Delhi Violence

সিএএ-এনআরসি উঠল না বৈঠকে, আলাদা কথাও হল না অমিত-মমতার

দিল্লির পরিস্থিতি বা রাজ্যের আইন-শৃঙ্খলা নিয়ে এই বৈঠকে আলোচনা হয়নি বলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানান।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ১৮:৪৮
Share:

নবীন পট্টনায়কের বাড়িতে মধ্যাহ্নভোজে। —নিজস্ব চিত্র।

মুখোমুখি হলেন তাঁরা। পূর্বাঞ্চলীয় পরিষদের বৈঠকে কথাও হল। কিন্তু কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সঙ্গে আলাদা করে কোনও বৈঠক হল না পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। ওডিশার মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়কের বাড়িতে মধ্যাহ্নভোজের আসরও প্রায় নীরবেই মিটে গিয়েছে বলে খবর। সিএএ, এনআরসি বা এনপিআর নিয়েও কোনও কথা এই বৈঠকে হয়নি বলে মমতা জানিয়েছেন।

Advertisement

ইস্টার্ন জোনাল কাউন্সিল বা পূর্বাঞ্চলীয় পরিষদের বৈঠক এ বার ভুবনেশ্বরে নির্ধারিত ছিল। বৈঠকে যোগ দিতে ২৫ ফেব্রুয়ারি-ই ওড়িশা পৌঁছে গিয়েছিলেন মমতা। পুরী গিয়ে জগন্নাথ মন্দিরে পুজোও দিয়েছিলেন এর ফাঁকে। পুজো দিয়ে বেরিয়ে জানিয়েছিলেন, শান্তির জন্য প্রার্থনা করেছেন। শুক্রবার বৈঠক সেরে বেরিয়েও জানালেন যে, দিল্লির পরিস্থিতি নিয়ে তিনি উদ্বিগ্ন। দেশের রাজধানীতে যে হিংসা গত কয়েক দিনে দেখা গিয়েছে, তা যাতে দেশের অন্য কোথাও প্রভাব না ফেলে, সে দিকে সকলের নজর রাখা উচিত বলে ভুবনেশ্বরে এ দিন মন্তব্য করেছেন মমতা।

অমিত শাহের পৌরোহিত্যে হওয়া বৈঠকে এ দিন যাঁরা আমন্ত্রিত ছিলেন, তাঁদের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল চেয়ারপার্সন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, বিহারের মুখ্যমন্ত্রী তথা জেডিইউ সভাপতি নীতীশ কুমার এবং ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী তথা বিজেডি সুপ্রিমো নবীন পট্টনায়কের গুরুত্ব জাতীয় রাজনীতিতেও যথেষ্টই। ওড়িশার রাজনীতি ছেড়ে দিল্লির সমীকরণ নিয়ে নবীন খুব একটা মাথা ঘামাতে যান না ঠিকই, কিন্তু লোকসভা ও রাজ্যসভায় তাঁর দলের সাংসদ সংখ্যা কম নয়। ফলে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিল পাশ করানোর সময়ে নবীনের গুরুত্ব বেড়ে যায়। আর মমতা এবং নীতীশ নিজেদের রাজ্য সামলানোর পাশাপাশি জাতীয় রাজনীতির গতিপ্রকৃতি নির্ধারণেও বরাবর সক্রিয় ভূমিকা নেন। সিএএ, এনপিআর, এনআরসি ইস্যুতে গোটা দেশের রাজনীতি যখন উত্তাল, তখন এত জন আঞ্চলিক মহারথীর সঙ্গে অমিত শাহের বৈঠক কোন পথে এগোয়, সে দিকে প্রায় গোটা দেশেরই নজর ছিল। কিন্তু সিএএ, এনপিআর, এনআরসি নিয়ে পূর্বাঞ্চলীয় পরিষদের বৈঠকে এ দিন কোনও কথাই হয়নি।

Advertisement

আরও পড়ুন: ‘আমাদের রাজধর্ম শেখাবেন না’, সনিয়াকে তোপ রবিশঙ্করের​

যে অঞ্চলের রাজ্যগুলিকে নিয়ে বৈঠক, মূলত সেই অঞ্চলের উন্নয়ন এবং বিভিন্ন আন্তঃরাজ্য ইস্যু নিয়ে আলোচনার জন্যই এই বৈঠকগুলি হয়ে থাকে। সুতরাং এই বৈঠকে সিএএ, এনপিআর বা এনআরসি নিয়ে আলোচনা হওয়ার কথা ছিল না। তবে বৈঠক সেরে বেরিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ইঙ্গিত দেন যে, কেউ যদি ওই বিষয়গুলি তুলতেন, তা হলে তিনি নিশ্চয়ই নিজের মত আবার জানিয়ে আসতেন। সিএএ-এনআরসির প্রসঙ্গ এ দিনের বৈঠকে কেউই তোলেননি বলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানান।

বৈঠক থেকে বেরিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘দিল্লির ঘটনা দুঃখজনক। সেখানে অবিলম্বে শান্তি ফিরুক। ক্ষতিগ্রস্তদের সাহায্য করতে হবে। এক পুলিশ কনস্টেবলের মৃত্যু হয়েছে। অনেক সাধারণ মানুষও মারা গিয়েছেন। সকলকে সাহায্য করতে হবে।’’ তবে, দিল্লির পরিস্থিতি বা রাজ্যের আইন-শৃঙ্খলা নিয়ে এই বৈঠকে আলোচনা হয়নি বলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানান। কয়লার উপরে সেস বসানো নিয়ে যে সমস্যা রয়েছে, আলোচনা করে তার সমাধান খুঁজে বার করার সিদ্ধান্ত হয়েছে বলেও তিনি জানিয়েছেন। এ ছাড়া রেল, অসামরিক পরিবহণ-সহ যে সব বিষয়ের সঙ্গে সব রাজ্যেরই স্বার্থ জড়িত, সেই সব বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে, জানিয়েছেন মমতা।

সংসদে সিএএ পাশ করানোর সময়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল বিলটির বিরোধিতা করেছিল। বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ-তে থাকা নীতীশের দল জেডিইউ এবং কোনও জোটে না থাকা নবীনের দল বিজেডি সমর্থন করেছিল বিলটিকে। কিন্তু পরে নীতীশ কুমার জানিয়েছেন, তাঁর রাজ্যে এনআরসি হতে দেবেন না। এনপিআর করতে হলেও নির্দিষ্ট শর্ত মানতে হবে বলে নীতীশ জানিয়েছেন। নবীনের দলও নীতীশের পথে হেঁটেই ওড়িশায় এনআরসি কার্যকরী করার বিরুদ্ধেই মত দিয়েছে। আর মমতার দল তো বার বার জানাচ্ছে যে, সিএএ, এনআরসি, এনপিআর— কোনওটাই কার্যকরী করা হবে না বাংলায়।এই পরিস্থিতির কারণেই রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা মনে করেছিলেন যে, পূর্বাঞ্চলীয় পরিষদের বৈঠকে বড় ইস্যু হয়ে উঠতে পারে সিএএ। কিন্তু তা হল না। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী নিজে বা পূর্বাঞ্চলের মুখ্যমন্ত্রীদের কেউ— কোনও পক্ষই সে ইস্যু তোলেননি বলে জানা গিয়েছে।

আরও পড়ুন: ‘কেন এই নির্মম দাঙ্গা তাকে মৃত্যুর জন্য বাছল?’ লিখলেন গুলজার​

এ দিনের বৈঠকের ফাঁকেই মধ্যাহ্নভোজ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তা হয়নি। মধ্যাহ্নভোজের বিরতি না নিয়ে একটানা বৈঠক চলে। তাই বৈঠক শেষে ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়কের বাড়িতেই মধ্যাহ্নভোজের ব্যবস্থা হয়। নবীনের সেই মধ্যাহ্নভোজে অমিত শাহ, নীতীশ কুমার এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তো ছিলেনই, ছিলেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তথা ওড়িশার গুরুত্বপূর্ণ বিজেপি নেতা ধর্মেন্দ্র প্রধানও। তবে নবীন পট্টনায়কের ডাইনিং টেবল খুব একটা খোলামেলা আলোচনার জায়গা হয়ে উঠতে পারেনি বলেই জানা গিয়েছে। পরিষদের বৈঠকে সরকারি ভাবে যে সব কথার আদান-প্রদান হওয়া সম্ভব নয়, খাবার টেবিলে কিছুটা ব্যক্তিগত আলাপচারিতার ভঙ্গিতে সে সব বিষয়ে কিছু কথা হতে পারে বলে অনেকে মনে করেছিলেন। কিন্তু ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রীর বাসভবনে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে এ দিন দুপুরের খাওয়া সেরেছেন যে তিন আঞ্চলিক মহারথী, তাঁরা এই মুহূর্তে ভিন্ন ভিন্ন শিবিরে তথা আলাদা আলাদা রাজনৈতিক অবস্থানে রয়েছেন। সেই কারণেই খাবার টেবিলে কোনও খোলামেলা আলোচনার অবকাশ আর তৈরি হতে পারেনি বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশের মত।

পূর্বাঞ্চলীয় পরিষদের বৈঠক শেষ হওয়ার পরে অমিত শাহের সঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একান্ত বৈঠকে বসতে পারেন বলেও শোনা গিয়েছিল। তবে অমিত-মমতার মধ্যে তেমন কোনও একান্ত বৈঠকও এ দিন হয়নি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন