নিমিশা প্রিয়া। —ফাইল চিত্র।
মায়ের মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দিয়েছে ইয়েমেনের আদালত। হাজার চেষ্টা করেও মৃত্যুদণ্ড রদ সম্ভব হয়নি! ইয়েমেন কর্তৃপক্ষ সাময়িক ভাবে তাঁর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর স্থগিত রেখেছেন। এ বার মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত নিমিশা প্রিয়ার হয়ে ক্ষমাপ্রার্থনা করতে ইয়েমেন পৌঁছেছে তাঁর কন্যা। বাবা টমি টমাসের সঙ্গে সে দেশে গিয়েছে ওই কিশোরী মিশেল।
কেরলের নার্স নিমিশা বেশ কয়েক বছর ধরে ইয়েমেনের কারাগারে বন্দি। তাঁর মেয়ে তাঁকে এক দশকের বেশি সময় ধরে দেখেনি। প্রতি দিন মায়ের জন্য মনখারাপ করে। কিন্তু উপায় নেই। সে কেরলে, আর তাঁর মা নিমিশা ইয়েমেনের জেলে বন্দি। খুনের মামলায় তাঁকে মৃত্যুদণ্ডও শুনিয়েছে সে দেশের আদালত। মাকে ফেরাতে এ বার মিশেল ইয়েমেন কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করতে গিয়েছে। কান্নাভেজা গলায় তার আবেদন, ‘‘আমি আমার মাকে খুব ভালবাসি। দয়া করে, আমাকে আমার মাকে বাড়ি ফিরিয়ে নিয়ে যেতে সাহায্য করুন। আমার তাঁকে খুব দেখতে ইচ্ছা করে। আমি তোমাকে খুব মিস্ করছি।’’ নিমিশার স্বামীর আবেদন, ‘‘দয়া করে আমার স্ত্রীকে বাঁচান।’’
কেরলের পালক্কাড়ের বাসিন্দা নিমিশা নার্সের কাজ নিয়ে ২০০৮ সালে ইয়েমেনে গিয়েছিলেন। পরে ২০১৭ সালে এক ব্যবসায়িক সঙ্গীকে খুনের অভিযোগ ওঠে তাঁর বিরুদ্ধে। ওই ঘটনায় ২০১৮ সালে দোষী সাব্যস্ত হন নিমিশা। তাঁর ফাঁসির নির্দেশ দেয় ইয়েমেনের আদালত। সেই থেকে তাঁর ফাঁসি আটকানোর জন্য সব রকম চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন নিমিশার পরিবারের সদস্যেরা। ভারত সরকারের সাহায্য চান তাঁরা। ইয়েমেনের সুপ্রিম কোর্টেও সাজা মকুবের আবেদন জানানো হয়। কিন্তু তা খারিজ হয়ে যায়।
নিমিশার ফাঁসির আদেশ কার্যকর হওয়া আটকাতে ভারতীয় সুপ্রিম কোর্টেরও দ্বারস্থ হয় তাঁর পরিবার। কেন্দ্রীয় সরকার যাতে বিষয়টিতে কোনও ভাবে হস্তক্ষেপ করে, সেই আর্জি জানান তাঁরা। তবে কেন্দ্রের তরফে জানিয়ে দেওয়া হয়, ইয়েমেনে বন্দি তরুণীর মৃত্যুদণ্ড ঠেকাতে আর বিশেষ কিছু করার নেই ভারত সরকারের।
উল্লেখ্য, ইয়েমেনে যাওয়ার পরে স্বামী টমি এবং মেয়ের সঙ্গেই থাকছিলেন নিমিশা। পরে ২০১৪ সালে তাঁর স্বামী এবং ১১ বছরের কন্যা ভারতে ফিরে এলেও নিমিশা ইয়েমেনেই থেকে যান। তাঁর ইচ্ছা ছিল, নিজের ক্লিনিক খুলবেন। ওই বছরই ইয়েমেনি নাগরিক তালাল আব্দো মাহদির সঙ্গে যোগাযোগ হয় তাঁর। মাহদি তাঁকে নতুন ক্লিনিক খুলতে সাহায্য করবেন বলে আশ্বাস দেন। কারণ, আইন অনুযায়ী, ইয়েমেনে নতুন ব্যবসা শুরু করতে গেলে দেশীয় অংশীদারের দরকার ছিল নিমিশার। সেইমতো ২০১৫ সালে দু’জন মিলে নতুন ক্লিনিক খোলেন। এর পর থেকেই শুরু হয় দুই অংশীদারের মতবিরোধ।
অভিযোগ, নিমিশার টাকা এবং পাসপোর্ট মাহদি কেড়ে নিয়েছিলেন। মারধর করে নাকি নিমিশাকে মাদকসেবনেও বাধ্য করেছিলেন মাহদি। আইনি কাগজপত্রে নিমিশাকে স্ত্রী হিসাবে পরিচয় দিয়ে প্রশাসনিক সাহায্য পাওয়ার পথও প্রায় বন্ধ করে দিয়েছিলেন। পুলিশের দ্বারস্থ হয়েও লাভ হয়নি। বাধ্য হয়ে ২০১৭ সালের ২৫ জুলাই মাহদিকে ঘুমের ইঞ্জেকশন দেন ওই নার্স। নিমিশার দাবি, মাহদিকে ঘুম পাড়িয়ে নিজের পাসপোর্ট পুনরুদ্ধার করাই ছিল তাঁর উদ্দেশ্য। কিন্তু ওভারডোজ়ের কারণে মৃত্যু হয় মাহদির। এর পর হানান নামে এক সহকর্মীর সঙ্গে মিলে মাহদির দেহ টুকরো টুকরো করে কেটে জলের ট্যাঙ্কে ফেলে দেন ওই নার্স। ওই মাসেই ইয়েমেন ছেড়ে পালানোর সময় ধরা পড়ে যান নিমিশা। সেই থেকে ইয়েমেনের জেলেই বন্দি রয়েছেন ভারতীয় যুবতী।