Oil

ভোট মিটতেই তেলের দাম বৃদ্ধি

আগে গুজরাত, কর্নাটকের মতো কিছু রাজ্যে বিধানসভা ভোটের মুখে এই একই ভাবে জ্বালানির দাম বৃদ্ধি বন্ধ ছিল।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৫ মে ২০২১ ০৬:০২
Share:

—প্রতীকী ছবি।

অতীতে দেখা গিয়েছে চড়তে থাকা তেলের দর বিভিন্ন রাজ্যে ভোটের ঠিক আগে থেকে থমকে যায় কিংবা কমতে থাকে। কিন্তু ভোট মিটলেই ফের বাড়তে শুরু করে। এর ব্যতিক্রম ঘটল না এ বার পশ্চিমবঙ্গ-সহ পাঁচ জায়গায় সদ্য শেষ হওয়া বিধানসভা নির্বাচনের ক্ষেত্রেও।

Advertisement

ভোট পর্ব মেটার প্রায় সঙ্গে সঙ্গে দেশের বাজারে ফের বাড়ল পেট্রল-ডিজেলের দাম। যা গত ১ মার্চ থেকে বেশির ভাগ সময় ধরে স্থির ছিল। চার দিন কমেওছে একটু করে। কিন্তু বাড়েনি। রবিবার ভোট গণনা সাঙ্গ হওয়ার আগেই বিমান জ্বালানির দর বাড়ায় রাষ্ট্রায়ত্ত তেল সংস্থাগুলি। প্রমাদ গুনতে শুরু করে আমজনতা থেকে পরিবহণ শিল্প, কল-কারখানায় পণ্য উৎপাদনকারী সংস্থা-সহ সব মহল। আশঙ্কা মিলিয়ে মঙ্গলবার সংস্থাগুলি দেশ জুড়ে পেট্রল-ডিজেলের দামও ফের বাড়িয়েছে। কলকাতায় আইওসি-র পাম্পে লিটার পিছু পেট্রল বেড়েছে ১৪ পয়সা। বিক্রি হয়েছে ৯০.৭৬ টাকা দরে। ডিজেল ১৭ পয়সা বেড়ে দাঁড়ায় ৮৩.৭৮ টাকা।

এর আগে গুজরাত, কর্নাটকের মতো কিছু রাজ্যে বিধানসভা ভোটের মুখে এই একই ভাবে জ্বালানির দাম বৃদ্ধি বন্ধ ছিল। কিন্তু ভোট মিটতেই তা নতুন উদ্যমে বাড়তে শুরু করে। এ বারও আশঙ্কা, পশ্চিমবঙ্গ-সহ চার রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত পুদুচেরিতে ভোট মেটার পরে দর ক্রমাগত মাথা চাড়া দিতে থাকবে কি না, তা নিয়ে চিন্তিত অনেকে।

Advertisement

একেই মূল্যবৃদ্ধির হার ফের মাথা তুলছে। তার উপরে করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে জর্জরিত দেশবাসী। রেকর্ড সংক্রমণ আর মৃত্যু আটকাতে রাজ্যে রাজ্যে আংশিক বিধিনিষেধ চলছে। পূর্ণ লকডাউনের আশঙ্কাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।

ইতিমধ্যেই রুজি-রোজগারে নতুন করে ঘা পড়তে শুরু করেছে। এর মধ্যে তেলের দর বৃদ্ধি তাই উদ্বেগ বাড়াচ্ছে সাধারণ মানুষের। কারণ, চড়া জ্বালানি আরও বাড়াবে পরিবহণের খরচ। এর হাত ধরে চড়তে পারে জিনিসপত্র, খাদ্যপণ্যের দাম। এই সঙ্কটের মধ্যে যা নতুন বিপদ ডেকে আনবে সমাজের সব স্তরেই।

বিশেষজ্ঞদের দাবি, চাহিদা বৃদ্ধিতেও এর বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে। তেলের চড়া দর যে গাড়ির চাহিদা ছন্দে না-ফেরার অন্যতম কারণ, তা আগেই জানিয়েছে এই শিল্প। ডিজেলের চড়া দরে ভুগছে কল-কারখানার উৎপাদনও।

ইতিমধ্যেই দেশে সর্বকালীন রেকর্ড গড়েছে তেলের দর। কিছু জায়গায় পেট্রল লিটারে ১০০ টাকাও ছাড়িয়েছে। সম্প্রতি ট্রাক মালিকদের সংগঠন লিটারে পেট্রল ও ডিজেল ৪০ টাকা পর্যন্ত কমানো সম্ভব বলে দাবি তোলে। অথচ মার্চের শেষ থেকে গোটা ভোট পর্বের মধ্যে চার দিনে পেট্রল মাত্র ৭৩ পয়সা এবং ডিজেল ৭৪ পয়সা কমায় তেল সংস্থাগুলি। ফলাও করে বিবৃতি দিয়ে ইন্ডিয়ান অয়েল দাবি করে, এতে নাকি গাড়ির মালিক এবং পরিবহণ সংস্থাগুলি স্বস্তির শ্বাস ফেলেছে। বিস্মিত সংশ্লিষ্ট মহলের প্রশ্ন ছিল, রেকর্ড চড়া দাম কী করে কাউকে স্বস্তি দিতে পারে?

মোদী সরকার অবশ্য দেশে তেলের দাম বৃদ্ধির জন্য বিশ্ব বাজারে অশোধিত তেলের চড়া দরকেই দায়ী করেছে। দাবি করেছে, তেল রফতানিকারী দেশগুলির সংগঠন ওপেকের কাছে উৎপাদন বাড়িয়ে দাম কমানোর আর্জি জানালেও সাড়া মেলেনি। মঙ্গলবার ভারতীয় সময় রাত পর্যন্ত ব্রেন্ট ক্রুড ব্যারেল প্রতি এক ডলারের বেশি বেড়ে হয়েছে ৬৮.৬০ ডলার। যদিও এর মধ্যে তা কিছুটা কমেওছিল। কিন্তু বিরোধীদের তোপ, ২০১৪ সালে মনমোহন সরকারের জমানায় ব্রেন্ট ক্রুড যখন ১০০ ডলার ছাড়িয়েছিল তখন তো দেশে পেট্রল-ডিজেল এত চড়া ছিল না। উল্টে তারা আঙুল তুলছে জ্বালানি দু’টিতে বিপুল চড়া উৎপাদন শুল্কের দিকে। তাদের অভিযোগ, গত বছর অশোধিত তেল শূন্যের নীচে নামলেও কেন্দ্র দেশে তেলের দাম কমায়নি, বরং শুল্ক বাড়িয়ে রাজকোষ ভরেছে। খোদ সরকারি পরিসংখ্যানেও স্পষ্ট, গত অর্থবর্ষে অতিমারির আক্রমণ সত্ত্বেও কেন্দ্র যে বিপুল পরোক্ষ কর আদায় করতে পেরেছে তার প্রধান কারণ এই শুল্ক।

সংশ্লিষ্ট মহলের আর্জি, অর্থনীতিকে বাঁচাতে এ বার অন্তত ওই শুল্ক ছেঁটে তেলের দরের ফাঁস থেকে দেশকে রেহাই দেওয়ার চেষ্টা করুক সরকার। তবে প্রসঙ্গটি তারা বরাবরের মতো এড়িয়ে গেলে আখেরে ভুগবেন সাধারণ মানুষই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন