‘ভারতই এগিয়ে’, নির্মলার অঙ্কে উঠছে প্রশ্ন

অর্থনীতিবিদদের যুক্তি, আমেরিকা বা চিনের অর্থনীতির বহর ভারতের তুলনায় অনেক বেশি। আমেরিকার অর্থনীতির বহর ভারতের দ্বিগুণ। চিনের আড়াই গুণেরও বেশি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৫ অগস্ট ২০১৯ ০৩:০৮
Share:

নির্মলা সীতারামন। ছবি: এএফপি।

ভাঙবেন, কিন্তু মচকাবেন না! অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন কাল অর্থনীতির ঝিমিয়ে পড়া হাল ফেরাতে শিল্পমহলের সুরাহায় একগুচ্ছ পদক্ষেপ ঘোষণা করেছেন। একই সঙ্গে দাবি করেছেন, দেশের অর্থনীতির হাল এখনও আমেরিকা, চিনের মতো দেশগুলির তুলনায় ভাল। প্রশ্ন উঠেছে, সত্যিই কি ভারতের অর্থনীতির হাল আমেরিকা-চিনের তুলনায় ভাল?

Advertisement

অর্থনীতিবিদদের যুক্তি, আমেরিকা বা চিনের অর্থনীতির বহর ভারতের তুলনায় অনেক বেশি। আমেরিকার অর্থনীতির বহর ভারতের দ্বিগুণ। চিনের আড়াই গুণেরও বেশি। তাই আমেরিকা-চিনের আর্থিক বৃদ্ধির সঙ্গে এ দেশের তুলনা চলে না। তাদের সামান্য পরিমাণ বৃদ্ধিই অঙ্কের হিসেবে ভারতের অনেকখানি আর্থিক বৃদ্ধির তুলনায় বেশি হতে পারে।

নির্মলা কাল এই দাবিও করেছেন, শুধু ভারতে নয়, মন্দার লক্ষণ দেখা দিয়েছে উন্নত দেশগুলিতেও। বস্তুত আন্তর্জাতিক বাজারের অর্থনীতির ছবি বেশ দুর্বল। কংগ্রেসের মতে, অর্থমন্ত্রী একই সুরে দু’রকম কথা বলছেন। একবার তিনি বলছেন, দেশের অর্থনীতির হার সবথেকে ভাল। আবার বলছেন, অন্য দেশের মতো এ দেশেও মন্দা দেখা দিয়েছে। কংগ্রেস নেতা রণদীপ সুরজেওয়ালা বলেন, ‘‘বাস্তব হল, দেশ মন্দার সঙ্গে লড়াই করছে। দ্বিতীয় মোদী সরকার প্রথম বাজেটেরই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করছে। এ দিকে জিডিপি-র দোদুল্যমান দশা।’’

Advertisement

মোদী জমানার শুরুতে জিডিপি মাপার হিসেব বদলে দেওয়ার পরেই দেশের আর্থিক বৃদ্ধির হার এক লাফে বেড়ে যায়। মোদী সরকার বড়াই করেছিল, আর্থিক বৃদ্ধির হারে ভারত বিশ্বসেরা। নির্মলা বস্তুত সেই সুরেই আটকে রয়েছেন। অর্থনীতিবিদ প্রসেনজিৎ বসুর যুক্তি, আর্থিক বৃদ্ধির হার দিয়ে সবটা বোঝা যায় না। খুব ছোট দেশের বৃদ্ধির হার অনেক বেশি হয়। যেমন, ২০১৩ থেকে ২০১৭, এই পাঁচ বছরের বৃদ্ধির গড় হার অনুযায়ী, গোটা বিশ্বে আর্থিক বৃদ্ধির হারে এক নম্বরে ছিল দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরের ছোট্ট দেশ নাউরু। যা কিনা বিশ্বের তৃতীয় ক্ষুদ্রতম দেশ। এর পরে ইথিওপিয়া,
আইভরি কোস্ট, তুর্কমেনিস্তান, উজবেকিস্তান, লাও, মায়ানমার। এই দেশগুলির অর্থনীতি কি নবম ও দশমে থাকা ভারত ও চিনের চেয়ে ভাল?

নির্মলা ক্রয়ক্ষমতার সঙ্গে তুলনা
করে ভারত ও অন্যান্য উন্নত দেশের জিডিপি-র হিসেব দিয়েছেন। তার সঙ্গে
বৃদ্ধির হার তুলনা করে দেখিয়েছেন, আমেরিকা-চিনের তুলনায় ভারত অনেক এগিয়ে। বাস্তব হল, অর্থমন্ত্রীর হিসেব ধরলেই, ২০১৮-তে ভারতের অর্থনীতির বহর ছিল ১০.৫ লক্ষ কোটি ডলার। চিনের বহর তার আড়াই গুণের বেশি, ২৫.২ লক্ষ কোটি ডলার। আমেরিকার ২০ লক্ষ কোটি ডলার। এটা তাই স্পষ্ট, আমেরিকা-চিনের সঙ্গে ভারতের আর্থিক বৃদ্ধির তুলনাই চলে না। তা ছাড়া শুধু জিডিপি-র হিসেবেই ২০১৭ থেকে ২০১৮-য় ভারত গোটা বিশ্বে ছয় থেকে সাত নম্বরে নেমে গিয়েছে। চলতি বছরে জানুয়ারি থেকে মার্চে বৃদ্ধির হার ছিল মাত্র ৫.৮ শতাংশ। পাঁচ বছরে সর্বনিম্ন।

প্রসেনজিতের বক্তব্য, জিডিপি-র আয়তন দিয়ে আম জনতার কী লাভ? দেখতে হবে মাথা পিছু আয় কত! আইএমএফ-এর ২০১৮-র তথ্য বলছে, মাথা পিছু আয়ে ভারত রয়েছে ১৮৭টি দেশের মধ্যে ১১৯ নম্বরে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন