অমর্ত্য নিয়ে নীরবতাই নতুন কৌশল কেন্দ্রের

এ বার বিজেপি একটু ফাঁপরে পড়েছে। পশ্চিমবঙ্গে তারা দ্রুত গতিতে এগোতে চাইছে। সেখানে বাঙালি সমাজের বড় অংশের ‘নয়নমণি’ অমর্ত্যকে আক্রমণ করার ঝুঁকিটা অরুণ জেটলির মতো নেতারা বুঝেছেন। অতীতে রাজ্য বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষ যখন অমর্ত্যকে আক্রমণ করেছিলেন, তখন অবশ্য টিম অমিত শাহ খুশিই হয়েছিলেন।

Advertisement

জয়ন্ত ঘোষাল

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৪ জুলাই ২০১৭ ০৩:৪২
Share:

অমর্ত্য সেন।

যা হয়ে গিয়েছে, তা গিয়েছে। কিন্তু অমর্ত্য সেনকে খোলাখুলি আক্রমণের রাস্তায় আর বেশি হাঁটতে চাইছে না মোদী সরকার। আবার সেন্সর বোর্ডকে তার সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করতেও বলা হচ্ছে না।

Advertisement

বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব মনে করছেন, আগামী সোমবার থেকে সংসদ বসতে চলেছে। নতুন করে আর বিতর্ক উস্কে দেওয়া বাঞ্ছনীয় নয়। আজ সকালে অরুণ জেটলি আলাদা করে প্রধানমন্ত্রী ও বেঙ্কাইয়া নায়ডুকে বলেন, সংসদের আগে তিল থেকে তাল করা ঠিক নয়। সোমবার অমর্ত্য সেন রাষ্ট্রপতি ভবনে তাঁর বই প্রকাশ অনুষ্ঠানে যোগ দিতে আসছেন। তিনি যদি ফের সাংবাদিকদের কাছে মুখ খোলেন, তাতে সমস্যা বাড়বে। মোদী নিজেও একই মত পোষণ করছেন।

গত কাল বিজেপিরই মুখপাত্র মীনাক্ষী লেখি প্রশ্ন তুলেছিলেন, কে অমর্ত্য? তিনি কি ভারতীয় নাগরিক? সেই চড়া সুর তাই আজ শোনা যায়নি। বরং কৈলাস বিজয়বর্গীয় দাবি করলেন, ‘‘সেন্সর বোর্ড যা করেছে, নিজের মতেই করেছে।’’ কেন্দ্রীয় তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী বেঙ্কাইয়া নায়ডুও কোনও মন্তব্য করতে চাননি। তাঁরও মতে, সেন্সর বোর্ড একটি স্বশাসিত সংস্থা। সেখানে সরকারের প্রত্যক্ষ ভূমিকা নেই।

Advertisement

অর্থাৎ সেন্সর বোর্ডের স্বশাসনের যুক্তি দেখিয়ে এক দিকে বিষয়টা থেকে সরকার নিজেকে বিচ্ছিন্ন রাখল, সেই সঙ্গে সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করার প্রশ্নটাও এড়াল। অমর্ত্যকে নিয়ে সুমন ঘোষের তথ্যচিত্রে গরু-হিন্দুত্বের মতো চারটি শব্দ মিউট করতে বলেছে বোর্ড। বোর্ড-প্রধান পহলাজ নিহলানি আজ শুধু বললেন যে, ‘‘এটি (সেন্সর করা) আমাদের কাজ। আপত্তি থাকলে পরিচালক-প্রযোজক ট্রাইবুনাল বা পরামর্শদাতা কমিটিতে আবেদন করতে পারেন।’’

আরও পড়ুন:চিন নিয়ে বিপাকে, তাই সর্বদল

ঘটনা হল, অমর্ত্যকে নিয়ে মোদী-অমিত শাহের সমস্যা আজকের নয়। বাজপেয়ী ভারতরত্ন দিয়েছিলেন ঠিকই। কিন্তু গুজরাত দাঙ্গা নিয়ে অমর্ত্য সমালোচনার ঝড় তুলেছিলেন। নোবেল পাওয়ার পর তিনি ভারতে ধর্মনিরপেক্ষতার বিপদ নিয়ে যে বক্তৃতা দেন, তা বিশ্বজুড়ে আলোচনার বিষয়বস্তু হয়ে ওঠে। মোদী জমানায় তাই নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর পদে অমর্ত্যর মেয়াদ বাড়ানো হয়নি।

কিন্তু এ বার বিজেপি একটু ফাঁপরে পড়েছে। পশ্চিমবঙ্গে তারা দ্রুত গতিতে এগোতে চাইছে। সেখানে বাঙালি সমাজের বড় অংশের ‘নয়নমণি’ অমর্ত্যকে আক্রমণ করার ঝুঁকিটা অরুণ জেটলির মতো নেতারা বুঝেছেন। অতীতে রাজ্য বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষ যখন অমর্ত্যকে আক্রমণ করেছিলেন, তখন অবশ্য টিম অমিত শাহ খুশিই হয়েছিলেন। তখন ‘মেকি ধর্মনিরপেক্ষতা’র মুখ হিসেবে অমর্ত্যকে চিহ্নিত করা হয়েছিল। ভাবা হয়েছিল, তাতে মেরুকরণ হবে বেশি। কিন্তু হিন্দি বলয়ে প্রতিক্রিয়া যাই হোক, বাংলায় যে এটা ব্যুমেরাং হতে পারে, তা ক্রমশ বিজেপির কাছে স্পষ্ট হচ্ছে। জাতীয় স্তরেও সামাজিক অসহিষ্ণুতা বড় বিতর্কের বিষয় হয়ে উঠছে। এ অবস্থায় এখন ‘উত্তরে থাকো মৌন’ই কৌশল বিজেপির।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন