উত্তরপ্রদেশে আত্মহত্যা করলেন সরকারি কর্মী। এসআইআর সংক্রান্ত কাজের চাপের অভিযোগ উঠে আসছে এ ক্ষেত্রেও। ছবি: এআই সহায়তায় প্রণীত।
উত্তরপ্রদেশে ফের আত্মহত্যা করলেন এক সরকারি কর্মী। ২৮ বছর বয়সি লেখপাল (উত্তরপ্রদেশের গ্রাম স্তরের রাজস্ব আধিকারিক) সুধীর কুমারের ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয়েছে তাঁর বাড়ি থেকে। অভিযোগ, ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সংশোধনের (এসআইআর) জন্য প্রচুর কাজের চাপ আসছিল। এমনকি বিয়ের আগের আচার-অনুষ্ঠানের জন্যও ছুটি পাচ্ছিলেন না তিনি। বিয়ের আচার-অনুষ্ঠানের জন্য কাজে বেরোতে না পারায় তাঁকে নিলম্বিত করারও হুমকি দেওয়া হচ্ছিল বলে অভিযোগ। পরিবারের দাবি, সেই চাপের কারণেই আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছেন সুধীর।
সম্প্রতি পশ্চিমবঙ্গেও ‘এসআইআর-এর কাজের চাপে’ তিন বিএলও-র মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। পশ্চিমবঙ্গে বিএলও-র আত্মহত্যার অভিযোগের প্রসঙ্গে বুধবার সুপ্রিম কোর্টের শুনানি পর্বেও উঠে এসেছে। যদিও পশ্চিমবঙ্গের ঘটনাগুলির প্রসঙ্গ ইতিমধ্যে মুখ খুলেছে রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের (সিইও) দফতর। গত সোমবার সিইও দফতর থেকে জানানো হয়, কী ভাবে বিএলও-দের মৃত্যু হয়েছে, তা নিয়ে বিস্তারিত রিপোর্ট চাওয়া হয়েছে। ময়নাতদন্তের রিপোর্টও চাওয়া হয়েছে। কর্তব্যরত অবস্থায় মৃত্যু হয়েছে এই মর্মে কমিশনকে জানানো হবে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের রাজ্য গুজরাতেও একই ধরনের অভিযোগ উঠে এসেছে। এ বার এসআইআর সংক্রান্ত বিষয়ে কাজের চাপে ছুটি না পাওয়ার অভিযোগে আত্মহত্যার অভিযোগ উঠল উত্তরপ্রদেশেও।
উত্তরপ্রদেশের ফতেপুর জেলায় ঘটনাটি ঘটেছে গত মঙ্গলবার। সুধীর ফতেপুরের বিন্ডকি তেহসিলের খাজুয়া ব্লকে কর্মরত ছিলেন। পরিবারের তরফে হুমকি এবং চাপের অভিযোগ তোলা হলেও প্রাথমিক ভাবে এফআইআর রুজুর ক্ষেত্রে পুলিশ কিছুটা ঢিলেমি দেখিয়েছে বলেও অভিযোগ উঠছে। পরে উত্তরপ্রদেশ লেখপাল সংগঠনের বিক্ষোভের জেরে পদক্ষেপ করে পুলিশ। ঘটনার প্রায় ২৯ ঘণ্টা পরে বুধবার এফআইআর রুজু হয়। দুই সরকারি কর্মীর নাম যুক্ত হয়েছে এফআইআরে। তাঁদের মধ্যে এক জন উত্তরপ্রদেশের রাজস্ব দফতরের ইনস্পেক্টর পদে রয়েছেন।
কমিশনের এসআইআর সংক্রান্ত কাজের দায়িত্ব পড়েছিল সুধীরের উপরেও। তিনি উত্তরপ্রদেশের জাহানাবাদ বিধানসভা কেন্দ্রের এসআইআর সংক্রান্ত কাজে যুক্ত ছিলেন। সহকর্মীদের দাবি, ওই কাজের জন্য মারাত্মক চাপের মধ্যে ছিলেন সুধীর। একই অভিযোগ তুলেছে পরিবারও। বুধবার সুধীরের বিয়ে হওয়ার কথা ছিল। বিয়ের জন্য তিনি ছুটি পেয়েছিলেন বটে। তবে পরিবারের দাবি, বিয়ের আগের বিভিন্ন আচার-অনুষ্ঠানের জন্য তিনি কোনও ছুটি পাননি। গত সোমবার তাঁর হলদি এবং মেহন্দির অনুষ্ঠান ছিল। সেই কারণে তিনি ওই দিন কাজে যেতে পারেননি। অভিযোগ, পরের দিনই দুই সরকারি কর্মী সুধীরের বাড়িতে গিয়ে সকলের সামনে তাঁকে অপমান করেন। তাঁকে নিলম্বিত করা, এমনকি বরখাস্তের হুমকিও দেওয়া হয়েছিল বলে অভিযোগ পরিবারের।
পরিবারের অভিযোগ, ওই সরকারি কর্মীরা বাড়ি থেকে চলে যাওয়ার পরেই সুধীর আত্মহত্যা করেন। ঘরের ভিতর গলায় ফাঁস দেওয়া অবস্থায় উদ্ধার হয় সুধীরের ঝুলন্ত দেহ। ফতেপুরের অতিরিক্ত জেলাশাসক অবনীশ ত্রিপাঠী জানান, গত রবিবারই ছুটির আবেদন করেছিলেন সুধীর। তাঁকে দশ দিনের ছুটি দেওয়া হয়েছে। যদিও সুধীর নিজে মাত্র তিন দিনের ছুটি চেয়েছিলেন বলেই জানান অতিরিক্ত জেলাশাসক। অভিযুক্ত রাজস্ব আধিকারিকও সুধীরের বাড়িতে এসআইআর ফর্ম সংগ্রহ করতে গিয়েছিলেন বলেই জানান তিনি। পুলিশ ইতিমধ্যে সুধীরের দেহ ময়নাতদন্তের জন্য পাঠিয়েছে। তবে প্রতিবেদনটি প্রকাশের সময় পর্যন্ত অভিযুক্তদের গ্রেফতারির কোনও তথ্য মেলেনি।
এই নিয়ে উত্তরপ্রদেশে দ্বিতীয় বার এসআইআর সংক্রান্ত কাজে সরকারি কর্মীর আত্মহত্যার অভিযোগ উঠে এল। গত মঙ্গলবারই পেশায় স্কুলশিক্ষক বিপিন যাদব বিষপান করে আত্মহত্যা করেন উত্তরপ্রদেশের গোন্ডা জেলায়। তিনি কমিশন নিযুক্ত বুথস্তরের আধিকারিক হিসাবে কর্মরত ছিলেন। এ ক্ষেত্রেও কাজের চাপের কারণেই আত্মহত্যার অভিযোগ উঠে এসেছে।