কংগ্রেসের চিন্তা রেখে রইল নোটা

ঘর সামলাতে বেশির ভাগ বিধায়ককে কর্নাটকে নিয়ে গিয়েও শান্তিতে নেই কংগ্রেস। তাদের আশঙ্কা, ‘নোটা’ থাকার ফলে বিজেপির ইশারায় কেউ কেউ তাতে ভোট দিতে পারেন। সে ক্ষেত্রে অনিশ্চিত হয়ে পড়বে আহমেদের জয়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৪ অগস্ট ২০১৭ ০৪:০১
Share:

রাজ্যসভার ভোটে ‘নোটা’ নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে ধাক্কা খেল কংগ্রেস। আর তাকে পুঁজি করেই কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গাঁধীর রাজনৈতিক সচিব আহমেদ পটেলকে হারানোর জন্য নতুন করে ঘুঁটি সাজানো শুরু করল বিজেপি।

Advertisement

গুজরাতে এ বার রাজ্যসভার তিনটি আসনে ভোট হচ্ছে। অঙ্কের হিসেবে বিজেপির দু’টি এবং কংগ্রেসের একটি আসন পাওয়ার কথা। বিজেপির দুই মূল প্রার্থী হলেন দলের সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ এবং কেন্দ্রীয় মন্ত্রী স্মৃতি ইরানি। আর কংগ্রেসের প্রার্থী আহমেদ পটেল। কিন্তু কংগ্রেসের দল ভাঙিয়ে পটেলের যাত্রা ভঙ্গ করতে উঠেপড়ে লেগেছে বিজেপি। বলবন্তসিন রাজপুতকে তৃতীয় প্রার্থী হিসেবে দাঁড় করিয়েছে তারা। আর ভোটের মুখে দল ছেড়েছেন ৬ কংগ্রেস বিধায়ক।

ঘর সামলাতে বেশির ভাগ বিধায়ককে কর্নাটকে নিয়ে গিয়েও শান্তিতে নেই কংগ্রেস। তাদের আশঙ্কা, ‘নোটা’ থাকার ফলে বিজেপির ইশারায় কেউ কেউ তাতে ভোট দিতে পারেন। সে ক্ষেত্রে অনিশ্চিত হয়ে পড়বে আহমেদের জয়।

Advertisement

আরও পড়ুন: নীতীশ-রাজে শুরু ‘গোরক্ষা’, সঙ্গী বিতর্ক

তাই সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিল কংগ্রেস। আর্জি ছিল, ‘নোটা’ বাতিল হোক। সেই আর্জি খারিজ করে শীর্ষ আদালত কংগ্রেসকেই ধমক দিয়ে বলেছে, নির্বাচন কমিশন ২০১৪ সালে এই নির্দেশিকা জারি করলেও এত দিন কী করছিলেন? ‘নোটা’ চালু করে সে বছর ৫ ফেব্রুয়ারি সব রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিককে কমিশন জানায়, কোনও বিধায়ক যদি তাঁর ব্যালটে ‘নোটা’র পাশাপাশি কোনও প্রার্থীকে ভোট দেন, তা হলে ‘নোটা’ই বৈধ বলে গণ্য হবে।

কংগ্রেসের আইনজীবী নেতা মণীশ তিওয়ারির বক্তব্য, ‘নোটা’ আসলে প্রত্যক্ষ নির্বাচনের জন্য। রাজ্যসভার মতো পরোক্ষ নির্বাচনের জন্য নয়। রাজ্যসভার ভোটে ‘নোটা’ চান না কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অরুণ জেটলিও। এই সব যুক্তি তর্ক আগামী মাসে শুনবে সুপ্রিম কোর্ট। কিন্তু তার আগে গুজরাতের ভোট নিয়ে কোনও নির্দেশিকা তারা জারি করেনি।

সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের পরে নতুন করে অঙ্ক কষা শুরু করেছে বিজেপি। গুজরাত বিধানসভায় আসন সংখ্যা ১৮২। ছয় কংগ্রেস বিধায়ক পদত্যাগের পরে ভোট দেবেন ১৭৬ জন। তার মধ্যে বিজেপির ১২১ জন, কংগ্রেসের ৫১ জন, এনসিপি-র ২, জেডিইউ-এর ১ ও নির্দল ১ জন।

হিসেব বলছে, জিততে হলে ৪৫ জন বিধায়কের প্রথম পছন্দের ভোট চাই আহমেদের। (১৭৬টি ভোট ÷ প্রার্থী সংখ্যা (৪) + ১ = ৪৫) ফলে তাঁর দুশ্চিন্তা থাকার কথা নয়। কিন্তু বিজেপির এক শীর্ষ নেতার দাবি, ‘নোটা’ হিসেব উল্টে দিতে পারে।

আগে রাজ্যসভার ভোট হতো গোপন ব্যালটে। কিন্তু অটলবিহারী বাজপেয়ীর আমলে নিয়ম হয়, দলের এজেন্টকে ব্যালট দেখাতে হবে। এখন বিজেপি নেতাদের মতে, কংগ্রেসের শরিক দল এনসিপি-র দুই বিধায়ক ‘নোটা’য় ভোট দিতেই পারেন। সে ক্ষেত্রে তাঁদের শাস্তির মুখে পড়তে হবে না। কারণ, প্রার্থী তাঁদের দলের নয়।

আর কংগ্রেসের কোনও বিধায়ক যদি ‘নোটা’য় ভোট দেন, তা হলে দল তাঁর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতেই পারে। কিন্তু বিধায়ক পদ খারিজের বিষয়টি স্পিকারের উপরে নির্ভর করে। আর ক’মাসের মধ্যেই গুজরাতে বিধানসভা ভোট। ফলে ওই বিধায়কদের উপরেও আঁচ পড়বে না।

গত মাসের ১৭ তারিখ রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে দলের প্রার্থী মীরা কুমারের বদলে বিজেপির রামনাথ কোবিন্দকে ভোট দিয়েছেন গুজরাতের ১১ জন কংগ্রেস বিধায়ক। ফলে উদ্বিগ্ন কংগ্রেস। ঘর সামলাতে কালই গাঁধীনগর যাচ্ছেন রাহুল গাঁধী। পাশাপাশি বিজেপির ফাঁদে পা না দেওয়ার জন্য বিধায়কদের সতর্ক করছে তারা। দলের নেতা অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি বলেন, ‘‘কংগ্রেস বিধায়কদের বোঝা উচিত, বিধানসভা নির্বাচনের সঙ্গে তাঁদের শাস্তির মেয়াদ ফুরিয়ে যাবে না। দলত্যাগ বিরোধী আইনে ছ’বছরের জন্য ভোটে লড়াও বন্ধ হতে পারে। অতএব সাবধান!’’

যদিও রাজ্যসভার ভোটে হুইপ জারি করা যায় কিনা, বা দলত্যাগ বিরোধী আইন প্রযোজ্য হয় কিনা, তা নিয়ে মতভেদ রয়েছে। লোকসভার প্রাক্তন স্পিকার সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়ের মতে, ‘নোটা’য় ছাড় দেওয়ার অর্থই হলো এটা স্পষ্ট করে দেওয়া যে, দলত্যাগ বিরোধী আইন প্রযোজ্য হবে না। তাঁর বক্তব্য, রাজ্যসভার ভোটে দল আসলে তার বিধায়কদের উপরে হুইপ জারি করে না। দলের পছন্দ জানিয়ে দেয় মাত্র।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন