে পারেন। কিন্তু এর কোনওটিই মানেননি নিকির বাবা ভিখারি সিংহ পায়লা। মাঝে এতগুলো বছর কেটে গেলেও বিষয়টি অমীমাংসিতই থেকে যায়। বিয়ে ভেঙে যায় মিনাক্ষীর।
মীনাক্ষী আরও জানিয়েছেন, নিকির বাবা ও শ্বশুর সত্যবীর সিংহ একে অপরের বন্ধু ছিলেন। সে জন্যই বন্ধুর দুই মেয়ের সঙ্গে নিজের দুই ছেলের বিয়ে দিয়েছিলেন সত্যবীর। মিনাক্ষীর দাবি, সত্যবীর তাঁর বাবাকে আশ্বস্ত করেছিলেন যে তিনি ভিখারির সঙ্গে কথা বলে তাঁদের টাকা ফেরত পাইয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করবেন। মিনাক্ষীর বিয়ে ভেঙে যাওয়া নিয়েও বেশ কয়েক বার বন্ধুকে বোঝানোর চেষ্টা করেছিলেন সত্যবীর কিন্তু কোনও কিছুতেই চিঁড়ে ভেজেনি!
গ্রেটার নয়ডায় নিকি ভাটির মৃত্যুর ঘটনায় ইতিমধ্যে চার অভিযুক্তকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ২২ অগস্ট কাসনা থানায় নিকির শ্বশুরবাড়ির চার সদস্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের হয়। সোমবারের মধ্যে একে একে ধরা পড়েন নিকির স্বামী বিপিন ভাটি, শাশুড়ি দয়াবতী, ভাশুর রোহিত এবং শ্বশুর সত্যবীর। অভিযোগ, বিয়েতে স্করপিয়ো গাড়ি, এনফিল্ড বাইক, নগদ টাকা, সোনা— নানা উপহার দেওয়া সত্ত্বেও নিকির শ্বশুরবাড়ির লোকেরা খুশি ছিলেন না। আরও পণ চেয়ে প্রায়ই নিকি ও তাঁর দিদিকে মারধর করা হত। নিকির দিদি কাঞ্চনও একই পরিবারের বৌ। তাঁর দাবি, পণের ৩৬ লক্ষ টাকা না পাওয়ায় তাঁর চোখের সামনেই বোনকে জীবন্ত পুড়িয়ে মারা হয়। সেই ঘটনা নিয়ে দেশজোড়া সমালোচনার মাঝে খোদ নিকির পরিবারের বিরুদ্ধেই প্রকাশ্যে এল চাঞ্চল্যকর তথ্য।