উচ্চবর্ণের নেতা চেয়ে রাহুলকে চাপ নীতীশের

উচ্চবর্ণের বিরুদ্ধে লড়াই করে রাজনীতিতে যাঁদের উত্থান, ভোটের অঙ্কে এখন তাঁরাই উচ্চবর্ণের নেতা চেয়ে দরবার করছেন! আর এতেই চমকাচ্ছেন অনেকে। বিহারে মহাজোট হলেও জাতপাতের সমীকরণে এখনও মস্ত ফাঁক! বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার কুর্মি নেতা। সমাজের অতিশয় অনগ্রসর শ্রেণির রাজনীতিই তাঁর বড় পুঁজি। সঙ্গী লালুপ্রসাদ বরাবর যাদব ও মুসলিম ভোটের ওপরেই ভরসা করেছেন।

Advertisement

শঙ্খদীপ দাস

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৪ জুন ২০১৫ ০৩:৩১
Share:

উচ্চবর্ণের বিরুদ্ধে লড়াই করে রাজনীতিতে যাঁদের উত্থান, ভোটের অঙ্কে এখন তাঁরাই উচ্চবর্ণের নেতা চেয়ে দরবার করছেন! আর এতেই চমকাচ্ছেন অনেকে।

Advertisement

বিহারে মহাজোট হলেও জাতপাতের সমীকরণে এখনও মস্ত ফাঁক! বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার কুর্মি নেতা। সমাজের অতিশয় অনগ্রসর শ্রেণির রাজনীতিই তাঁর বড় পুঁজি। সঙ্গী লালুপ্রসাদ বরাবর যাদব ও মুসলিম ভোটের ওপরেই ভরসা করেছেন। কিন্তু প্রধান প্রতিপক্ষ যখন বিজেপি, তখন মহাজোটে উচ্চবর্ণের প্রতিনিধিত্ব কোথায়? এই অবস্থায় জোটের দুই শীর্ষ নেতার চোখ পড়েছে কংগ্রেসের দিকে! কংগ্রেস শীর্ষ সূত্রে খবর, বিহারে দলের সভাপতি পদে উচ্চবর্ণের কোনও নেতাকে যাতে দ্রুত বসানো হয়, সে জন্য সনিয়া-রাহুলকে পরামর্শ দিয়েছেন লালু-নীতীশ। বছর দুয়েক আগে তরুণ দলিত নেতা অশোক চৌধুরিকে বিহারের প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি পদে নিয়োগ করেছিলেন রাহুল। কিন্তু বিহারের রাজনীতিতে প্রায় ‘প্রভাবহীন’ এই নেতাকে সরিয়ে উচ্চবর্ণের কাউকে ওই পদে বসানোর জন্য রাহুলের ওপর চাপ বাড়াচ্ছিলেন বিহার কংগ্রেসের নেতারা। লোকসভা ভোটের সময় থেকেই সেই দাবি ছিল। এমনকী বিহার থেকে দলের সংখ্যালঘু নেতা তথা ওয়ার্কিং কমিটির সদস্য শাকিল আহমেদও লিখিত নোট পাঠিয়েছেন, সনিয়া-রাহুলের কাছে। যদিও তাতে কান দেননি কংগ্রেস সহ-সভাপতি। কিন্তু এ বার লালু-নীতীশের মতো শরিক নেতাদের থেকেও চাপ আসায় পরিস্থিতি বদলাতে পারে বলে মনে করছেন অনেকে। লালু-নীতীশদের আশঙ্কা, অন্যথায় উচ্চবর্ণের ভোট বিজেপির দিকে ঢলে যেতে পারে।

বিজেপিকে ঠেকাতে বিহারে মহাজোট গড়া নিয়ে বিস্তর টানাপড়েনের পরে অবশেষে গত রবিবার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেন লালু-নীতীশ। পরের দিন লালু এও বলেন, সাম্প্রদায়িকতার কেউটে মারতে সরকারে বিষপান করতেও প্রস্তুত তিনি! অর্থাৎ, বিজেপিকে ঠেকাতে জনতা রাজনীতিতে তাঁর অনুজ নীতীশ কুমারের নেতৃত্বও মানতে রাজি লালু! রাজনীতিকদের মতে, এই মহাজোট গড়ার মূলে রয়েছে অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার রাজনীতি। কিন্তু জোটে জাতের সমীকরণ ষোল আনা পূর্ণ না হলে বিহারের গদিতে অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখা কঠিন বুঝে রাহুলের সঙ্গে বৈঠক করে বিহারে কংগ্রেসের মুখ বদলানোর প্রস্তাব নীতীশই আগে পাড়েন।

Advertisement

তবে মূল প্রশ্ন হল, রাহুল কি এই দাবি মানবেন? কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির এক শীর্ষ নেতা আজ বলেন, ‘‘উচ্চবর্ণের নেতাকে বসানোর সেই সম্ভাবনা এখন বারো আনা।’’ ওই নেতার ব্যাখা, ‘‘এটা ঠিকই, বিহার নিয়ে আগে রাহুলের রোমান্টিসিজমের অন্ত ছিল না! কিন্তু বোধহয় সেটা বদলাচ্ছে।’’ গত বিধানসভা ভোটের আগে মেহবুব আলি কাইজার নামে এক সংখ্যালঘু নেতাকে বিহারের প্রদেশ সভাপতি করেন রাহুল। তার পর একলা চলার দাওয়াই দেন। কিন্ত সেই পরীক্ষায় ডাহা ফেল করলেও অবস্থান বদলাননি রাহুল। কাইজারকে সরিয়ে অশোক চৌধুরিকে সভাপতি করেন তিনি। কাইজারের মতোই বিহার রাজনীতিতে এই তরুণ নেতার কণামাত্র প্রায় নেই। মজার বিষয় হল, গত লোকসভা ভোটে কাইজার আবার রাতারাতি দল বদলে রামবিলাস পাসোয়ানের লোকজনশক্তি পার্টি থেকে সংসদে নির্বাচিত হয়েছেন! তবে কংগ্রেসেরই অনেকে মনে করছেন, রাহুল এখন কিছুটা বাস্তবমুখী হয়েছেন। বিশেষ করে ভোটের আগে বিহারের রাজনৈতিক পরিস্থিতি সরেজমিনে খতিয়ে দেখার জন্য প্রবীণ কংগ্রেস নেতা গুলাম নবি আজাদকে দায়িত্ব দেওয়ার মধ্যে সেই ইঙ্গিত রয়েছে বলেই তাঁদের মত। সূত্রের খবর, বিহার সফরের পর আজাদও উচ্চবর্ণের কোনও নেতাকে দলের মুখ করার পক্ষে রায় দিয়েছেন। এমনকী কংগ্রেস সভানেত্রীকে দেওয়া রিপোর্টে আজাদ এও বলেন, অতীতে ব্রাহ্মণ ও উচ্চবর্ণের নেতাদের দাপটের কারণেই বিহারে ক্ষমতায় ছিল কংগ্রেস। জনার্দন মিশ্র, ভোলা পাসোয়ান শাস্ত্রী, কেদার পাণ্ডের সমতুল উচ্চবর্ণের নেতা কংগ্রেস তৈরি করতে পারেনি বলেই অবক্ষয় রয়েছে। আর সেই স্থানটিই দখল করেছে বিজেপি।

তবে নেতৃত্ব পরিবর্তনে রাহুলের ধন্ধ কোথায়? কংগ্রেসের ওই নেতার কথায়, ‘‘ রাহুল দলিতদের ক্ষমতায়ন ও তাঁদের কেন্দ্র করে রাজনীতি নিয়ে সক্রিয়। তাই ভোটের মুখে প্রদেশ সভাপতি পদ থেকে একজন দলিত নেতাকে সরানোয় ভুল বার্তা যাবে কিনা, তাও ভাবছেন।’’ তাই এ-ও হতে পারে, সভাপতি পদে বদল না করলেও অখিলেশ সিংহ বা নিখিল কুমারের মতো উচ্চবর্ণের কাউকে প্রচার কমিটির নেতা করতে পারেন রাহুল। তা ছাড়া প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রেও উচ্চবর্ণের প্রতিনিধিদের অগ্রাধিকার দেবে দল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন