টি কাফেতে গুরবীর ও সুগ্গি। জামশেদপুরে পার্থ চক্রবর্তীর তোলা ছবি।
সানিয়া নেহওয়ালের মতো তাঁর ফোরহ্যান্ড শটেও কোর্টের উল্টোদিকে থাকা খেলোয়াড় নাকানিচোবানি খায়। লম্বা লম্বা র্যালি খেলতে তিনিও সানিয়ার মতোই পারদর্শী। তাঁর ঝুলিতেও রয়েছে অলিম্পিকের সোনার মেডেল। যা সানিয়ার এখনও পর্যন্ত নেই।
জামশেদপুরের এই বছর কুড়ির মূক ও বধির ব্যাডমিন্টন খেলোয়াড় গুরবীর কউরের নামটা অবশ্য অনেকেই জানেন না। সানিয়ার মতো তাঁকে নিয়ে চর্চাও হয়নি কোনওদিন। গুরবীর ২০১৫ সালের লস অ্যাঞ্জেলেসে অনুষ্ঠিত প্রতিবন্ধীদের ‘স্পেশাল অলিম্পিক’-এ ব্যাডমিন্টনে সিঙ্গলস ও ডবলস ইভেন্টে দুটো সোনা ও একটা ব্রোঞ্জ জিতেছেন। এখন অবশ্য তাঁর জীবন ব্যাডমিন্টনকে ঘিরে আবর্তিত হয় না। জামশেদপুরের সোনার মেয়ে এখন এই শহরেরই সার্কিট হাউস এরিয়ার এক ‘টি-কাফে’র কর্মী। হাসিখুশি গুরবীরের তাতে অবশ্য বিশেষ দুঃখ নেই। মূক ও বধির এই তরুণী ইশারায় ও হাত নেড়ে বলে দেন, ‘‘আমি ভাল আছি। নতুন কাজ এনজয় করছি।’’
গুরবীর জামশেদপুরের যে কাফেতে কাজ করছেন সেখানে রয়েছেন তাঁরই মতো পাঁচজন মূক ও বধির কর্মী। সুগ্গি মুর্মু, রুমা কুমারী, রুম্পা পাল, পূজা কুমারী ও রেশমী লাহিড়ী। এই কাফের মালিক অবিনাশ দুগ্গারের কথায়, ‘‘কাফে খোলার পরিকল্পনা নিয়ে মনে হল, এমন কয়েকজন কর্মীকে রাখি যাঁদের আমাদের সমাজে সহজে কাজ মেলে না। এই ধরনের কর্মী যখন খুঁজছি তখন প্রথমে যোগাযোগ হয় সুগ্গি মুর্মুর সঙ্গে। সুগ্গির কাছ থেকেই জানতে পারি গুরবীরের কথা। গুরবীরকে আমাদের এখানে কাজের প্রস্তাব দিই। ও রাজি হয়।’’
জামশেদপুরের বিরসানগরে গুরবীরের বাড়ি। বাবা নেই, মা একটি বেসরকরি সংস্থায় কাজ করেন। বাড়িতে রয়েছে ছোট বোন। গুরবীরের মা পরবিন্দর কউর বলেন, ‘‘আমার মেয়ে তো ব্যাডমিন্টন অন্ত প্রাণ। এত ভাল খেলে। কিন্তু সংসারের জন্য মেয়েটার কাজের খুব দরকার ছিল।’’
পরিবারকে টানতে মন দিয়ে কাজ শিখেছেন গুরবীর। এই কাফেতে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয় দুধ ছাড়া চায়ের উপর। দার্জিলিং চা বা অসম চা বাদেও রয়েছে বিভিন্ন দেশের গ্রিন টি, হোয়াইট টি, সিলভার নিডল টি। গুরবীর জানায়, আর পাঁচজনের মতোই তাঁকেও চা তৈরি করা থেকে শুরু করে পরিবেশন, সবই করতে হয়। যাঁরা চা খেতে আসেন তাদের সঙ্গে প্রথম প্রথম যোগাযোগ স্থাপন করতে অসুবিধা হতো। মাঝেমধ্যে ভুল চা পরিবেশনও করে ফেলেছেন তিনি। তা ছাড়া ইশারায় বোঝাতে গিয়ে অনেকে অধৈর্য্যও হয়ে যান। এখন মন দিয়ে কাজ করতে করতে তিনি এই সব বাধাও কাটিয়ে উঠেছেন। তবে একটাই আফশোস, এখানে যোগ দেওয়ার পর ব্যাডমিন্টন কোর্টে সময় দেওয়া কমে গিয়েছে। তা বলে র্যাকেট তুলে রাখেননি তিনি। যেদিন কাফেতে সকালে ডিউটি থাকে সেদিন বিকেলে সোজা চলে যান ব্যাডমিন্টন কোর্টে।
এই কাফের কর্মী বছর কুড়ির সুগ্গিও খেলোয়াড়। সে মূক ও বধির দৌড়ের ইভেন্টে জাতীয় চ্যাম্পিয়ন। খেলোয়াড় বন্ধুকে পেয়ে খুশি গুরবীর।