পঞ্জাবের দৌড়বীর ফৌজা সিংহ। —ফাইল চিত্র।
পঞ্জাবের দৌড়বীর ফৌজা সিংহের মৃত্যুতে এক অনাবাসী ভারতীয়কে গ্রেফতার করল পুলিশ। ধৃতের নাম অমৃত সিংহ ধিলোঁ। বছর তিরিশের এই যুবক কানাডায় থাকেন। তাঁর বিরুদ্ধে গাড়িচাপা দিয়ে খুনের অভিযোগ উঠেছে। আটক করা হয়েছে গাড়িটিকেও।
সোমবার জালন্ধরের কাছে বিয়াস পিন্ড গ্রামে গাড়ি দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় দৌড়বীরের। ওই দিন দুপুর সাড়ে ৩টে নাগাদ রাস্তা পার হওয়ার সময় বেপরোয়া গতিতে ছুটে আসা একটি গাড়ি বৃদ্ধ দৌড়বীরকে ধাক্কা মারে। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাঁকে উদ্ধার করে স্থানীয় একটি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থাতেই মৃত্যু হয় তাঁর। বয়স হয়েছিল ১১৪ বছর। সেই ঘটনার দু’দিনের মধ্যে অভিযুক্ত গাড়িচালককে গ্রেফতার করল পুলিশ।
পুলিশ সূত্রে খবর, ধৃত অভিযুক্ত জালন্ধরের করতারপুরের বাসিন্দা। পরিবারের সঙ্গে কানাডায় থাকেন। দৌড়বীরের দুর্ঘটনার পর থেকেই অভিযুক্ত গাড়িচালকের খোঁজে পুলিশের বেশ কয়েকটি দল গঠন করা হয়। গাড়ির নম্বরপ্লেট, একাধিক সিসিটিভি ফুটেজ থেকে অমৃতপালকে চিহ্নিত করে পুলিশ। যে গাড়িটি ফৌজা সিংহকে ধাক্কা মেরেছিল সেটি কপূরথালার বাসিন্দা বারীন্দ্র সিংহের নামে নথিভুক্ত। বারীন্দ্রকে প্রথমে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তিনি দাবি করেন, গাড়িটি অমৃতপাল নামে এক যুবককে বিক্রি করেছিলেন। সেই সূত্র ধরেই অভিযুক্তকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এক সপ্তাহ আগেই ভারতে আসেন অমৃতপাল।
প্রসঙ্গত, ১৯১১ সালের ১ এপ্রিল পঞ্জাবের জলন্ধরে জন্মগ্রহণ করেন ফৌজা। ছোট থেকেই তাঁর পা ছিল সরু ও দুর্বল। পাঁচ বছর বয়স পর্যন্ত ঠিক করে হাঁটতেও পারতেন না। তাই বন্ধুমহলে ব্যঙ্গ করে ‘ডান্ডা’ বলে ডাকা হত তাঁকে। ৮৯ বছর বয়সে একের পর এক স্বজনের মৃত্যু তাঁর জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয়। ওই বছরই দৌড়নো শুরু করেন ফৌজা। দৌড়ন একের পর এক ম্যারাথন। ২০০০ সালে ফৌজা লন্ডনে তাঁর প্রথম ম্যারাথন ৬ ঘণ্টা ৫৪ মিনিটে শেষ করেন। এর পর একে একে নিউ ইয়র্ক, মুম্বই, হংকং, গ্লাসগোর মতো বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ম্যারাথনে অংশ নেন। ২০১১ সালে ১০০ বছর বয়সে টরন্টো ওয়াটারফ্রন্ট ম্যারাথন শেষ করে বিশ্বব্যাপী খ্যাতি অর্জন করেন তিনি। অর্জন করেন বিশ্বের সবচেয়ে বয়স্ক ‘ম্যারাথন ফিনিশার’-এর খেতাব। এক দিনে আটটি বিশ্বরেকর্ডও গড়েন তিনি। ১০১ বছর বয়স পর্যন্তও ফৌজা বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক দৌড়ে অংশগ্রহণ করেছেন। আত্মজীবনী ‘পাগড়িওয়ালা টর্নেডো’-তে সে কথা বিস্তারিত লিখেছেন তিনি।